ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘আইক্যান’ চায় পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০০, ১৫ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আইক্যান’ চায় পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব

ডা. মশিউর রহমান খসরু

ছাইফুল ইসলাম মাছুম: ‘প্রকৃতির সমস্ত নিয়ম আজ উল্টে গেল, মানুষ আজ থেকে পৃথিবী ধ্বংসের বিধাতা হলো’ পরমাণু বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করে এমন মন্তব্য করেছিলেন বিজ্ঞানী ইসিডর রাবি। পরমাণু বোমা আবিষ্কারের পর ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই প্রথম পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ  ঘটানো হয়। এর তেজস্ক্রিয়তার কুণ্ডলী মুহূর্তের মধ্যে ৩০ হাজার ফুট উচ্চতা ছাড়িয়ে যায়। এর আলো ছড়িয়ে পড়ে প্রায় ২০০ মাইল।

পরের মাসেই ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমায় মানুষ হত্যাযজ্ঞে ব্যবহার করা হয় পরমাণু বোমা। এতে মুহূর্তে প্রাণ হারায় প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ। পরবর্তীকালে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৬৬ হাজার। পারমাণবিক বোমাটির সৌখিন নাম ছিল ‘ক্ষুদে বালক’। অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক উইলফ্রেন্ড গ্রাহাম বুর্চেট হিরোশিমা পরিদর্শন করে লিখেছিলেন: ‘ত্রিশতম দিনে হিরোশিমা: যারা পালাতে পেরেছিল তারা মরতে শুরু করেছেন। চিকিৎসকরা কাজ করতে করতে মারা যাচ্ছেন। বিষাক্ত গ্যাসের ভয়। মুখোশ পরে আছেন সকলেই।’

পৃথিবীকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করতে কাজ করছে আইক্যান বা আইসিএএন (International Campaign to Abolish Nuclear Weapons)। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ১০ বছর আগে জন্ম নেয়া সম্পূর্ণ অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান ‘আইক্যান’ বিশ্বে পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। এ বছর ২০১৭ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে সংস্থাটি। আইসিএএন হচ্ছে পারমাণবিক অস্ত্র বিলোপে প্রচারণাকারী সংগঠনগুলোর একটি জোট। ১০১টি দেশে এই জোট কাজ করে। বাংলাদেশের দুটি সংগঠন- ফিজিসিয়ানস ফর সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি ও সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (বাংলাদেশ অধ্যয়ন কেন্দ্র) আইক্যানের সদস্য।

আইক্যান-এর শুরুর গল্পটা জানিয়েছেন ফিজিসিয়ানস ফর সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মশিউর রহমান খসরু। তিনি জানান, পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়তে ১৯৮০ সালে প্রথমে কাজ শুরু করেন চিকিৎসকদের সংগঠন ‘আইপিপিএনডাব্লিউ’। তখন পরমাণু শক্তিধর রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল। দুই দেশের শান্তিকামী ও প্রগতিশীল চিকিৎসকরা পরমাণু যুদ্ধ ঠেকাতে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে প্রচার অভিযান শুরু করেন। ‘আইপিপিএনডাব্লিউ’র কার্যক্রম রয়েছে বাংলাশেসহ পৃথিবীর ৬১টি দেশে। আইপিপিএনডাব্লিউ’র একমাত্র বাংলাদেশের অংশিদারী সংগঠন ফিজিসিয়ানস ফর সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি বাংলাদেশ।

২০০৬ সালের ডিসেম্বরে আইপিপিএনডাব্লিউ’র হেলথ হেলসিংকি ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে চিকিৎসকরা ভাবলেন, পরমাণুর ভয়াবহতা শুধু চিকিৎসকরা জানলে হবে না, সব পেশার মানুষকে জানাতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই আইক্যান’র প্রজেক্ট হাতে নেন তারা। ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে আইক্যান। আইক্যানের সাথে যুক্ত রয়েছে ১০১টি দেশের ৪৬৪টি সংগঠন। আইক্যান আত্মপ্রকাশের পর থেকে জাতিসংঘে পরমাণু বিষয়ক বিভিন্ন নীতিমালাসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের পেছনে সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

পরমাণু অস্ত্র তৈরি বিশ্বের জন্য কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ এবং দুর্ঘটনাবশত এর ব্যবহার পরিবেশ ও মানব সমাজের জন্য কতোটা বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে তা বোঝাতে কাজ করছে সংস্থাটি। বলা হচ্ছে, পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণে অসামান্য ভূমিকা রাখার জন্যই এ বছর নোবেল কমিটি আইক্যানকে শান্তিতে পুরস্কার দেয়ার জন্য নির্বাচিত করে। বাংলাদেশে আইক্যানের অংশিদারী সংগঠন ফিজিসিয়ানস ফর সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি পরমাণু অস্ত্রের ভয়াবহতা জানাতে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, জনসম্মুখে, সেমিনার, মানববন্ধন, আলোকচিত্র প্রদর্শন, তথ্যচিত্র প্রদর্শন করে আসছে।
 
ডা. মশিউর রহমান খসরু রাইজিংবিডিকে বলেন, বাংলাদেশ যদিও পরমাণু শক্তিধর নয়। কিন্তু আমাদের পার্শ্ববর্তী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্রধর। যদি কোনোভাবে এ অঞ্চলে পরমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটে তাহলে আমরা সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। আমরা পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব চাই।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ নভেম্বর ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়