ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নির্বিচারে পাহাড় কাটা

আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৮, ১৮ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

আবারও পাহাড়-দেয়াল ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এবার ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রামের দুই জায়গায় পাহাড় ও দেয়াল ধসে এক পরিবারের তিনজনসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত রোববার রাত ২টার দিকে আকবর শাহ থানাধীন পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকায় পাহাড় ধসে ঘরের ওপর পড়ে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়। এর আগে রাত ১টার দিকে পাঁচলাইশ থানাধীন রহমান নগর এলাকায় দেয়াল ধসে নিহত হন আরেকজন।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, টানা বৃষ্টিতে ফিরোজ শাহ কলোনির এক নম্বর ঝিল এলাকার বরিশাল ঘোনায় পাহাড়ের মাটি দুটি কাঁচা ঘরের ওপর ধসে পড়লে তিনজন মাটিচাপা পড়েন। ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন জানান, বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে পাহাড়ের ঢালে থাকা একটি গাছের শিকড় উপড়ে গেলে সেটি সীমানা দেয়ালের ওপর পড়ে। তখন ওই দেয়াল ও গাছ পাশের ঘর ভঙে ভেতরে গিয়ে ঢোকে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রায়ই পাহাড় ধসে মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে সাধারণতঃ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ইত্যাদি কারণে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। কিন্তু এর বাইরে নির্বিচারে পাহাড়-টিলা কাটা, অবাধে গাছ কর্তনের কারণে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশে ভূমিধসের ইতিহাস, কারণ ও ফলাফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পাহাড়ে ভূমিধসের জন্য প্রধানত মানুষই দায়ী এবং এতে এই মানুষই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ভূমিদস্যুরা নির্বিচারে ও অবৈধভাবে পাহাড় কাটছে। তারা প্রকাশ্যে পাহাড় কেটে মাটি লুট করছে, জমি দখল করে গড়ে উঠছে অবৈধ বসতি। ফলে একটু বেশি বৃষ্টি হলেই ধসে পড়ছে পাহাড়ের মাটি। নিষেধ থাকা সত্ত্বেও পাহাড়ের পাদদেশে ঘর-বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছে লোকজন যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু তা সত্ত্বেও থেমে নেই এই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সরকারি-বেসরকারি মালিকানাধীন ৩০টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে কয়েক লাখ লোক বসবাস করছেন। গত বছর দুই দিনের ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িসহ এই অঞ্চলে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পাহাড় ধসে সড়ক অবকাঠামো, বসতবাড়িসহ সহায় সম্পদের ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকার।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী অবৈধভাবে পাহাড় কাটার জন্য তিন বছর কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তা ছাড়া পাহাড় কাটা রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ওই আইনের ৪(খ) ধারাবলে, ‘পরিবেশ অবক্ষয় ও দূষণের কারণ হতে পারে এরূপ সম্ভাব্য দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অনুরূপ দুর্ঘটনার প্রতিকারমূলক কার্যক্রম নির্ধারণ ও এ-সংক্রান্ত যেকোনো নির্দেশ দিতে পারেন।’ তবে বাস্তবতা হলো, ওই নির্দেশনার চর্চা যেমন নেই, তেমনি পাহাড় কাটার জন্য কারো শাস্তি কিংবা সাজা ভোগের ঘটনাও বিরল।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড় নিধন ঠেকানো না গেলে পরিবেশে মহাবির্পযয় নেমে আসবে। বাড়বে পাহাড় ধসে প্রাণ ও সম্পদহানীর ঘটনা। পাহাড় ধসের কারণে প্রতি বছর প্রাণহানি, রাস্তাঘাট ও সম্পদের যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, এর প্রতিকার ও প্রশমনে কার্য়কর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পাহাড়ি ভূমি ব্যবস্থাপনার অনিয়মের কারণে পার্বত্য এলাকায় মানুষ যত্রতত্র বসতি গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছে এবং জীবন ও জীবিকার তাগিদে তারা পাহাড়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এর ফলস্বরূপ ভূমিধস প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে।

তাই ভূমিধস প্রতিরোধের জন্য সবার আগে সরকারকে পাহাড়ি ভূমি ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে।  ঝড়-বৃষ্টিতে ভূমিধসে আর কোনো মানুষের মৃত্যুর আগে অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ভূমিধস প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রকৃতি ও পরিবেশের সুরক্ষা এবং মানবিক বিপর্যয় রোধে প্রভাবশালীদের কবল থেকে পাহাড় রক্ষায় প্রশাসনের জোর পদক্ষেপের পাশাপাশি আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ অক্টোবর ২০১৮/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়