ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

আইসিপিসির ঢাকা পর্বের শীর্ষ তিন প্রোগ্রামিং যোদ্ধা

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৬, ২৬ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আইসিপিসির ঢাকা পর্বের শীর্ষ তিন প্রোগ্রামিং যোদ্ধা

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : তিন সদস্যের টিম। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২৫টি টিমের সবাই ব্যাস্ত প্রোগ্রামিংয়ের সমস্যা সমাধানে। ১১টি সমস্যা, সমাধান করতে হবে ৫ ঘণ্টায়। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের একটি সমস্যা সমাধান হচ্ছে, আয়োজকেরা লাগিয়ে দিচ্ছে ওই টিমের মনিটরের পাশে একটি করে বেলুন। এমন দৃশ্যপট ছিল বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এসিএম আন্তজার্তিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা (আইসিপিসি) ২০১৬-এর ঢাকা পর্বে।

 

‘খুবই মজার প্রতিযোগিতা এটা। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের এক একটা সমস্যা সমাধানে কি যে আনন্দ। যারা সমস্যা সমাধান করে তারাই বুঝতে পারবে।’ কথাগুলো বলছিলেন এসিএম-আইসিপিসি ২০১৬-এর ঢাকা পর্বের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) টিম ‘বুয়েট রায়ো’ এর অন্যতম সদস্য হারুন-উর-রশিদ।

 

১৮-১৯ নভেম্বর রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে দুই দিনব্যাপী এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছরের এসিএম-আইসিপিসি ২০১৬-এর ঢাকা পর্বের ১২৪টি দলকে টপকে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) টিম ‘বুয়েট রায়ো’।

 

বুয়েট রায়ো-এর তিন সদস্য হলেন ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এম এম হারুন-উর-রশিদ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তন্ময় মল্লিক ও একই বিভাগের একই বর্ষের নাজমুর রশীদ নুর। তিন সদস্যের এ প্রোগ্রামার টিমের কোচ ছিলেন ড. মো. কায়কোবাদ।

 

এসিএম-আইসিপিসি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে অন্তত সি প্রোগ্রামিং ভাষায় ওপর ভালো দখল থাকতে হয়। তিনজন প্রোগ্রামারের দল নিয়ে এসিএম-আইসিপিসি ঢাকা পর্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি দলকে দেওয়া হয় একটি কম্পিউটার, এক সেট প্রোগ্রামিং সমস্যা। বেঁধে দেওয়া ৫ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম সময়ে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সমস্যার সমাধান দিয়েই বিজয়ী হতে হয় প্রতিযোগীদের। সমান সংখ্যক সমস্যার সমাধান করলে, যারা কম সময়ে সমস্যাগুলোর সমাধান করেছে এবং পেনাল্টি কম (সমাধান ভুল হলে ২০ মিনিট পেনাল্টি হয়), তারা র্যাং ক লিস্টে ওপরে থাকে।

 

সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি সমস্যা এমন দেওয়া হয় যেন সেটি সব দলই সমাধান করতে পারে। আরেকটি সমস্যা এতটাই জটিল হয় যেন কোনো দলই সহজে সমাধান করতে না পারে। এক্ষেত্রে প্রতিযোগীদের সমাধানকৃত প্রোগ্রামটি যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রান করে সঠিক আউটপুট দেয়, তবেই সেটি সমাধান হয়েছে বলে গ্রহণ করা হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে সেই দলকে সেটি জানিয়ে দেওয়া হয়। আবার সমাধান সঠিক না হলেও সেটি দ্রুত জানিয়ে দেওয়া হয় যাতে তারা আবার চেষ্টা করতে পারে। এসব কাজ করা হয় একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে।

 

বুয়েট রায়ো টিমের এক একজন ছিলেন কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের এক এক বিষয়ে পারদর্শী। হারুন জিওমেট্রি ও ম্যাথে পারদর্শী। তন্ময় পারদর্শী ছিলেন ডাইনামিক প্রোগ্রামিং, স্ট্রিংয়ে। নাজমুর রশীদ নূর ছিলেন গ্রাফ থিওরি, ডাটা স্ট্রাকচারে পারদর্শী। এই তিন প্রোগ্রামিং যোদ্ধার সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় ঢাকা পর্বে শীর্ষস্থান পেয়েছে বুয়েট রায়ো টিম। ১১টি সমস্যার মধ্যে ১০টির সমাধান দিয়েছে তারা।

 

এসিএম-আইসিপিসি ২০১৬ এর ঢাকা পর্বে চ্যাম্পিয়ান হওয়া প্রসঙ্গে বুয়েট রায়ো এর সদস্য নাজমুর রশীদ নূর বলেন, ‘শুরু থেকে এ প্রতিযোগিতার আঞ্চলিক পর্বে বুয়েট নৈপুণ্য দেখিয়ে এলেও গত দুই বছর ধরে চ্যাম্পিয়ান হতে পারেনি। তাই প্রথম থেকেই আমাদের টার্গেট ছিল চ্যাম্পিয়ান হওয়ার। গত এক বছরের প্রচেষ্টা সফল হওয়ায় আমরা খুবই অনন্দিত। এখন চেষ্টা থাকবে আন্তজার্তিক পর্বে ভালো কিছু করার।’

 

বুয়েট রায়ো এর আরেক সদস্য তন্ময় মল্লিক। তিনি জানান, ঢাকা নটরডেম কলেজে পড়ার সময় তার প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি। কলেজে পড়াকালীন কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে ২০১৩ সালে তাইওয়ান যান। তিনি বলেন, ‘বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর আইসিপিসিতে সাফল্য পাওয়ার চেষ্টা করতাম। এবার সাফল্য পেলাম।’

 

এসিএম-আইসিপিসি ২০১৬-এর ঢাকা পর্বে বুয়েটের আরেক দল ‘বুয়েট ওমনিট্রিক্স’ প্রথম রানারআপ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘ডিইউ সেন্সর্ড’ দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছে। দুটি দলই নয়টি করে সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছে।

 

আগামী বছরের ২০-২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডাকোটায় অনুষ্ঠেয় এসিএম-আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনাল-২০১৭  চূড়ান্ত পর্বে (ওয়ার্ল্ড ফাইনালস) অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে শীর্ষ তিন দলের। প্রতিযোগিতার নিয়ম অনুযায়ী, আঞ্চলিক পর্বের চ্যাম্পিয়ন দলের বাইরে শীর্ষ দুটি দল আইসিপিসির চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেবে।

 

এসিএম-আইসিপিসি ২০১৫ ঢাকা পর্বের তথ্য:

আইসিপিসি ২০১৫-এর ঢাকা পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জেইউ—অর্ডার অব এন-কিউব’ টিম। প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে যথাক্রমে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাস্ট ডাউন টু দ্য ওয়্যার’ এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এনএসইউ বাগলাভার্স’ টিম ।

 

এসিএম-আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনাল-২০১৬ পর্বের তথ্য:

থাইল্যান্ডের ফুকেটে এসিএম আইসিপিসির ২০১৬ চূড়ান্ত পর্বে ১১টি সমস্যার সমাধান করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল চীনের সাংহাই জিয়াও তং বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এ দল দুটি যথাক্রমে ১১ ও ১০টি সমাধান দিতে পেরেছে। বাংলাদেশের দলগুলোর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৬টি সমাধান দিয়ে ৫০তম স্থানে ছিলেন। দুটি করে সমস্যার সমাধান করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ছিলেন ১১১ ও ১১৩তম স্থানে। পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় মোট ১৩টি প্রোগ্রামিং সমস্যা ছিল। প্রতিযোগিতায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ১২৮টি দল চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিল।

 

এসিএম-আইসিপিসি ও বাংলাদেশ:

১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় এসিএম-আইসিপিসি প্রতিযোগিতা। ১৯৯৮ সাল থেকে এসিএম-আইসিপিসি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দুবার সেরা ২০টি দলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছে। দুবারই এই গৌরব এসেছে বুয়েট থেকে। প্রথমবার ১৯৯৯ সালে বিশ্বের এক হাজার দলকে পেছনে ফেলে ১১তম স্থান অর্জন করে। এরপর ২০১৪ সালে ১২ হাজার দলের মধ্যে ১৯তম স্থান অধিকার করে। আইসিপিসিতে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশী মেধাবী শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।  গত দশ বছরে এসিএম আইসিপিসিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারী ৫০ জনের মতো গুগল, ফেসবুক ও মাইক্রোসফটে যোগ দিয়েছে। সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে গবেষণায় স্কলারশিপ দেওয়ার ক্ষেত্রেও অংশগ্রহণকারীদের এগিয়ে রেখেছে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ নভেম্বর ২০১৬/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়