‘আগুন জীবন বিষিয়ে তুলেছে’
হাসপাতালে ফিরোজের স্বজনরা, ইনসেটে ফিরোজ মিয়া
মো. ফিরোজ মিয়া (৪২)। প্রতিদিনের মতো কেরানীগঞ্জের প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে কারখানাটিতে ভয়াবহ আগুন লাগে। দগ্ধ হন ফিরোজ।
আগুন তাকে শুধু মৃত্যুর কোলেই ঠেলে দেয়নি, পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার-অনিশ্চয়তা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির করুণ এ দশায় দিশেহারা তার স্ত্রী-স্বজনরা।
শনিবার হাসপাতালে ফিরোজের স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়।
তারা জানান, দুই বছর আগে ফিরোজ ওই কারখানায় টেকনিশিয়ান হিসেবে যোগদান করেন। বেতন আট হাজার টাকা। তাও আবার নিয়মিত ছিল না। কারখানার পাশে কেরানীগঞ্জর চুনকুটিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। বাসা ভাড়া ছিল চার হাজার টাকা। বাকি টাকা দিয়ে স্ত্রী ও সাড়ে ৩ বছরের কন্যা শিশুকে নিয়ে কোনোমতে সংসার চলতো।
শেখ হাসিনা প্লাস্টিক ও সার্জারি ইউনিটের বারান্দায় কান্না জড়িত কণ্ঠে ফিরোজের স্ত্রী নাজমা বেগম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমার কাছে একটি ফোন আসে। তিনি আগুনে পুড়ে গেছেন। হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ কথা শোনার পরই আমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। তিনি যে বেতন পেতেন তা দিয়ে অভাবের সংসার চলতো। এখন মেয়ের খরচ, বাসা ভাড়া কোথা থেকে দেব? কোথায় থাকব? টাকার অভাবে অসুস্থ স্বামীকে কিছু কিনেও দিতে পারছি ন। মেয়েটা বড় হচ্ছে। টাকার অভাবে লেখাপড়া পর্যন্ত আমি করাতে পারব না। সে তো কোনো টাকা পয়সা বা সম্পদ করতে পারেনি। আগুন আমার জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়কারী সামন্ত লাল সেন বলেন ‘আগুনে দগ্ধ হয়ে যে ১০ জন লাইফ সার্পোটে আছেন তাদের মধ্যে ফিরোজ মিয়াও আছেন। তার হাত, পা, মুখসহ শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
ফিরোজ মিয়ার বাবার নাম আলফাজউদ্দিন। দুই ভাই এক বোনের মধ্য তিনি সবার ছোট। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে তিনি প্রথমে বংশালের একটি টিনের দোকানে কাজ শুরু করেন। তবে বেতন কম হওয়ায় তিনি ওই কাজ ছেড়ে কারখানায় যোগ দেন।
গত ১১ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ায় প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ আগুন লাগে। এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৪ জন শ্রমিক মারা গেছেন। এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন অনেকে।
ঢাকা/মাকসুদ/ইভা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন