ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আজ হেমন্ত দিন

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আজ হেমন্ত দিন

‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে, বলো কোথায় তোমার দেশ, তোমার নেই কি চলার শেষ.. ’ মুহূর্তে মনে দোলা দিয়ে যাওয়া এই গান কখনো কি যায় ভোলা!

এমন অনেক গান আমাদের জন্য রেখে গেছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। আজ হেমন্ত দিন। আজ হেমন্তকে স্মরণ করার দিন। ১৯৮৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জীবনাবসান ঘটে এই জনপ্রিয় শিল্পীর।

তার সব গানই যেন চিরায়ত। ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’, ‘এই মেঘলা দিনে একলা’, ‘এই রাত তোমার আমার’, ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’, `আঁধারেরও আছে ভাষা`, `ও আকাশ সোনা সোনা`, `মুছে যাওয়া দিনগুলো`, `আজ দুজনার দুটি পথ`, ‘তুমি এলে অনেক দিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো’, ‘কেন দূরে থাকো শুধু আড়াল রাখো’, ‘আমার জীবনের এত খুশি এত হাসি’, ‘বসে আছি পথ চেয়ে’, ‘আমি দূর হতে তোমারে দেখেছি’, ‘ও আকাশ প্রদীপ জ্বেলো না’, ‘পৃথিবীর গান আকাশ কি মনে রাখে’, ‘আজ রাতে ঘুমিয়ে পড়ো না তুমি’, ‘যাবার আগে কিছু বলে গেলে না’, ‘আমি ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম’, ‘আয় খুকু আয়’, ‘সব কথা বলা হলো’, ‘তারপর, তার আর পর নেই’, ‘আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা’, ‘বনতল ফুলে ফুলে ঢাকা’, ‘মেঘ কালো আকাশ কালো’, ‘কত দিন পরে এলে একটু বসো’, ‘এক গোছা রজনীগন্ধা হাতে দিয়ে বললাম’, ‘শোনো বন্ধু শোনো’, ‘রানার ছুটেছে’, ‘যে বাঁশি ভেঙে গেছে’, ‘এই বালুকা বেলায় আমি লিখেছিনু’, ‘কোনো এক গাঁয়ের বধুর’, ‘আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে’, ‘আমিও পথের মতো হারিয়ে যাবো’, ‘তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমার’, ‘তোমাদের আসরে আজ’, ‘তোমার ভুবনে মাগো এত পাপ’, ‘বন্ধু তোমার পথের সাথীকে’, ‘বড় আশা করে এসেছি গো কাছে ডেকে লও’, ‘মনে রবে কিনা রবে আমারে’, ‘প্রাঙ্গণে মোর শিরিষ শাখায়’, ‘মনে কি দ্বিধা রেখে গেলে’, ‘শুধু তোমার বাণী’, ‘আমার রাত ফুরালো’, ‘সুরের আকাশে’, ‘কোনো এক গায়ের বধূর কাহিনী’, ‘পাল্কি চলরে’-  এমন মন দুলিয়ে দেয়া অসংখ্য গান তার কন্ঠ থেকে নিঃসৃত।

‘আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে, আমি যদি আর নাই আসি হেথা ফিরে’ মৃত্যুর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ঢাকায় এসে এই গানটি শুনিয়েছিলেন হেমন্ত।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে গান করেছিলেন হেমন্ত। তিনি বিভিন্ন ক্যাম্প এবং শরণার্থী শিবিরে ঘুরে বেড়াতেন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। চ্যারিটি শো করেও এর অর্থ তুলে দিয়েছিলেন উদ্বাস্তু শিবিরের সাহায্যার্থে। তার গাওয়া ‘মা গো ভাবনা কেন, আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে’ গানটি দারুণভাবে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের।

পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে গানের ছন্দে মাতিয়ে রেখেছিলেন হেমন্ত। তার সুরের ঢেউ এসে আঘাত হানে লাগে এই বাংলায়। সেই থেকে হেমন্ত যেন এখনো বাংলার। এখনো বাংলার নদী জলে ভাসে তার সুর। অলৌকিক এক সৌন্দর্য রয়েছে গানগুলোর পরতে পরতে। এ কারণে গানগুলো শোনা হচ্ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। তার আবেদন একটুও ম্লান হয়নি। হয়ে ওঠেছে কালজয়ী। সঙ্গত কারণে বাংলা গান বললেই অনায়াসে মনের মণিকোঠায় ভেসে ওঠেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।

মৃত্যুর কিছুদিন আগে রেকর্ড করেছিলেন ‘আমার শ্মশানে কতো লোক হবে’ গানটি। তিনি বেঁচে থাকতেই রেডিওতে প্রচার হয়েছিল গানটি। এই গানটি গাওয়ার অল্প কিছুদিন পরেই হেমন্ত মারা যান। ১৯২০ সালের ১৬ জুন ভারতের পবিত্র শহর বারাণসীতে জন্ম এই অমর শিল্পীর। জনপ্রিয় গানগুলোর মাধ্যমে তিনি মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন যুগ যুগ ধরে।

 

ঢাকা/ শাহ মতিন টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়