ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ, কখন কী হলো?

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫২, ২৪ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ, কখন কী হলো?

সুখী পরিবারে হঠাৎ বিদ্রোহ। যেখানে কান পাতলেই শোনা যায় ব্যাট-বলের ঠুকঠাক শব্দ, সেখানে অস্থিরতা। যে মাঠে ক্রিকেটাররা রাত-দিন কাটিয়ে দেন, সেখানে চালাতে চান না ক্রিকেটীয় কার্যক্রম। এমনটাও সম্ভব বাংলাদেশে?

২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর এমনটা দেখতে হয়নি বাংলাদেশকে।  এবার সেই সুখী পরিবারে লাগল সেই কলঙ্ক।  দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটররা এক ছাতার নিচে আসলেন নিজেদের ১১ দফা দাবি দাওয়া নিয়ে।  পরবর্তীতে সেই দাবিতে যোগ হয় আরও নতুন দুই দফা।  মিরপুরেটানা দুদিন ধরে চলল ক্রিকেটারদের মানানোর কার্যক্রম।

বুধবার রাতে বিসিবি ও ক্রিকেটারদের মধ্যে সমাঝোতা হয়।  বিসিবি তাদের দাবি দাওয়া মেনে নেওয়ায় মাঠে ফিরতে রাজী ক্রিকেটাররা। পুরো তিনদিন ক্রিকেটার, বিসিবির কর্মকাণ্ড কাছ থেকে দেখেছে রাইজিংবিডি।  আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রাইজিংবিডির নজরে আসা বিষয়গুলো তুলে ধরা হচ্ছে এ প্রতিবেদনে।

(২১/১০/২০১৯) – সোমবার :

হুট করে সংবাদ সম্মেলন : সেদিনও বিসিবিতে চলছিল স্বাভাবিক কার্যক্রম। কর্মকর্তারা তাদের স্বাভাবিক কাজ করছেন।  গণমাধ্যমকর্মীরা ব্যস্ত প্রতিবেদন খোঁজার কাজে। হুট করে খবর আসে ক্রিকেটাররা একাডেমি মাঠে দুপুর ২টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন।  কিন্তু দুপুর ২টার পরও তাদের মিরপুর শের-ই-বাংলায় ঢোকার নামগন্ধ নেই।  দুপুর আড়াইটা নাগাদ তাদের দেখা গেল একাডেমি মাঠের পেছনের গেট দিয়ে ঢুকছেন।  একজন-দুজন নয়, প্রায় ৬০ ক্রিকেটার একসঙ্গে মাঠে প্রবেশ করেন। ’

যেভাবে তাদের এক হওয়া : জাতীয় লিগের শুরুর আগে থেকে ক্রিকেটাররা নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেন। তাদের আলোচনায় যোগ দেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাও। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবর জাতীয় দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এ আলোচনায় যোগ দেন সিপিএল খেলার সময়। নিজের অবস্থান পরিস্কার করে জানান দেশে ফিরেই বসবেন সবার সঙ্গে। সিদ্ধান্ত হয়, লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডের পর যেকোনো একদিন মিরপুরে হাজির হবেন সবাই। কিন্তু সোমবারই যে একাডেমি মাঠে ক্রিকেটাররা সংবাদ সম্মেলনে আসবেন তা জানা ছিল না অনেকেরই। হুট করে সিদ্ধান্ত হয় সেদিনই সবাই যাবেন মিরপুরে। কয়েক ঘন্টার নোটিশে প্রায় ৬০ ক্রিকেটার চলে আসেন মিরপুরের একাডেমি মাঠে। তাদের সবার প্রতিনিধি হয়ে নিজেদের দাবি-দাওয়ার কথা জানান ১০ জন।

সংবাদ সম্মেলনে ধর্মঘটের ডাক : সংবাদ সম্মেলনে ঘরোয়া ক্রিকেটে পারিশ্রমিক বাড়ানো, ক্রিকেটারদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ঘরোয়া ওয়ানডে টুর্নামেন্ট বাড়ানো, কেন্দ্রীয় চুক্তিতে খেলোয়াড় সংখ্যা বাড়ানো, পাতানো ম্যাচ বন্ধে পরিকল্পনা প্রণয়নসহ মোট ১১ দফা দাবি জানান ক্রিকেটাররা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্রিকেটীয় কোনো কার্যক্রমে অংশ নেবেন না তারা।

যে ১১ দফা দাবিতে ক্রিকেটারদের ধর্মঘট : ক্রিকেটারদের ১১ দফা দাবি গণমাধ্যমে তুলে ধরেন ১০ ক্রিকেটার।  কি ছিল সেই দাবিতে?

১. নাঈম ইসলাম: আমাদের প্রথম দাবি হচ্ছে কোয়াব (ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) বিলুপ্তি করতে হবে। বর্তমানে এর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। কোয়াব ক্রিকেটারদের প্রতিনিধি হলেও ওইভাবে কখনোই আমরা আমাদের পাশে তাদের পাইনি। আমাদের প্রথম দাবি হচ্ছে কোয়াবের প্রেসিডেন্ট (নাঈমুর রহমান দূর্জয়) এবং সেক্রেটারিকে (দেবব্রত পাল) পদত্যাগ করতে হবে। কোয়াবের কে প্রেসিডেন্ট বা কে সেক্রেটারি হবেন, তা আমরা ক্রিকেটাররা বাছাই করব।

২. মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ: গত কয়েক বছর ধরেই আপনারা জানেন প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের পরিস্থিতি কেমন। সব ক্রিকেটারই এ ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করছে- যেভাবে প্রিমিয়ার লিগ হচ্ছে। কারণ এখানে পারিশ্রমিকের একটা মানদণ্ড বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। খেলোয়াড়রা আগে বাছাই করতে পারত, কোন দলে খেলবে, পারিশ্রমিক কেমন হবে। আমাদের দাবি হলো আগের মতো যেন প্রিমিয়ার লিগটা ফিরে পাই।

৩. মুশফিকুর রহিম: আমাদের তৃতীয় দাবি বিপিএল নিয়ে। আমরা জানি, এ বছর বিপিএল অন্যরকম হচ্ছে। সেটা অবশ্যই সম্মান করি। আমাদের প্রধান দাবি হলো, আগের নিয়মের বিপিএল যেন আগামী বছর থেকে চলে আসে। আর মূল দাবি হলো, বিদেশি খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমাদের স্থানীয় খেলোয়াড়দের অনেক পার্থক্য থাকে। আগামীতে যেন সামঞ্জস্য থাকে। এটা নিশ্চিত করতে হবে আমাদের স্থানীয় ক্রিকেটাররা যেন সেই পারিশ্রমিক পায়। সবচেয়ে বড় কথা, বিশ্বে অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হয়, খেলোয়াড়রা তাদের ড্রাফট বেছে নিতে পারে, কোন গ্রেডে থাকবে। আমার মনে হয় বাংলাদেশে খেলোয়াড়দের গ্রেড নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া উচিত। এরপর যদি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি না নেয় তাহলে সেটা আলাদা ব্যাপার।

৪. সাকিব আল হাসান: আমরা সবাই মিলে মনে করেছি এটা (প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি) এক লাখ টাকা হওয়া উচিত। আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের বেতন পঞ্চাশ ভাগ বাড়াতে হবে। খেলোয়াড়দের প্র্যাকটিস ফ্যাসিলিটিজ বাড়াতে হবে, সেটা জিম, ইনডোর মাঠ- সব জায়গাতেই। ১২ মাস কোচ, ফিজিও, ট্রেনার রাখতে হবে; তারাই আসলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের একটা পরিকল্পনা দেবেন। আমরা বুঝি, এটা হয়তো আজই হবে না। তবে আগামী মৌসুম থেকে যেন হয়, প্রতিটি বিভাগে।

আমরা চাই না প্রতিটি ট্রেনিং সেশন যেন ঢাকাতেই হয়। যার যার বিভাগে যেন অনুশীলন করতে পারে। টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের ভালো করতে হলে এখানে ভালো বল দিতে হবে। এটা আমাদের অনেক বড় একটা সমস্যা। টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করতে হলে এর গুরুত্ব অনেক।

৫. সাকিব আল হাসান: প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এখানে অনেকগুলো ছোট ছোট ইস্যু আছে যেগুলো অনেক সময় বলা হয় না। এই জিনিসগুলোর উন্নতি খুব দরকার যদি আমরা ক্রিকেটের সংস্কৃতি ভালো করতে চাই। এখানে প্রথম হচ্ছে বল। আমরা যে বল দিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলি সেটা মানসম্মত হয় না। এমন বলে খেললে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আবার নতুন ধরনের বলের সাথে মানাতে কষ্ট হয়। ক্রিকেটারদের দৈনিক ভাতা ১৫০০ টাকা থেকে বাড়াতে হবে। কারণ বিসিবি যে ফিটনেস লেভেল দাবি করছে ১৫০০ টাকায় পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হয় না ক্রিকেটারদের।

ভেন্যুগুলোতে ক্রিকেটারদের ভ্রমণ খরচ ২৫০০ টাকা থেকে বাড়াতে হবে। বিভাগভিত্তিক যাতায়াতের জন্য বিমান ভ্রমণের ব্যবস্থা করতে হবে। যে হোটেলের ব্যবস্থা করা হবে সেখানে কমপক্ষে জিম এবং সুইমিং পুল থাকা বাধ্যতামূলক। আপনারা যদি দেখেন মাঠে আমরা কী বাসে চড়ে আসি বা যাই, খুবই হতাশাজনক একটা বিষয়। মাঠে আসার জন্য ক্রিকেটারদের জন্য এসি বাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. এনামুল হক জুনিয়র: জাতীয় দলের চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিশ্বব্যাপী যদি চিন্তা করেন বাংলাদেশের চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটারের সংখ্যা কম। আমাদের কাছে মনে হয় চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটারের সংখ্যা ৩০ জন করা উচিত এবং তা করতেই হবে। পাশাপাশি বেতন বাড়াতে হবে। অনেক দিন ধরেই শুনেছি ক্রিকেটারদের বেতন বাড়ানো হয় না। তাই আমাদের কাছে মনে হচ্ছে জাতীয় দলের চুক্তিতে বেতন এবং খেলোয়াড় সংখ্যা বাড়াতে হবে।

৭. তামিম ইকবাল: আমরা যে বিষয়গুলো নিয়ে আজ কথা বলছি সবকিছু ক্রিকেট নিয়ে। শুধু ক্রিকেটারদের নিয়েই নয়। আপনি গ্রাউন্ডসম্যানদের কথা চিন্তা করেন। সে কী ধরনের বেতন পায় বিসিবি থেকে তার কাজ অনুপাতে। সারাদিন মাঠে কাজ করে মাস শেষে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছে।

আরেকটা বিষয়, কোচের কথা বলব, আপনি যদি দেখেন আমরা নিজেরাই বাঙালি কোচদের প্রোমোট করতে চাই না। বিদেশি একটা কোচ যে টাকা বেতন পায় আমাদের হয়তো ২০ জন কোচ তা পায় না। এমনও সময় গেছে সম্প্রতি একটা সফরে দেশি কোচের অধীনে দল ভালো খেললেও পরবর্তী সিরিজে তাকে আর দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

আম্পায়ারিং নিয়ে একটু বলব, আম্পায়ারিং নিয়ে আমরা সবাই অভিযোগ করি। আম্পায়ারদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে হবে টাকা দিয়ে। আমরা তা দেই কি দেই না এটা আপনারা সবাই জানেন। আপনারা সবাই জানেন তাদের কী ধরনের বেতন দেওয়া হয়। ফিজিও, ট্রেনার সবার ক্ষেত্রে একই। এখন উপযুক্ত সময় বাংলাদেশিদের প্রাধান্য দেওয়ার।

৮. এনামুল হক বিজয়: আমরা দুটো চার দিনের আসর খেলি, বিসিএল এবং এনসিএল। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের ওয়ানডে ভার্সনে আমরা মাত্র একটি আসর খেলি (ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ)। আমাদের আরেকটি আসর বাড়ানো উচিত। বিপিএলের মাধ্যমে আমরা একটি টি-টোয়েন্টি লিগই খেলি। এছাড়া কোনো টি-টোয়েন্টি আসর হয় না।

আমার কাছে মনে হয় বিপিএলের আগ মুহূর্তে একটি টি-টোয়েন্টি আসর হওয়া জরুরি। যাতে আমাদের বিপিএল আরও ভালো যায়। ওয়ানডের ব্যাপারে যেটা বলব আগে আমাদের জাতীয় লিগের আগে ওয়ানডে একটি খেলা হতো। পাঁচ বছর আগেও হতো। চার দিনের ম্যাচ খেলে আমরা একটি ওয়ানডে খেলতাম। সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা চাই জাতীয় ক্রিকেট লিগের একটি ওয়ানডে আসর চালু করা হোক।

৯. নুরুল হাসান সোহান: ঘরোয়া আসরের ক্ষেত্রে আমাদের একটি সুনির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার থাকতে হবে। তাতে আমরা যেন প্রস্তুতি নিতে পারি সারা বছরের।

১০. জুনায়েদ সিদ্দিক: দশ নম্বর পয়েন্ট হচ্ছে বিপিএল-প্রিমিয়ার লিগের টাকাটা আমরা যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাই। যেমন শেষ প্রিমিয়ার লিগে আমরা যারা ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে খেলেছি, এখনো ৪০ ভাগ টাকা পাই নাই। বোর্ডে অনেকবার যাওয়া হয়েছে, কোয়াবকেও অনেকবার বলা হয়েছে। জাতীয় দলের ক্রিকেটার হিসেবে এটা আমাদের প্রাপ্য না। আমাদের দলের অনেক ক্রিকেটারই যাওয়া-আসা করে। এটা খুবই দৃষ্টিকটু। তো আশা করব, যে সময় দেওয়া থাকে সে সময়ের মধ্যে যেন পাই।

১১. ফরহাদ রেজা: ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের একটি নিয়ম বেঁধে দেওয়া আছে যে দুটির বেশি খেলতে পারব না। এখন জাতীয় দলে খেলার বাইরে যে সময়টা আমরা পাই তখন যদি আমরা ফ্রি থাকি তাহলে যেন বাইরে খেলতে যেতে পারি, তাহলে আমাদের খেলাও হবে, অনেককিছু শেখাও হবে।

দাবিগুলো পুরোনো, দাবিগুলো যৌক্তিক

নানান ইস্যুতে ক্রিকেটারদের চাপা ক্ষোভ ছিল দীর্ঘদিন ধরে। সেটারই বিস্ফোরণ ঘটলো এবার। যে ১১ দাবী নিয়ে ক্রিকেটাররা কথা বলেছেন প্রায় সবকটি পুরোনো ইস্যু। বিপিএল, জাতীয় লিগের ম্যাচ ফি বাড়ানো, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো, জাতীয় দলের কেন্দ্রীয় চু্ক্তি ও বেতন বাড়ানো, কোয়াবের কমিটি ভেঙে দেওয়া; এগুলো নিয়ে ক্রিকেটাররা বিভিন্ন সময় বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কখনো ব্যক্তিগতভাবে, কখনো সিনিয়ররা গিয়ে বসেছেন। আবার কখনো চা-চক্রেও আলোচনা করেছেন। কিন্তু বিসিবির শীর্ষ কর্তারা গুরুত্ব দেননি কখনোই!

সাকিব যা বলেছিলেন : ‘এখানে আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে কথা হচ্ছে। আমাদের প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি, তৃতীয় শ্রেণির ক্রিকেট কেমন, এটা আমরা সবাই জানি। বিভিন্ন সময় পত্রিকায় এসেছে। আমাদের ক্রিকেট মানটা আসলে কোথায় আছে? ম্যাচে যাওয়ার আগে অনেক সময় জানা যায় যে কোন দল জিতবে বা কোন দল হারবে। এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। এটা ঠিক করা খুবই জরুরি।’

‘একজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারের অনেক বিষয় থাকে ঘরোয়া ক্রিকেটে। ধরেন ভালো একজন খেলোয়াড় সে ভালো বলে আউট হয়ে যেতে পারে। কিন্তু দুটি বা তিনটি ম্যাচে যদি সে বাজে সিদ্ধান্তের কারণে আউট হয়ে যায়, তাহলে তার ক্যারিয়ার ওখানেই শেষ হয়ে যায়। আমাদের পাইপলাইন ঠিক করা খুব জরুরি।’

‘আমরা সবাই চাই, ক্রিকেটের উন্নতি হোক। এখানে যারা আছে সবাই দুই, তিন, চার বছর ধরে খেলছে। কেউ বা ১০ বছর খেলছে। আগামী দিনে যারা খেলতে আসবে তাদের জন্য ভালো একটি পরিবেশ রেখে যেতে চাই।’

বিদ্রোহ মনে করছে না বিসিবি : ক্রিকেটারদের ধর্মঘটকে বিদ্রোহ বলতে নারাজ বিসিবি। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী তাৎক্ষণিক একাডেমির সামনে গণমাধ্যমে বলেন, ‘এটা ঠিক বিদ্রোহ নয়। খেলোয়াড়রা বোর্ডেরই অংশ। খেলোয়াড়রা বিভিন্ন সময়ে তো বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আসে। আমাদের চেষ্টা থাকে সেগুলো পূরণ করার। আজ বিষয়টা আমাদের নজরে এসেছে। আমরা বোর্ড পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’

তাঁদের নিয়েও কথা বললেন তামিমরা : ক্রিকেটারদের আন্দোলন শুধু তাঁদেরকে নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি।  নাঈম, ফরহাদ রেজা, তামিম, সাকিবরা কথা বলেন স্থানীয় কোচ, গ্রাউন্ডসম্যান ও আম্পায়ারদের নিয়েও।  এর আগে তাদের নিয়ে কথা বলেনি কেউ।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ক্রিকেট : বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের খবর দ্রুত ছড়িয়ে যায় সারাবিশ্বে।  আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিষয়টি ফলাও করে প্রচার করা হয়। রয়টার্স শিরোনাম করে, বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা ধর্মঘট ডেকেছে, ঝুঁকিতে ভারত সফর।  যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল শিরোনাম করে, ভারত সফর নিয়ে শঙ্কা, ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।  আল জাজিরা লিখেছে, বেতনাদি ও অন্যান্য চাওয়া নিয়ে ধর্মঘটে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, বাংলাদেশের ক্রিকেটরার ধর্মঘট ডেকেছে, ভারত সফর প্রশ্নবিদ্ধ।

বিসিবির দৌড়ঝাঁপ : ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের খবর ছড়িয়ে যাওয়ার পর দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন বিসিবির পরিচালকরা।  বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জরুরী বেঠক ডাকেন তার ব্যক্তিগত অফিস বেক্সিমকোতে।  রাত পর্যন্ত চলে সেই বৈঠক। এরপর বিসিবি সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে যান গণভবনে।

আড়ালে মাশরাফি নাকি ভিন্ন কিছু?

ক্রিকেটাররা যে ধর্মঘট ডেকেছিলেন সে সম্পর্কে কিছুই জানতেন না বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।  ক্রিকেটাররা নিজেরাই মাশরাফিকে না জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়।  মাশরাফি নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানায়,‘অনেকেই প্রশ্ন করছেন যে, দেশের ক্রিকেটের এমন একটি দিনে আমি কেন উপস্থিত ছিলাম না। আমার মনে হয়, প্রশ্নটি আমাকে না করে, ওদেরকে করাই শ্রেয়। এই উদ্যোগ সম্পর্কে আমি একদমই অবগত ছিলাম না। নিশ্চয়ই বেশ কিছু দিন ধরেই এটি নিয়ে ওদের আলোচনা ছিল, প্রক্রিয়া চলছিল। কিন্তু এ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। সংবাদ সম্মেলন দেখে আমি ওদের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। ক্রিকেটারদের নানা দাবির সঙ্গে আমি আগেও একাত্ম ছিলাম, এখনও আছি। আজকের পদক্ষেপ সম্পর্কে আগে থেকে জানতে পারলে অবশ্যই আমি থাকতাম।’

প্রধানমন্ত্রীর ডাকে মাশরাফি গণভবনে : ক্রিকেটাররা যেদিন আন্দোলনের ডাক দেন সেদিন রাতেই গণভবনে ডাক পরে মাশরাফি বিন মুর্তজার। রাতে গণভবনে গিয়ে ক্রিকেটারদের অবস্থান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে ব্রিফ করেন মাশরাফি।  সংকটে প্রধানমন্ত্রী মাশরাফিকে ব্যবস্থা নিতে বলেন।

২২/১০/২০১৯ (মঙ্গলবার) :

বিসিবিতে বোর্ড পরিচালকদের জরুরী বৈঠক : মঙ্গলবার দুপুরে ক্রিকেট বোর্ডে জরুরী বৈঠকে বসেন বোর্ড পরিচালকরা।  ঢাকাস্থ বোর্ড পরিচালকরা সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন।  সভায় ক্রিকেটারদের দাবি দাওয়াগুলো মেনে নিতে নৈতিক সিদ্ধান্ত নেন বোর্ড সভাপতি।  তবে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেটারদের সমালোচনা করেন নাজমুল হাসান পাপন।

দেশের ক্রিকেটের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র : হুট করে ১১ দফা দাবি তুলে ক্রিকেটারদের ডাকা ধর্মঘটের পেছনে ষড়যন্ত্র দেখছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।  তার দাবি,‘ওরা ক্রিকেটের উন্নয়নের কথা বললেও আমি ওদের ধর্মঘট থেকে উন্নয়নের কিছু পাই না। আমার মনে হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে কেউ পেছন থেকে ষড়যন্ত্র করছে। কারা দেশের বিরুদ্ধে কাজ করছে, সেটা বের করা জরুরি। বাইরে কে করছে, তা আমরা জানি। দলের ভেতরে কে এমন করছে, সেটা বের করব শিগগিরই। ভেতরে ভেতরে কে ষড়যন্ত্র করছে, তা অটো বের হয়ে যাবে।’

‘ক্যাম্প হবে, ভারত সিরিজও হবে’ : ক্রিকেটারদের ডাকা ধর্মঘটে জাতীয় দলের ভারত সফর অনিশ্চতায় পড়ে যায়। সফর সামনে রেখে ২৫ অক্টোবর মিরপুরে শুরু হওয়ার কথা অনুশীলন ক্যাম্প।  তবে বিসিবি সভাপতির বিশ্বাস, ক্যাম্প ঠিক সময়েই শুরু হবে। ক্রিকেটাররা ক্যাম্পে যোগ না দিলে বোর্ডের কিছুই করার থাকবে না বলে হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।  নাজমুল হাসান বলেন, ‘ক্যাম্প শুরু হচ্ছে, খেলোয়াড়রা যদি যোগ দেয় তো দেবে, নয়তো দেবে না। ক্যাম্পে যদি যোগ না দেয়, তাহলে কিছু করার থাকবে না।  আমি এখনো আশা করি, ২৫ তারিখ থেকে ক্যাম্প হবে এবং ভারত সিরিজও হবে।’

ক্রিকেটারদের বৈঠকে বসার আমন্ত্রণ : সংকট নিরসনে বোর্ড প্রধান ক্রিকেটারদের সঙ্গে বসতে রাজি আছেন। এজন্য এগিয়ে আসতে হবে ক্রিকেটারদেরই,‘হ্যাঁ, ওরা বসতে চাইলে আমরা রাজি আছি। ওদের জন্য আমাদের দরজা সব সময় খোলা। ওরা আসলে আমরা কথা বলব। দাবি এর আগে কখনো পাইনি।’

ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত আক্রমণ!

ক্রিকেটাররা সম্মিলিতভাবে নিজেদের দাবি দাওয়া নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেও বোর্ড সভাপতি নিজেদের সংবাদ সস্মেলনে ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত ইস্যুতে আক্রমণ করেন।  ফরহাদ রেজার উদ্দেশ্য করে বলেন,‘যে নিজে কোনো ফ্র্যাঞ্জাইজি লিগে খেলার আমন্ত্রণ পায় না সে আবার দুইটার বেশি বিদেশি লিগে খেলার অনুমতি কিভাবে চায়।’ সাকিবকে উদ্দেশ্য করে বলেন,‘ও তো নিজেই লিগ খেলে না।  ও কিভাবে জানে নাকি কোন বাস ….ও কি বাসে উঠে নাকি? আমি লিগের খেলা বাড়িয়ে দেব নে।  ওকে খেলতে বইলেন।’

ক্রিকেটারদের অভিযোগ অস্বীকার কোয়াবের : ক্রিকেটাররা ১১ দফার যে দাবি তুলেছেন, সেই তালিকায় প্রথমেই ছিল কোয়াবের বর্তমান কমিটি বিলুপ্তি করতে হবে। সাকিব-তামিমদের সাফ কথা, ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, সংক্ষেপে কোয়াবের বর্তমান সভাপতি নাঈমুর রহমান দূর্জয় ও সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পালের পদত্যাগ চান তারা। কিন্তু আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি নাঈমুর জানালেন, পদত্যাগ করবেন না তিনি।  প্রায় একই সুরে সুর মিলিয়েছেন দেবব্রতও। ক্রিকেটারদের অভিযোগ, একাধিক পদে থাকায় কোয়াব তাদের পক্ষে বোর্ডে কিছু বলে না এবং কোনো কিছুতেই সংস্থাটিকে পাওয়াও যায় না। সংবাদ সম্মেলনে বিষয়গুলো অস্বীকার করে নাঈমুর, ‘আমরা সব সময় কিছু কিছু দাবি বোর্ডে উপস্থাপন করেছি। কাজেই এসব জায়গায় প্রশ্ন তোলা দুঃখজনক। ওরা বোর্ডে উত্থাপনের কোনো দাবি নিয়ে কোয়াবের কাছে এসেছে যেটা আমরা উত্থাপন করিনি, সুনির্দিষ্ট এমন কিছু কিন্তু আমরা দেখিনি।’

ধর্মঘট প্রত্যাহারের অনুরোধ কোয়াবের : ক্রিকেটাররা অনির্দিষ্টকালের জন্য যে ধর্মঘট ডেকেছেন, সেখান থেকে ফিরে আসার অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক ও কোয়াবের সভাপতি নাঈমুর রহমান দূর্জয়,‘আমরা অবশ্যই চাই খেলোয়াড়রা মাঠে ফিরে আসুক। আমাদের অনুরোধ থাকবে তারা যেন মাঠে ফিরে আসে। তাদের ফোন দিয়ে পাওয়া যায় না। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে কিন্তু ক্রিকেটাররা ক্যাম্প বর্জন করেনি। খেলা চালিয়ে গিয়েও আন্দোলন করা যায়।’

বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের পাশে ফিকা : বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়ায় ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন্স (ফিকা)। ফিকার নির্বাহী সভাপতি টনি আইরিশ বলেছেন, ‘পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে যে পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা সেটার দাবিতে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা যে একসঙ্গে ধর্মঘট করছে সেটাকে আনুষ্ঠানিতভাবে সমর্থন দিচ্ছে ফিকা। বাংলাদেশে চ্যালেঞ্জিং পরিবেশের কারণে খেলোয়াড়দের মধ্যে এই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এবং এটা একটা পরিস্কার সংকেত যে গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্রিকেট দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেভাবে তাদের খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন করে সেটার পরিবর্তন দরকার। যখন খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ার ও জীবিকার উপর প্রভাব পড়ে তখন তারা চুপ করে বসে থাকতে পারে না।’

আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব : বোর্ডের সংবাদ সম্মেলনের সময় সাকিব ছিলেন নিজের ব্যক্তিগত কাজে  এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বোর্ডের সংবাদ সম্মেলনের জবাবে বলেন,‘নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। ’ এদিকে সাকিব বাদে একাধিক ক্রিকেটারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল রাইজিংবিডি। কিন্তু কেউই ফোন ধরেননি। অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে বোর্ড সভাপতিও বলেছেন,‘ওরা তো কেউ আমার ফোন ধরছে না।’

২৩/১০/২০১৯ (বুধবার)

সিইওর সঙ্গে তামিমের যোগাযোগ : ক্রিকেটারদের ডাকা ধর্মঘটে থমকে যায় দেশের ক্রিকেট। সংকট সমাধানে বুধবার বিকেলে খেলোয়াড়দের সঙ্গে বসতে চেয়েছিল বিসিবি। বোর্ড যেকোনো জায়গায় আলোচনায় বসার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছিলেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী।

বিসিবিতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নিজামউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বোর্ড সভাপতির নির্দেশে আমরা আবার খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালাই। জাতীয় দলের খেলোয়াড় তামিম ইকবালের সঙ্গে আমার কথা হয়। ওকে জানানো হয়েছে আর্থিক যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো সমাধান সময়ের ব্যাপার মাত্র। দ্রুত বিষয়গুলো নিষ্পত্তি হবে।’

‘তামিমও জানিয়েছেন, ও ওর সতীর্থ যারা আছে তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানাবে। আমরা এরই মধ্যে জেনেছি ক্রিকেটাররা কোথাও না কোথাও বসবে। আমরা জানিয়েছি বিকেল ৫টায় আমাদের পাওয়া যাবে। বাইরে কোথাও বা বোর্ডে তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হতে পারে।’

ফের গণভবনে নাজমুল হাসান, এবার সঙ্গী দূর্জয় : ক্রিকেটাঙ্গনের অচলাবস্থা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।  বোর্ড সভাপতি ও বোর্ডের পরিচালক নাঈমুর রহমান দূর্জয় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।  প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে ক্রিকেটাদের দাবি দাওয়া মেনে নেওয়ার নির্দেশ দেন, এমনটাই জানান নাজমুল হাসান।

বোর্ডের সঙ্গে বসেনি ক্রিকেটাররা : গণভবন থেকে ফিরে বিকেল ৪টায় মিরপুরে ঢোকেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।  ক্রিকেটাররা ৫টায় বোর্ডে আসবে এমন বিশ্বাসে অপেক্ষা করছিলেন নাজমুল হাসান। কিন্তু বিসিবির সঙ্গে আলোচনায় বসেননি ক্রিকেটাররা।

ক্রিকেটারদের পাল্টা সংবাদ সম্মেলন : বোর্ডের সঙ্গে আলোচনায় না বসে গুলশানে এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন ক্রিকেটাররা।  ক্রিকেটারদের হয়ে সু্প্রীমকোর্টের আইনজীবি মুস্তাফিজুর রহমান খান গণমাধ্যমে কথা বলেন।

নতুন করে আরও দুই দাবি : নিজেদের দ্বিতীয় সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেটাররা আগের ১১ দাবির সঙ্গে নতুন কর দুই দাবি যোগ করেন।  নতুন দাবিগুলো হলো, বোর্ডের আয়ের লভ্যাংশ চান ক্রিকেটাররা। লাভের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ দিতে হবে তাদের এবং নারী ক্রিকেটকে সমান সম্মান, বেতন ও পারিশ্রমিক দিতে হবে।

বিসিবি এবং ক্রিকেটাররা আলাদা কেউ নয়: সাকিব

‘সেদিন আমরা একসাথে সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আজ আবার বসেছি। কিন্তু এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি যে আমরা কী করব। আমাদের কথাগুলো বুঝিয়ে, সুন্দর ও পরিপাটি করে বলার জন্য আমরা একজন মুখপাত্র নিয়েছি। বিসিবি আমাদেরকে ডেকেছে। আমরা অবশ্যই যাব এবং দ্রুত সময়ে আশা করছি সমস্যার সমাধান করে ফেলব। আমরা এবং বিসিবি আলাদা কেউ নই। ওনারাও কেউ আলাদা নয়। দুইটা পার্ট নিয়েই বিসিবি।’

ক্রিকেট বোর্ডে ক্রিকেটাররা : সংবাদ সম্মেলনের পর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বোর্ডের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেয় ক্রিকেটাররা।  প্রায় ৬০-৭০ ক্রিকেটার বোর্ডে আলোচনায় যোগ দেন।  রাত সাড়ে নয়টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলে তাদের বৈঠক।

ধর্মঘট প্রত্যাহার, মাঠে ফিরছেন ক্রিকেটাররা : বিসিবির সঙ্গে ক্রিকেটারদের আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের অধিকাংশ দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড।  প্রথম ১১ দফা দাবির মধ্যে ৯টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে দুই পক্ষের। এবং সেগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বোর্ড। ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ ও দুটির বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলা- এই দুটি দাবি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি এদিন। আলোচনা হয়নি পরে যোগ হওয়া নতুন দুটি দাবি নিয়েও।

শুক্রবার ক্যাম্প শুরু, শনিবার শুরু লিগ : বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, শনিবার থেকে লিগের তৃতীয় রাউন্ডের খেলা শুরু হবে। শুক্রবার থেকে শুরু হবে জাতীয় দলের ক্যাম্প।

দাবি বাস্তবায়ন হলেই আমরা খুশি : ক্রিকেটারদের প্রতিনিধি হয়ে সাকিব আল হাসান বলেন, ‘দাবি-দাওয়া বেশিরভাগ মানা হচ্ছে। এগুলো নিয়ে আরও আলোচনা হবে। সভাপতি আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন যে, সব হবে। এগুলো যখন বাস্তবায়ন হবে তখন আমরা খুশি হবো। তবে এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।’

সমঝোতার পর আবার বৈঠক : বোর্ডের আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ক্রিকেটাররা। ফলে ক্রিকেটের ওপর যে কালো মেঘ জমে ছিল তা কেটে গেছে। কিন্তু দাবি দাওয়াগুলো বাস্তবায়ন কতটা হবে তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা! সেই শঙ্কা থেকেই সমঝোতা হওয়ার পরও গভীর রাতে আবার বৈঠকে বসেছিলেন ক্রিকেটাররা। রাত যখন একটা সাকিব সবার আগে ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে আসেন।  মুখে ছিল না কোনো হাসি।  চুপচাপ গাড়িতে উঠে চলে যান।  এরপর একে একে বেরিয়ে আসেন সবাই।  গভীর রাতে ক্রিকেটারদের আবার বৈঠকে বসার কারণ কি, এ নিয়ে কেউই কথা বলতে রাজী হননি।  একজন বলছেন,‘ফাইনাল টাচ।’ একজন বলছেন, ‘নিজের মধ্যে কথাগুলো রিভিউ করা।’ তবে জাতীয় দলের বাইরের ক্রিকেটাররা রয়েছেন সংশয়ে।  সমঝোতায় ভরসা পাচ্ছেন না তারা, ‘মনে হচ্ছে না খুব বেশি কিছু পেলাম!’ অভিজ্ঞ এক ক্রিকেটারের কথা, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়েছি। বোর্ড আশ্বাস করেছেন। সবই হয়েছে প্রকাশ্যে। এরপরও যদি...।’

তবুও হাসি ফিরল ক্রিকেটে : অনিশ্চয়তায় ধর্মঘট শেষ হলেও হাসি ফিরেছে ক্রিকেটে।  ক্রিকেটাররা আবার মাঠে ফিরছেন এর থেকে ভালো খবর আর কি হতে পারে।  তবে এ ধর্মঘটের ভেতরেও প্রাপ্তি কম নয়।  দেশের শীর্ষ ক্রিকেটাররা এক হয়ে যে দৃঢ়চেতা মনোভাব দেখিয়েছেন তাতে জন্ম হয়েছে নতুন বিশ্বাসের।  ক্রিকেটারদের দাবি দাওয়া বাস্তবায়িত হলে এ আন্দোলনকে পরিপূর্ণ বলা যাবে।  বল এখন বিসিবির কোর্টে।  ক্রিকেটাররা মনেযোগী মাঠের ক্রিকেটে।


ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়