ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আপনি কোলন ক্যানসারের কতটা ঝুঁকিতে রয়েছেন?

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ২৫ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আপনি কোলন ক্যানসারের কতটা ঝুঁকিতে রয়েছেন?

প্রতীকী ছবি

কোলন (মলাশয়) বা বৃহদান্ত্রে টিউমার বেড়ে গেলে কোলন ক্যানসার হয়। সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের এই রোগ বেশি হয়। কিন্তু বর্তমানে অল্প বয়স্কদেরও এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। এর সম্ভাব্য কারণ- শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, স্থূলতা ও খাবার সম্পর্কে অসচেতনতা। পঞ্চাশ পেরিয়ে গেলেই নিয়মিত কোলন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, কিন্তু এই রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে তার আগেই স্ক্রিনিং করা উচিত। লাইফস্টাইলে কিছু স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন এনে এই রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

কম বসুন : একটানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার সঙ্গে পিঠ ব্যথা, হৃদরোগ, স্থূলতা, ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস ও ডায়াবেটিসের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু আপনি কি জানেন বিরতি ছাড়া দীর্ঘসময় বসে থাকলে কিছু ক্যানসার বিকাশেরও ঝুঁকি বেড়ে যায়? যেমন কোলন ক্যানসার। দীর্ঘসময় বিরতিহীন বসে থাকলে শরীরে প্রদাহের মাত্রা বেড়ে যায়। গবেষণায় পাওয়া গেছে, কোলন ক্যানসার ডেভেলপের অন্যতম রিস্ক ফ্যাক্টর দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ। আপনি ডেস্কে কাজ করলে অন্তত প্রতি ঘণ্টায় উঠে দাঁড়িয়ে কিছু সময় হাঁটুন।

কিছুক্ষণ সূর্যালোকে থাকুন : নিয়মিত সূর্যালোকে সময় কাটানোর অনেক উপকারিতা। এতে কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ হতে পারে। কিন্তু বেশিক্ষণ সূর্যের নিচে থাকাও ঠিক নয়। সুস্থ থাকতে আপনার শরীরে ভিটামিন-ডি প্রয়োজন। মানব ত্বক সূর্যালোকের সংস্পর্শে এলে ভিটামিন-ডি তৈরি হয়। গবেষণায় পাওয়া গেছে, ভিটামিন-ডি এর ঘাটতিতে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি ৩১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। আপনার প্রান্তীয় অঙ্গ ও মুখমণ্ডল সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসা প্রয়োজন। স্কিন ক্যানসার বিকাশের ভয় থাকলে সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করতে পারেন। স্কিন টোনের ওপর ভিত্তি করে ৩০ মিনিট পর্যন্ত রোদে থাকতে পারেন। ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্ট তৈলাক্ত মাছ খেয়েও উপকার পেতে পারেন।

অ্যাসপিরিনের ডাবল ডোজ: গবেষণা থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে, অ্যাসপিরিন ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দিতে পারে, এমনকি এটি বিকশিত ক্যানসার ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পারে। যাদের পরিবারের কোনো সদস্যের অন্ত্রে ক্যানসার ধরা পড়েছে তাদের কোলন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা ১০ গুণ বেশি। তারা দিনে দুটি লো-ডোজের অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট খেলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। এটি যদিও বিতর্কিত থেরাপি। কারণ অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই ওষুধ দীর্ঘমেয়াদে সেবন করলে পেপটিক আলসার অথবা পরিপাকতন্ত্রের ক্রনিক মাইনর ব্লিডিং থেকে রক্তশূন্যতা হতে পারে। কিন্তু ক্যানসার এড়াতে চাইলে এই ঝুঁকি না নিয়ে উপায় নেই।

বাদামী চালের ভাত খান : উচ্চ আঁশের খাবার ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে কিনা এটি পুরোনো বিতর্ক। কিন্তু শেষপর্যন্ত গবেষকরা প্রমাণ পেয়েছেন যে উচ্চ আঁশের খাবার ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। প্রচুর পরিমাণে গোটা শস্য বা অপ্রক্রিয়াজাত শস্য (বিশেষ করে বাদামী চাল ও ওটস) অন্ত্রকে ক্যানসার থেকে রক্ষা করতে পারে।

বাঁধাকপি খাবারে রাখুন : বাঁধাকপির মতো সবুজ শাকসবজি কাটলে, রান্না করলে, হজম হলে একটি কেমিক্যাল উৎপন্ন হয় যা ক্যানসার কোষকে দুর্বল করতে পারে। ফলে ক্যানসার কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রতিরোধ হতে পারে। ক্যানসার দমনকারী মূল কেমিক্যালটি সিনগ্রিন নামে পরিচিত, যা শরীরে ক্যানসাররোধী উপাদান অ্যালাইল আইসোথিওসায়ানেটে রূপান্তরিত হয়। আপনার ডায়েটে বেশি করে ব্রোকলি, বাঁধাকপি ও ফুলকপির মতো শাকসবজি রাখুন।

তৈলাক্ত মাছ খান : ভালো হজমের জন্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রয়োজন রয়েছে। ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ তৈলাক্ত মাছের কয়েকটি সেরা উৎস হলো: সার্ডিন, ম্যাকারেল ও স্যালমন। কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত যেসব রোগী প্রতিদিন ন্যূনতম ০.৩ গ্রাম ওমেগা-৩ খেয়েছিল তাদের মৃত্যু ঝুঁকি ৪১ শতাংশ কমেছিল। বেশি পরিমাণে তৈলাক্ত মাছ খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি শতাংশে কমবে।

নিয়মিত ওজন দেখুন : স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রেখে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি দূর করতে পারেন। শুধু তাই নয়- এতে অন্যান্য ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে যাবে। চল্লিশোর্ধ্ব প্রায় ৩ হাজার মানুষের ওপর চালানো গবেষণায় যাদের বডি মাস ইনডেক্স পঁচিশের ওপর ছিল (অতি ওজন বা স্থূল) তাদের কোলন পলিপের উচ্চ আশঙ্কা রয়েছে। সাধারণত এসব পলিপ নিজেরা ক্ষতিকর নয়, কিন্তু তারা শেষপর্যন্ত ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। ওজন কমান, স্বাস্থ্যকর ডায়েটের ওপর থাকুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন- এতেই আন্ত্রিক ক্যানসারের ঝুঁকি বহুলাংশে নিচে নামবে। ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন।

স্ক্রিনিং করুন : কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করতে অথবা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে নিয়মিত চেকআপের গুরুত্ব রয়েছে। কোলোরেক্টাল ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ে আন্ত্রিক পলিপ (যা পরে ক্যানসার হতে পারে) ধরা পড়বে। এ ধরনের পলিপ শুরুতেই অপসারণ করে কোলন ক্যানসারের আশঙ্কা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে পারেন।

পড়ুন :


ঢাকা/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়