ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আবার গান গাইতে চায় মেরিন

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ১৪ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আবার গান গাইতে চায় মেরিন

বাগেরহাট সংবাদদাতা: আবার গান গাইতে চায় প্রতিভাবান শিশুশিল্পী মেরিন খান। লেরিন জেটিক নামক ব্যাধিতে কন্ঠ থেমে গেছে তার। ইচ্ছে হলেও আর গাইতে পারেনা সে।

বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার কালশিরা গ্রামের মেয়ে মেরিন খানের বয়স মাত্র ১৪। চার ভাই বোনের মধ্যে মেঝ মেরিনকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন বেঁধেছিলেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার বাবা মোঃ ওবায়দুল হক খান ও মা নাজমা পারভীন। আবার বড়বোন জেরিন খানও তার শিল্পি হওয়ার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছিলেন মেরিনকে প্রতিষ্ঠিত করতে। মেরিনও ছোট বেলা থেকে নিজেকে সেইভাবে তৈরি করছিল।

প্রাথমিকে পড়াশুনা শুরুর পর থেকেই পল্লীগীতি ও লোকজগানে স্থানীয়ভাবে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে শিশুশিল্পী মেরিনের। বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে স্বল্প বয়সেই অনেক পদক, পুরস্কার ও প্রশংসা কুড়িয়েছে মেরিন। ৫ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সর্বশেষ জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০১৫ প্রতিযোগিতায় পল্লীগীতি ও আঞ্চলিক গানে প্রথম স্থান অধিকার করে তাক লাগিয়ে দেয় মেরিন। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০১৫ গ্রহন করেন সে।

এরপর মেরিনকে নিয়ে দেখা বাবা-মায়ের স্বপ্নের পরিধি আরও বড় হয়ে ওঠে। মেরিনকে ঘিরে বাবা-মায়ের প্রচেষ্টা আরো বেড়ে যায়। পল্লীগীতি, বঙ্গবন্ধু, পদ্মাসেতুসহ দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গানের চর্চায় আরো নিবেদিত হয় মেরিন। এরইমধ্যে এক দুঃসংবাদ ভর করে মেরিনের জীবনে।

২০১৭ সালের শেষের দিকে হঠাৎ করেই মেরিনের গলায় ব্যাথা শুরু হয়। গান গাইতে পারেনা সে। গান গাইলেই গলায় ব্যাথা করে। চিকিৎসকের শরনাপন্ন হলে চিকিৎসকেরা জানান, মেরিন লেরিন জেটিক নামের রোগে আক্রান্ত। দু’চোখে অন্ধকার দেখেন বাবা-মা।

এরপর ঢাকায় খ্যাতনামা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েও মেরিনের গলার কোন উন্নতি হয়নি। একই অবস্থা বিরাজ করছে। হয়তোবা দেশের বাইরে নিয়ে গেলে মিলতে পারে এর চিকিৎসা। কিন্তু মেরিনের বাবা-মায়ের এতো অর্থ ব্যয়ের সাধ্য যে নেই।

সর্বশেষ গাওয়া মেরিনের কন্ঠে দুটি গানের কিছু অংশ এ রকম : ‘আমি স্বপ্ন দেখেছি সেদিন বঙ্গবন্ধুকে, টুঙ্গিপাড়ার কবর থেকে বলছে ডেকে, আমি তোদের কাছে রেখে এসেছি, আমার শেখ হাসিনাকে, শেখ রেহেনাকে।’

‘দ্যাখ দ্যাখ দ্যাখরে তোরা দ্যাখ, কি অপরুপ করছে বাংলা একের পরে এক, থাকলে সরকার একটানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, থাকবেনা আর আবর্জনা ময়লা রাবিশপ্যাক।’ এই গান গাওয়ার পরেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মেরিন। মেরিন জানায়, গান দুটি রেকর্ডিংয়ের প্রক্রিয়ায় থাকার সময় হঠাৎ গলায় সমস্যা দেখা দেয়।

মেরিন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমি গান করি। স্কুল, ইউনিয়ন, উপজেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন গানের প্রতিযোগিতায় আমি প্রথম স্থান অধিকার করেছি। হঠাৎ করে গলা ব্যাথায় আমি আর গাইতে পারছি না। আমি গান গাওয়ার জন্য সুর তুলতে গেলেই গলা ব্যাথা শুরু করে।’

উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন মেরিন।

মেরিনের মা নাজমা পারভীন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘নিজের অর্থসহ ধারদেনা করে মেয়ের গলার চিকিৎসা করিয়ে কোন ফল পাওয়া যায়নি। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় বর্তমানে চিকিৎসা করাতে পারছি না।’ তিনিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিকিৎসার সহযোগিতা কামনা করেন।

মেরিনের বাবা বলেন, ‘আমি একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। ঢাকায় চাকরি করতাম। ছেলেমেয়ের কথা চিন্তা করে বাড়িতে চলে এসেছি। এলাকায় একটি আগরবাতি ফ্যাক্টরি দিয়েছিলাম। মেরিনের চিকিৎসার জন্য ফ্যাক্টরির মালামাল ও যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দিয়েছি। এখন মেয়েকে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। সকলের সহযোগিতায় আমি মেরিনকে দেশের একজন ভাল শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।’

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুসাঈদ বলেন, ‘মেরিনের অসুস্থতার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে ও উপজেলা পরিষদ থেকে কিছু সহযোগিতা করেছিলাম। আমরা চাই মেরিনের চিকিৎসার জন্য বিত্তবানরা এগিয়ে আসুক।’



রাইজিংবিডি/১৪ মে ২০১৮/আলী আকবর টুটুল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়