ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আমি আরেকটা সুযোগ পেয়েছি, অন্য কেউ হলে হয়তো পেত না : আশরাফুল

আব্দুল্লাহ এম রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমি আরেকটা সুযোগ পেয়েছি, অন্য কেউ হলে হয়তো পেত না : আশরাফুল

আব্দুল্লাহ এম রুবেল, খুলনা থেকে: নতুন করে সব কিছু ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় মোহাম্মদ আশরাফুল। ২২ গজে আবারও দ্যুতি ছড়াতে চান।

বাংলাদেশের জার্সি পড়ে চান মাঠ মাতাতে। দীর্ঘ পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরেছেন বাংলাদেশের প্রথম পোস্টারবয়। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। এখন তার একটাই স্বপ্ন, জাতীয় দলে ফেরার আরেকটি সুযোগ।

ফেরার স্বপ্নটা শুধু স্বপ্নের মধ্যেই রাখেননি। ৩৪ বছর বয়সেও নিজেকে ফিট রেখেছেন। গত মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ৫টি সেঞ্চুরি করেছিলেন। সেঞ্চুরি আছে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও। তার এসব চেষ্টার প্রতি সমর্থন জানালেন নির্বাচকরাও।



জাতীয় দলে ফেরার একটা বড় মঞ্চ পেয়েছেন তিনি। জাতীয় দল থেকে সম্প্রতি বাদ পড়া, এইচপি টিমের ভালো পারফরমার আর ‘এ’ দলের সেরা খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে বুধবার থেকে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে একটি চারদিনের ম্যাচ। নির্বাচকরা এ ম্যাচ খেলার জন্য সুযোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ককে। নিজের ‘দ্বিতীয়’ ইনিংসে এই সুযোগকে অনেক বড় করে দেখছেন আশরাফুল। তাই নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সুযোগটা কাজে লাগাতে চান তিনি। মঙ্গলবার আবু নাসের স্টেডিয়ামে অনুশীলন শেষে আশরাফুল প্রত্যাশার কথা শুনিয়েছেন রাইজিংবিডি’কে।

রাইজিংবিডি: প্রতিযোগীতামূলক ক্রিকেটের জন্য নিজেকে কতটা প্রস্তুত রাখতে পেরেছেন?
আশরাফুল: নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর থেকে শেষ আড়াই তিন মাস আমি নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করছি। সামনে জাতীয় লিগ। নির্বাচকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি, লিগের আগে আমাকে একটা চারদিনের ম্যাচ খেলার সুযোগ দিয়েছেন। মেন্টালি বলেন, ফিজিক্যালি বলেন, শেষ আড়াই তিন মাস ভালো উন্নতি করেছি। ক্রিকেটের মধ্যেই ছিলাম। ঈদের আগে ইংল্যান্ডে কিছু ম্যাচ খেলে এসেছি। যেহেতু আমার সব কিছু উঠে গিয়েছে (নিষেধাজ্ঞা), এখন আমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এখন যদি আমি ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি, তাহলে আমার যে অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রয়েছে, সেটা দেশের জন্যও কাজে লাগবে।

রাইজিংবিডি: জাতীয় দলে ফেরার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী ?
আশরাফুল: ওটা তো একটা স্বপ্ন আছেই। প্রতিটা ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলের হয়ে খেলার। আমি এর আগে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছি। নিজের কারণে সুযোগটি নষ্ট হয়েছে। স্বপ্ন পূরণের সুযোগ আবার এসেছে। তবে আমি এখন ফোকাস করছি শুধুমাত্র এই চারদিনের ম্যাচটি। চারটা দিন উপভোগ করতে চাই। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব ডিপার্টমেন্টেই যেন ভালো খেলতে পারি। এই ওয়েদারের সাথে যেন এডজাস্ট করতে পারি, সামনে আমাদের জাতীয় লিগ আছে, সেখানেও আমি ঢাকা মেট্টোর হয়ে ভালো খেলতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস।



রাইজিংবিডি : নিষেধাজ্ঞার পর এবারই প্রথম বিসিবির কোনো দলে সুযোগ পেলেন। পাশাপাশি বিসিবির স্টাফদের সঙ্গে কাজ করছেন। পুরো বিষয়টি কেমন লাগছে?

আশরাফুল: সবাই খুব হেল্পফুল। আমাকে সবাই ওয়েলকাম করেছে। আমার যে এক্সপেরিয়েন্স, আমি যেন সেটাই এপ্লাই করতে পারি, সেটা নিয়েই কথা হয়েছে। আর প্রতিটা মোমেন্ট ইনজয় করতে বলেছে। আমি আসলে ইনজয় করছি। অনেক দিন পর বাংলাদেশ টিমের স্টাফদের সাথে, প্লেয়ারদের সাথে ড্রেসিং রুম শেয়ার করছি। যদিও আমি ডোমেস্টিক খেলেছি। কিন্তু এই ধরণের দলের সাথে অনুশীলন অলমোস্ট সাড়ে পাঁচ বছর পর। খুব ভালো লাগছে।

রাইজিংবিডি: ঘরোয়া ক্রিকেটেও ভালো করেছেন। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করেও তুষার ইমরান বা নাঈম ইসলামরা যে সুযোগটা পাচ্ছেন না, সেই সুযোগটা আপনি পেয়েছেন। এই আস্থা কতটা রাখতে পারবেন?
আশরাফুল: এজন্যই ক্রিকেট বোর্ড এবং নির্বাচকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে, আমাকে এ ধরণের একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি চেষ্টা করবো আমার সেরাটা দেয়ার, আমার যে অভিজ্ঞতা... দেশের হয়ে আমি ১৩ বছর খেলেছি। পাঁচ বছর ছিলাম না, কিন্তু আমি কখনও বসে ছিলাম না। যেখানেই সুযোগ পেয়েছি সেখানেই খেলেছি। অবশ্যই চেষ্টা করবো, আমার এক্সপ্রেরিয়েন্সটা এখানে শেয়ার করার। ভালো একটা স্টার্ট যদি করতে পারি, সেটা যেন বড় হয়। একটা বড় ইনিংস যেন খেলতে পারি সেদিকেই লক্ষ থাকবে। সামনে যেখানেই আমি খেলবো, চেষ্টা করবো ভালো ক্রিকেট খেলার।



রাইজিংবিডি: আপনার ফিটনেস নিয়ে জানতে চাইবো। সম্প্রতি বিপ টেস্টে ভালো করেছেন। প্রোপার ডায়েট ছাড়া তো এটা সম্ভব না। ভোজন রসিক আশরাফুলের জন্য এটা কতটা কঠিন ছিল?

আশরাফুল: সেটা তো অবশ্যই। ফিটনেসের জন্য ডায়েটটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। হার্ড ওয়ার্ক তো করেছি। লাস্ট আড়াই মাস ভাত খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আমি ফিল করেছি, লাস্ট দুই বছর আমি যতটুকু ফিট ছিলাম সেটা যথেষ্ট ছিলো না। যেহেতু আমার সব বাধা উঠে গিয়েছে, আর আমার মূল লক্ষ জাতীয় দলে ফেরা। এ কারণে সব ডিপার্টমেন্টেই আমাকে বেস্ট হতে হবে, সেই লক্ষ নিয়েই আসলে কিছু কিছু খাওয়া দাওয়া বন্ধ করতে হয়েছে।

রাইজিংবিডি: লাস্ট পাঁচ বছর আপনার জন্য খুব খারাপ সময় গিয়েছে। এই সময়টাতে আসলে আপনার লেসনটা কি ?
আশরাফুল: আমি যে ভুলটা করেছি…আমার থেকে অন্য যারা তরুণ ক্রিকেটার আছে তারা যেন এই লেসনটা নেয়। এই ধরণের ভুল যেন না করে। কারণ আমি ভাগ্যবান যে, আমি আরেকটা সুযোগ পেয়েছি। অন্য কেউ হলে হয়তো এই সযোগটাও পাবে না। এই পাঁচ বছর অবশ্যই কঠিন সময় গিয়েছে। আসলে আমার লাইফে আমি ভুল খুব কমই করেছি। আমি সব সময়ই চেষ্টা করেছি মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করার। অনুশীলন বলেন বা অন্য কোথাও ফাঁকিবাজি আমি করিনি। এই কারণেই হয়তো আমি ভাগ্যবান যে, আমি আরেকটা সুযোগ পেয়েছি।



লেসন বলতে অবশ্যই, বাকি জীবনটা ভালো মানুষ হিসেবে থাকতে চাই। ক্রিকেটের সাথে যেহেতু আমি এখনও আছি, খেলাটাকে ভালোবাসি, চেষ্টা করবো আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে বড় বড় ইনিংস খেলার। মানুষ আমাকে প্রচুর ভালোবাসে। উনারা শেষ পাঁচ- সাড়ে পাঁচ বছর যেভাবে আমাকে সাপোর্ট করেছেন, আমি কামব্যাক করে উনাদের আরও ভালো ভালো ইনিংস উপহার দিতে চাই।

রাইজিংবিডি: আজকে আপনি যাদের সাথে অনুশীলন করেছেন বা আগামী চারদিন খেলবেন, আপনি যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা শুরু করেছেন তখন এদের অনেকেই ক্রিকেট খেলা শুরু করেনি। এই দলের সাথে মানিয়ে নেয়াটা আপনার জন্য কতটা কষ্টসাধ্য বা কতটা উপভোগ করছেন?
আশরাফুল: আমি খুব ভাগ্যবান। প্রথম দিকের লিজেন্ড ক্রিকেটার আকরাম ভাই, নান্নু ভাই, বুলবুল ভাই উনাদের সাথে খেলেছি। পরে পাইলট ভাই, সুজন ভাই, সুমন ভাই সব লিজেন্ডদের সাথেও খেলেছি। আবার আজকের বিশ্ব ক্রিকেটের লিজেন্ড মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক এদের সাথেও খেলেছি। এখন যারা তরুণ তাদের সাথেও খেলছি। আসলে খুব তরুণ বয়সে স্টার হয়েছিলাম, এ কারণেই এই ভাগ্যটা আমার হয়েছে। সব মিলিয়ে উপভোগ করছি। এখন অনেক ট্যালেন্টেড ক্রিকেটার আছে। তাদের সাথে খেলছি, ভালো লাগছে। তবে কোন প্রেসার নেই, কারণ আমি এই খেলাটা ভালোবাসি। আর আমি জানি কিভাবে খেলতে হয়। এই কারণে আমি অতটা প্রেসার ফিল করছি না।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮/ইয়াসিন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়