ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘আমি চেয়েছিলাম এই ম্যাচে একটা মোমেন্ট তৈরি করতে’

আমিনুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৫, ১৬ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আমি চেয়েছিলাম এই ম্যাচে একটা মোমেন্ট তৈরি করতে’

মঙ্গলবার ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ যে পারফরম্যান্স করেছে সেটা মাঠে উপস্থিত ৬৩ হাজার দর্শকরা তো মনে রাখবেই, যারা মাঠের বাইরে ছিল তারাও মনে রাখবে অনেকদিন। বাংলাদেশকে স্রেফ উড়িয়ে দেওয়ার যে বাসনা নিয়ে ভারত মাঠে নেমেছিল সেটা পূর্ণ হতে দেননি ইয়াসিন খান-বিপলু আহমেদরা। উল্টো ম্যাচের ৪২ মিনিটে সাদ উদ্দিন দুর্দান্ত হেডে গোল করে ভারতের বিপক্ষে লিড এনে দেন বাংলাদেশকে। গর্জন তোলা গ্যালারিকে শশ্মানে পরিণত করেন। যা ছিল জাতীয় দলের হয়ে তার করা প্রথম গোল। আর সেই গোলে ভর করে বাংলাদেশ ৩৪ বছর পর সল্টলেক স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলতে নেমে ১ পয়েন্ট নিয়ে ফিরছে দেশে। বুধবার সকালে টিম হোটেলে সাদ উদ্দিনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক আমিনুল ইসলামের। সেগুলো রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল :

প্রশ্ন : ভারতের সঙ্গে জিততে জিততে ড্র করলেন। কোনো খারাপ লাগা কাজ করছে?

সাদ উদ্দিন : অবশ্যই খারাপ লাগা কাজ করতেছে। প্রায় জিতেই গিয়েছিলাম। একটা সময় মনে হয়েছিল আমরা জিতে যাচ্ছি। শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে ১-১ এ ড্র করলাম। আসলে তখন আমরা একটু চাপ নিয়েছিলাম বেশি। শেষ ১০ মিনিট ওরা খুব প্রেসার দিয়ে খেলছিল। তখন আসলে যেকোনো মুহূর্তে আরো একটি গোল হজম করতে পারতাম আমরা। তখন আমরা ডিফেন্সটা খুব ভালো করেছিলাম বলে আর কোনো গোল খাইনি।

প্রশ্ন : জাতীয় দলে এটা কি আপনার প্রথম গোল?

সাদ উদ্দিন : হ্যাঁ, জাতীয় দলে এটা আমার প্রথম গোল। মাঝে অনেকদিন আমি ইনজুরিতে ছিলাম। সে কারণে অনেক ম্যাচ মিস হয়েছে আমার।

প্রশ্ন : আপনি কি ম্যাচের আগের রাতে চিন্তা করেছিলেন যে ভারতের বিপক্ষে গোল করতে পারবেন?

সাদ উদ্দিন : ইনজুরি থেকে ফেরার পর আমি আসলে প্রত্যেক ম্যাচেই খেলার সুযোগ পেয়েছি। ভুটানের বিপক্ষে দুই ম্যাচ খেলেছি। কাতারের বিপক্ষে খেলেছি। কোচ আমার খেলায় খুশি ছিলেন। কিন্তু আমি গোল পাচ্ছিলাম না। আমার ইচ্ছা ছিল এই ম্যাচে একটা গোল করার।

প্রশ্ন : এটাকে কি স্বপ্নের গোল বলবেন?

সাদ উদ্দিন : এটা আসলে আমার এক ধরনের স্বপ্নের গোল। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে। তাও আবার জাতীয় দলের হয়ে আমার প্রথম গোল। আম চেয়েছিলাম এই ম্যাচে একটা মোমেন্ট তৈরি করতে। আল্লাহর ইচ্ছায় সেটা হয়েছে।

প্রশ্ন : জামাল যখন কিক নেয় তখন কি তার সঙ্গে আপনার আই কন্টাক হয়েছিল?

সাদ উদ্দিন : হ্যাঁ। জামাল যখন কিক নিতে যাচ্ছিল তখন আমি সেকেন্ড বারে চলে যাই। আমি তাকে বলছিলাম। আসলে তার ফ্রি কিকগুলো অনেক ভালো হয়। মোটামুটি বোঝা যায় যে কোন জায়গায় বলটি মারবে। আমি আগেই ওই জায়গায় চলে গিয়েছিলাম। আই কন্টাক ছিল। আমি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বল ফলো করছিলাম।যখন গোলকিপার ফ্লাইট মিস করছে তখন আমি বল পেয়ে গেছি। তারপরও বলটা বাইরে চলে যেত যদি আমি ফ্লাইং হেড না দিতাম।

প্রশ্ন : গোল হওয়ার পরও আপনাকে কেমন যেন চুপচাপ মনে হয়েছিল!

সাদ উদ্দিন : আসলে আমি তো বলে হেড নিয়ে মাটিতে পড়ে গেছি। মাথা তুলে দেখি বল জালে। তারপর আমি খেয়াল করার চেষ্টা করছিলাম যে অফসাইড হল কিনা। যদিও অফসাইড ছিল না। তারপর তো দেখলাম গোল হয়ে গেছে। বলটা কানেক্ট হয়েছিল খুব ভালোভাবে।

প্রশ্ন : আপনি রাইট ব্যাক থেকে ফরোয়ার্ড লাইনে খেলছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে কি?

সাদ উদ্দিন : আসলে রাইট ব্যাক আর ফরোয়ার্ড প্রায় একই। খেলতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। স্ট্রাইকার হিসেবে খেললে হয়তো একটু সমস্যা হত। আমি তো স্ট্রাইকার হিসেবে খেলিনি। সমস্যা খুব একটা হয় না। দুই-এক ম্যাচ খেললে ঠিক হয়ে যায়। কোচও বিষয়টা দেখতেছে।

প্রশ্ন : গোলের পর সবার কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

সাদ উদ্দিন : খুবই ভালো। সবাই খুব প্রশংসা করছে। ভারতের বিপক্ষে এতো বড় একটা ম্যাচে গোল করেছি। আসলে দুই দলের ব্যবধান অনেক। ভারত ফুটবলে এখন কোথায়। সবদিক দিয়ে তারা বেশ আগানো। আর আমরা কোথায়। তারপরও তাদের মাঠ থেকে এক পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে পারছি। একটা গোল করতে পেরেছি। দুর্ভাগ্য, নইলে হয়তো জয় নিয়েই ফিরতে পারতাম। আশা করি ঘরের মাঠে তাদের হারিয়ে দিব।

প্রশ্ন : ম্যাচের আগে কোচ কী বলেছিলেন?

সাদ উদ্দিন : অন্যান্য ম্যাচের মতোই অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেছেন। বলেছেন এতো দর্শক মাঠে। এতো সাপোর্টার ভারতের। ম্যাচটা এনজয় কর। সবাই মাঠে হার্ড ওয়ার্ক কর। ফাইট কর। ভারত কেন, তার চেয়ে ভালো ভালো দলের বিপক্ষেও ভালো রেজাল্ট করে আসবো।

প্রশ্ন : হাফ টাইমে কী বলেছিলেন?

সাদ উদ্দিন : হাফ টাইমে আমরা যখন ১ গোলে এগিয়ে ছিলাম তখন কোচ এসে বলছেন যে তোমরা খুবই দারুণভাবে প্রথমার্ধ শেষ করেছো। দ্বিতীয়ার্ধে একটু সতর্ক থাকতে হবে। গোল হজম করা যাবে না। আমরা সুযোগ পাব, যেকোনো মুহূর্তে গোল করতে পারব।

প্রশ্ন : ভারতের বিপক্ষে ড্র টা আমাদের ফুটবলকে কোন দিকে নিয়ে যাবে?

সাদ উদ্দিন : আসলে ভারতের মাঠ থেকে একটি পয়েন্ট নিয়ে যাচ্ছি আমরা এটা বিশাল কিছু। আপনারা দেখছেন তো মাঠে কতো দর্শক এসেছিল। ওরা প্রত্যাশা করেছিল ওরা জিতবেই। ভালো ব্যবধানে জিতবে। কিন্তু তাদের সেই পরিকল্পনা আমরা কঠিন করে দিয়েছি মাঠে। এখন আমাদের প্রত্যাশা আরো বেড়ে গেছে। আমরা আরো কিছু করতে চাচ্ছি। আরো পাঁচ-ছয়টা ম্যাচ আছে। ম্যাচগুলো ভালো খেলতে চাচ্ছে সবাই। যাতে পজিটিভ একটা ফল পাই আমরা। আমাদের উপর সবার প্রত্যাশাটা আরো বেড়ে গেছে।

প্রশ্ন : এটা ফুটবলের বাক বদলে ভূমিকা রাখবে কি না?

সাদ উদ্দিন : অবশ্যই। আমাদের ফুটবল কিন্তু আগাচ্ছে। তিন বছর আগেও ভুটানের সঙ্গে আমাদের খেলতে কষ্ট হত। এখন কিন্তু আমরা ভুটানের সঙ্গে ভালোভাবেই জিততেছি। আমাদের এই দলটা আস্তে আস্তে আরো ভালো পর্যায়ে যাচ্ছে। দিনকে দিন এটা আরো ভালো হবে। যদি দলটা একসঙ্গে থাকে। কোচ যদি থাকে। সবাই হার্ড ওয়ার্ক করে তাহলে এই টিম নিয়ে বাংলাদেশ অনেক দূর যেতে পারবে।

প্রশ্ন : ম্যাচের আগে কি ভেবেছিলেন ভারতের বিপক্ষে জেতা সম্ভব?

সাদ উদ্দিন : আমি ড্র করা সম্ভব এটা ভাবছিলাম। সত্যি বলতে আমরা সবাই চাচ্ছিলাম জিততে। হারের কল্পনাতো মাথায় ছিল না। ড্র যে করতে পারব সে বিষয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। অন্তত এক পয়েন্ট নিয়ে আমরা বাড়ি ফিরব। যদিও জেতাটা কঠিন ছিল। তাদের মাঠ তাদের অনেক দর্শক। যদিও আমরা জেতার সুযোগ পেয়েছিলাম।

প্রশ্ন : এত এত দর্শক, উপভোগ করেছেন কি?

সাদ উদ্দিন : অন্যরা কী করেছে আমি জানি না। কিন্তু আমি খুব উপভোগ করেছি। আমি মনে করি সবাই উপভোগ করেছে। এরকম দর্শকের সামনে কখনো খেলেনি। তবে সিলেটে একবার এর কাছাকাছি দর্শকের সামনে খেলেছিলাম। তবে এই ম্যাচে অবশ্যই সবচেয়ে বেশি দর্শক ছিল।

প্রশ্ন : পরবর্তী ম্যাচগুলো নিয়ে ভাবনা কী?

সাদ উদ্দিন : একটাই ভাবনা সবাই মিলে দলটাকে এগিয়ে নিতে হবে। পরবর্তীতে ওমানের বিপক্ষে ম্যাচ। আশা করছি ভালো কিছু হবে ওদের মাঠে। ওরা অনেক ভালো দল।

প্রশ্ন : দলের এই যে ইতিবাচক পরিবর্তন, মূল কারণটা কী?

সাদ উদ্দিন : কঠোর পরিশ্রম। সবাই কঠোর পরিশ্রম করছে। যে সুযোগ পাচ্ছে সেই কাজে লাগাচ্ছে। সবাই দলের প্রতি ডেটিকেটেড। সবাই কিছু না কিছু করতে চায়।

সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

সাদ উদ্দিন : আপনাকেও ধন্যবাদ।


কলকাতা/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়