ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘আমি শিক্ষক, আমাকে ক্লাসে ফিরে যেতে দিন’

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ২৮ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আমি শিক্ষক, আমাকে ক্লাসে ফিরে যেতে দিন’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. রুশাদ ফরিদীর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের দেয়া জবরদস্তিমূলক ছুটির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করে তাকে কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। গত ২৫ আগস্ট এ আদেশ দেয়া হয়।

এদিকে, গত সোমবার যোগদানের কাগজপত্র বিভাগের অফিসে জমা দিতে গেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেছেন, ‘চেয়ারম্যান স্যার জানিয়েছেন, উনার অনুমতি ছাড়া কোনো চিঠি রিসিভ করা যাবে না’।

বিষয়টি নিয়ে সোমবার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ড. রুশাদ ফরিদী। সেখানে তিনি লিখেন, তার শিক্ষকতায় ফেরার পথটা বেশ কঠিন হবে।

মঙ্গলবার রাতে ড. রুশাদ ফরিদী ফেসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন। এতে নিজের একটি ছবি দিয়েছেন তিনি। ছবি দেখা যায়, তিনি অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে একটি প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা আছে, ‘আমি শিক্ষক, আমাকে ক্লাসে ফিরে যেতে দিন’।

এদিকে, আইনি জটিলতার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী নিজ বিভাগে ফিরতে পারছেন না বলে দাবি করেছে বিশ্ববিদ‌্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ফলে রুশাদ ফরিদীকে বিভাগের সব ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে। তবে ড. রুশাদ ফরিদীর দাবি, ঢাবি কর্তৃপক্ষের অনীহা ও অসহযোগিতার কারণেই তিনি বিভাগে ফিরতে পারছেন না।

জানা যায়, ২০১৭ সালে জুলাই মাসে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ড. রুশাদ ফরিদীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। সে সময় ড. রুশাদ ফরিদীর বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের ৩১ জন শিক্ষক অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন যে, ড. রুশাদ ফরিদীর সঙ্গে তারা কাজ করবেন না। এরপর তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। পরে উপাচার্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন ওই শিক্ষক। ঢাবির উপাচার্য, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা), উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), রেজিস্টার, বিভাগের সভাপতি বরাবর নোটিশ পাঠানো হয়েছিল।

মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, এ অভিযোগ করে আদালতে মামলা করেন ড. রুশাদ ফরিদী। গত ২৫ আগস্ট উচ্চ আদালত ড. রুশাদ ফরিদীর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের দেয়া জবরদস্তিমূলক ছুটির আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তাকে কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেন। তবে আদালতের রায় হলেও আইনি জটিলতার কারণে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিতে পারেননি ড. রুশাদ ফরিদী।

সোমবার যোগদানের কাগজপত্র বিভাগের অফিসে জমা দিতে গেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, ‘চেয়ারম্যান স্যার জানিয়েছেন, উনার অনুমতি ছাড়া কোনো চিঠি রিসিভ করা যাবে না’। তখন রুশাদ ফরিদী বিভাগের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেন। চেয়ারম‌্যান জানান, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি ছাড়া এ ব্যাপারে কোনো চিঠি গ্রহণ করতে পারবেন না। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি এলে তারা তা বিবেচনা করবেন। রায়ের কপি না আসা পর্যন্ত তারা কিছু করতে পারবেন না।

এদিকে, রুশাদ ফরিদী বলেছেন, আদালতের রায় হয়েছে, কিন্তু রায়ের কপি এখনো হাতে আসেনি। তবে তিনি তার আইনজীবীর স্বাক্ষরিত একটি কপি বিশ্ববিদ্যালয় ও তার বিভাগে জমা দিয়েছেন। যাতে উল্লেখ রয়েছে যে, তিনি নির্দোষ।

রুশাদ ফরিদী আরো জানিয়েছেন, যদি বিভাগ বা বিশ্ববিদ্যালয় এ ব্যাপারে আদালতে খোঁজ নিতে চায় তারা নিতে পারে। কিন্তু তাকে যেন বিভাগের কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু বিভাগের চেয়ারম্যান চিঠি গ্রহণ না করার কারণে তিনি ক্লাসে ফিরতে পারছেন না। এর প্রতিবাদ হিসেবে তিনি দুই দিন ধরে ক্লাসে ফেরার দাবিতে অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে একটি প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা আছে, ‘আমি শিক্ষক, আমাকে ক্লাসে যেতে দিন’।

বিষয়টি নিয়ে ড. রুশাদ ফরিদী বলেন, রায় হওয়ার পরে আমি বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেই যে, এ মামলার রায় হয়েছে। আমি নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় আমাকে দয়া করে বিভাগের কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দিন। তখন তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো কিছু না জানানো পর্যন্ত তারা চিঠি গ্রহণ করতে পারবেন না। এরপর আমি ভিসি বরাবর আরেকটা চিঠি দিয়েছি, কিন্তু তার উত্তর এখনো পাইনি।

তিনি আরো বলেন, এটা ক্লিয়ার- আমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ৯০ দিনের বেশি বাধ্যতামূলক ছুটিতে রাখা যায় না। তারপরেও আমি ৭০০ থেকে ৮০০ দিনের বেশি ছুটিতে আছি। আমি নির্দোষ। আমাকে অন্যায়ভাবে দুই বছর ধরে হেনস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু মামলার রায় হওয়ার পরও তাদের এখনো বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নাই। তাই রায় হওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করতে চেয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে যোগদান করতে দিচ্ছে না। আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পাওয়া সময়সাপেক্ষ। তারা যদি আমাকে কাজ করার সুযোগ না দেয় তাহলে আমাকে আরো পাঁচ থেকে ছয় মাস বসে থাকতে হবে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আদালতের রায়ের ব্যাপারে খোঁজ নেয় তা হলে তারা খোঁজ নিতে পারে। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে আসতে আইনি জটিলতার কারণে একটু সময় লাগবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাচ্ছে না আমি ফিরে আসি। যেহেতু রায় হয়ে গেছে, তারা ইচ্ছা করলে আমাকে নিতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শফিকুজ্জামান বলেন, মামলা চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে, আমাদের সাথে নয়। মামলার রায়ের কোনো কাগজ আমরা এখনো হাতে পাইনি। মামলার রায় হয়েছে, দাবি করে তিনি একটি প্রত্যয়নপত্র ও পত্রিকার একটি নিউজ অফিস বরাবর জমা দিয়েছেন। কিন্তু আমরাই কাগজ গ্রহণ করিনি। কারণ, এটি তো মামলার রায় নয়। আর যদি কোনো কাগজ গ্রহণ করতে হয় তাহলে গ্রহণ করবে বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ, মামলা চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে। উনি বলছেন, মামলার রায় হয়েছে, অথচ তিনি দেখাচ্ছেন উনার আইনজীবীর স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্র।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের যা বলা হবে, আমরা তাই করব। তাকে ক্লাসে ফেরানোর বিষয়ে আমাদের কোনো ক্ষমতা নেই। আমাদের আইনের বিরুদ্ধে যাওয়ার কোনো ক্ষমতা নাই। আইনের মীমাংসা না হলে আমাদের কিছু করার নাই।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এই বিষয়টি একটি আইনি প্রক্রিয়া। যা করতে হবে আইনের মধ্য দিয়ে করতে হবে। আমরা বিষয়টি দেখছি।’

 

ঢাকা/ইয়ামিন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়