ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আলাল-দুলাল পড়ে থাকে রাস্তায়-নর্দমায়

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ২৫ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আলাল-দুলাল পড়ে থাকে রাস্তায়-নর্দমায়

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : বড় লোকের ছেলে-মেয়েরা যখন নামিদামি স্কুলে পড়ে, মায়েরা নিজস্ব দামি গাড়ি হাকিঁয়ে সকাল বেলায় বাচ্চাদের স্কুলে লিফট দেন, ব্যক্তিগত গাড়ি আর রিকশায় রাস্তায় বাঁধে দীর্ঘ যানজট, তখন বাস-ট্রাক-সিএনজি-প্রাইভেট কারের ফাঁক-ফোকর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চেঁচাতে থাকেন সাত বছর বয়সী ছোট্ট শিশু আলাল, ‘এই লুসনি, এই লুসনি।’

যে বয়সে আলাল থাকার কথা স্কুলে, সে বয়সে আলাল রাজধানীর কাটাবন মোড়ে চলন্ত গাড়ির যাত্রীদের কাছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিক্রি করছে লুসনি। লুসনি মোটা কাপড় দিয়ে তৈরি এক ধরনের ন্যাকড়া বিশেষ। রান্না করার সময় গরম পাতিল ধরার কাজে ব্যবহার করা হয়।

আলাল (৭), তার ছোট ভাই দুলাল (৪) ও তার মা কুলসুমা বেগম (২৬) তিন সদস্যের ছোট্ট পরিবারটি লুসনি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আলালের বাবা সুজন উদ্দিন রিকশা চালাতেন। চার বছর আগে লিভার ড্যামিজ হওয়ার কারণে মারা যান। কর্মক্ষম পিতার মৃত্যুর পর বাধ্য হয়েই পথে নামতে হয় তাদের। আলালদের দিনের ঠিকানা কাঁটাবন হলেও রাতের ঠিকানা কামরাঙ্গীচর রনি মার্কেটের সামনে ভাড়া বাসায়।

রাস্তার দুই পাশে যখন তীব্র গতিতে ছোট-বড় যানবাহন ছুটে চলে তখন চার বছর বয়সী ছোট্ট দুলাল নিশ্চিন্ত মনে বসে থাকেন কাঁটাবন মোড়ের সড়ক দ্বীপে লুসনির পসরা সাজিয়ে। আর দুলাল আর তার মা কুলসুমা চলন্ত গাড়ির পাশ কেটে দিব্যি হেঁটে চলেন, যাত্রীদের উদ্দেশে চেঁচাতে থাকেন, ‘এই লুসনি, এই লুসনি।’ তারা প্রতিদিন রুটিন করে সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কাটাবন এলাকায় লুসনি বিক্রি করেন।

প্রতিজোড়া লুসনি ১০টাকা দামে বিক্রি করে তাদের প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা লাভ হয়। কুলসুমা বেগম বলেন, বাকিতে লুসনি কিনে আনেন, বিক্রির পর টাকা পরিশোধ করেন। জ্যাম বেশি হলে বিক্রি বেশি হয়।

আলালের বয়স যখন এক, মা লুসনি বিক্রি করার সময় আলালকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। আলাল আরেকটু বড় হলে, মা আলালকে সড়কে একা বসিয়ে রেখে জ্যামের মধ্যে লুসনি বিক্রি করতো। যার কারণে জনাকীর্ণ এলাকায় আলাল একাধিকবার হারিয়ে গেছেন। আবার অনেক খোঁজাখুজির পর ফিরে পেয়েছেন। পরে আলাল নিজেও লুসনি বিক্রি শুরু করেন। এখনো তার স্কুলের বারান্দায় যাওয়া হয়নি, লুসনি ফেরী করছে সে বেশ দক্ষতার সঙ্গে।

 


অন্যদিকে দুলালের স্কুলে যাওয়ার বয়স না হলেও পাশের বাসার বাচ্চাদের থেকে শুনে শুনে একটি ছড়া মুখস্ত হয়ে গেছে। পড়ার ব্যাপারে দারুন আগ্রহ তার। কিন্তু তাদের জীবনে শিক্ষার চেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করা অনেক বেশি জরুরি।

আলাল-দুলালের জীবনে শৈশব বলতে আলাদা কিছু নেই। শৈশব বলতে তারা বুঝে ক্ষুধার্ত সকাল, উত্তপ্ত পিচঢালা রাজপথ, জ্যামে আটকে পড়া গাড়ি আর লুসনি বিক্রি।

আলাল-দুলালের পড়াশুনার ব্যাপারে জানতে চাইলে কুলসুমা বেগম বলেন, স্কুলে স্যারদের সঙ্গে কথা বলেছি। স্যারেরা বলে টাকা দিতে পারবা? ওরা টাকা দিতে পারে, আমি পারিনা। আমরা তো দিন আনি দিন খাই।

এমডিজি, এসডিজি আওতায় সবার জন্য শিক্ষার কথা বলা হলেও আলাল-দুলালেরা সেই সবার হিসাবে পড়েনা কখনো। বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কের দিকে এগিয়ে যায়, আলাল-দুলালেরা তখন পড়ে থাকে রাস্তায়, নর্দমায়।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জানুয়ারি ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়