ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আলো দেখছে না ‘রাগ নিবারণী পার্ক’

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৩, ১২ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আলো দেখছে না ‘রাগ নিবারণী পার্ক’

জল সবুজের ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর ওসমানী উদ্যানের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে। ১০ মাসের মধ্যে পার্কের সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এটিকে ‘গোস্বা বা রাগ নিবারণী’ পার্ক হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে উল্লেখ করে ওই সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) বলেছিল, ‘এটিকে এমনভাবে সাজানো হচ্ছে যে, কোনো রাগান্বিত ব্যক্তি এখানে আসলে তার মন ভাল হয়ে যাবে। ’ তবে কাজ শুরু হয়ে প্রায় ২২ মাস পার হলেও আলোর মুখ দেখেনি সেই ‘গোস্বা বা রাগ নিবারণী পার্ক’।

ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৯ একর জমির উপর রাগ নিবারণী পার্ক তৈরি করা হচ্ছে। পার্কে থাকবে লেক (জলাধার), রিফ্রেশমেন্টের জন্য চা-নাশতার ব্যবস্থা। বাজবে হারানো দিনের গান। থাকবে বড় স্ক্রিনের টেলিভিশন। ফলে এখানে একজন মানুষ এলে তার মন ভালো হয়ে যাবে; যদি তিনি মান-অভিমানে বা রাগান্বিতও থাকেন।

বুধবার (৮ নভেম্বর) রাগ নিবারণী পার্কে (ওসমানী উদ্যানে) সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে নীল টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ভেতরে কী চলছে তা বোঝার কোনো উপায় নেই। সবকটি প্রবেশদ্বার বন্ধ করে কাজ চলছে গোস্বা নিবারণী পার্কের।

কাজের অগ্রগতি দেখতে নগর ভবনের বিপরতে ওসমানী উদ্যান গেটে পার্কের ভিতরে ঢুকতে চাইলে নিরাপত্তা প্রহরী বাধা দেন। তিনি জানান, সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি ছাড়া ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। পরে ডিএসসিসির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় টেলিফোনে বলে দিলে ওই নিরাপত্তা রক্ষী জানান, ভেতর থেকে অনুমতি আনতে হবে। প্রায় আধা ঘণ্টা পর তিনি এসে জানান, ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকনের লিখিত অনুমতি ছাড়া পার্কের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না।

তবে টিনের ফাঁক দিয়ে দেখা গেছে, পার্কের ভেতরে বালি স্তুপ করে রাখা হয়েছে। ভেতরে ঘাস, লতাপাতা বড় হয়ে আছে। পার্কে কর্মরতদের জন্য অস্থায়ী ঘর তৈরি করে রাখা হয়েছে। তবে কোনো উন্নয়ন বা সংস্কার কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি।

পার্কের পাশে আব্দুর রহমান নামে এক চা বিক্রেতা জানান, কাউকে ভেতরে যেতে দেওয়া হয় না। কেন যেতে হয় না তা কেউ জানে না।

পার্কের সামনে দিয়ে বঙ্গবাজার গুলিস্তান যাচ্ছিলেন পথচারি সুমন। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে পার্ক বন্ধ। শুনতেছি চালু হবে। কিন্তু কবে হবে তা বোঝার উপায় নেই। বাহির থেকে ভেতর দেখাও যায় না।’

সুমনের সঙ্গে থাকা আরেক পথচারি মাহিদুল হাসতে হাসতে বলেন, ‘মোড়ক উন্মোচনের আগে তারা কাউকে দেখাতে চায় না মনে হয়। একেবারে মোড়ক উন্মোচন হলেই দেখবেন। ’

সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হবে এই পার্কের। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে পার্কটি খুলে দেওয়া হবে।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, যে গতিতে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে তাতে ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের কাজ এ গিয়ে চলছে। শেষ হলে নতুন একটি পার্ক পাবে নগরবাসী। আমাদের আয়োজন মানুষের রাগ, গোস্বা কমাতে সাহায্য করবে বলে আশা রাখি। ’

উল্লেখ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক লে. জে. এম এ জি ওসমানির নামে নামকরণ করা এই পার্কে রয়েছে, সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রধান সেনাপতি মীর জুমলার কামান, লেক, স্বাধীনতা স্মৃতি স্তম্ভ, স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতিটি সেক্টরের ম্যাপ, মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব ইত্যাদি।

পার্কটি সংস্কারের আগে এটি মাদকসেবীদের আখড়া, ভবঘুরে মানুষের আশ্রয় হিসেবে পরিচিত ছিল। এ কারণে খুব প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ ওই পার্কে প্রবেশ করতেন না। ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি গোস্বা নিবারণী পার্কের কাজের উদ্বোধন করে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন।

 

ঢাকা/নূর/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়