ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আশাবাদী সংগ্রামী মানুষের গল্পকার

রুহুল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০১, ৩ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আশাবাদী সংগ্রামী মানুষের গল্পকার

রুহুল আমিন : আলাউদ্দিন আল আজাদ  বাংলাদেশের খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কবি, নাট্যকার, গবেষক ও অধ্যাপক।

আলাউদ্দিন আল আজাদ শাণিত ভাষার লেখক ছিলেন। ছিলেন বাস্তব জীবনের রূপকার। বাস্তবতার রূপ পরিগ্রহ করেছে তার ভাষা নির্মাণে। প্রধানত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের রূপকার ছিলেন তিনি।আশাবাদী সংগ্রামী মনোভাব তার রচনার বৈশিষ্ট্য। নাগরিক জীবনের বিকার উপস্থাপনেও ছিলেন আগ্রহী।

বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মীও ছিলেন। তার সাড়া জাগানো প্রথম উপন্যাস ‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ ১৯৬০ সালে প্রকাশ হয়েছিল।

আলাউদ্দিন আল আজাদ ২০০৯ সালের ৩ জুলাই রাজধানী ঢাকার উত্তরায় নিজ বাসভবন রত্নদ্বীপে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। দেশবরেণ্য লেখককে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আলাউদ্দিন আল আজাদ ১৯৩২ সালের  ৬ মে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার রামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম গাজী আব্দুস সোবহান ও মায়ের নাম  মোসাম্মাৎ আমেনা খাতুন।

তিনি ১৯৪৭ সালে রায়পুরার নারায়ণপুর শরাফতউল্লাহ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। ১৯৪৯ সালে ইন্টারমিডিয়েট কলেজ  থেকে মানবিক বিভাগ থেকে আইএ পাস করেন। পরে ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগ থেকে অনার্স ও ১৯৫৪ সালে মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এরপর তিনি সরকারি কলেজের অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত হন।

১৯৫৫ সালে নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজে, ১৯৫৬-৬১ সাল পর্যন্ত ঢাকা জগন্নাথ কলেজে, ১৯৬২-৬৪ সাল পর্যন্ত সিলেট এমসি কলেজে  এবং ১৯৬৪-৬৭ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ  অধ্যাপনা করেন তিনি। আর ১৯৭৪-৭৫ সালে এক বছর তিনি ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।

পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। পেশাগত জীবনে মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাসে সংস্কৃতি উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিব, সংস্কৃতিবিষয়ক বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭০ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ঈশ্বরগুপ্তের জীবন ও কবিতা বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : ছোটগল্প-জেগে আছি ১৯৫০, ধানকন্যা ১৯৫১, জীবন জমিন ১৯৮৮, নির্বাচিত গল্প ১৯৮৫, মনোনীত গল্প ১৯৮৭, শ্রেষ্ঠগল্প ১৯৮৭ এবং ১৯৯৯, শ্রেষ্ঠ ছোটগল্প ১৯৯৯।

উপন্যাসগুলো হলো-    তেইশ নম্বর তৈলচিত্র (১৯৬০),    শীতের শেষরাত বসন্তের প্রথম দিন (১৯৬২),   কর্ণফুলী (১৯৬২),   ক্ষুধা ও আশা (১৯৬৪),   খসড়া কাগজ (১৯৮৬),   শ্যাম ছায়ার সংবাদ (১৯৮৬),   জ্যোৎস্নার অজানা জীবন (১৯৮৬),   যেখানে দাঁড়িয়ে আছি (১৯৮৬),  স্বাগতম ভালোবাসা (১৯৯০),  অপর যোদ্ধারা (১৯৯২),  পুরানা পল্টন (১৯৯২),  অন্তরীক্ষে বৃক্ষরাজি (১৯৯২),  প্রিয় প্রিন্স (১৯৯৫),  ক্যাম্পাস (১৯৯৪),  অনূদিত অন্ধকার (১৯৯১), স্বপ্নশীলা (১৯৯২),  কালো জ্যোৎস্নায় চন্দ্রমল্লিকা (১৯৯৬) ও বিশৃঙ্খলা (১৯৯৭)।

কবিতা : মানচিত্র (১৯৬১), ভোরের নদীর মোহনায় জাগরণ (১৯৬২), সূর্য জ্বালার সোপান (১৯৬৫), লেলিহান পান্ডুলিপি (১৯৭৫), নিখোঁজ সনেটগুচ্ছ (১৯৮৩), এ্যাসেস এ্যান্ড স্পার্কস (১৯৮৪), সাজঘর (১৯৯০), চোখ (১৯৯৬),

নাটক- ইহুদির মেয়ে, রঙ্গিন মুদ্রারাক্ষস, এহুদের মেয়ে, মরোক্কোর জাদুকর, ধন্যবাদ, মায়াবী প্রহর ও  সংবাদ শেষাংশ।

জীবনীগ্রন্থ : আজিতকুমার গুহ (১৯৮৯), মুজফ্ফর আহমদ (১৯৯০), হামিদুর রহমান (১৯৯২), রশিদ চৌধুরী (১৯৯৪)। শিশু সাহিত্য : উপন্যাস-জলহস্তী (১৯৮২), রসগোল্লা জিন্দাবাদ (১৯৯৪), জন্মভূমি (১৯৯৯)। কিশোর সমগ্র (২০০০)। স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর লেখা বই - ফেরারী ডায়েরী (১৯৭৮)

তিনি বেশকিছু পুরস্কারও পেয়েছেন। সেগুলো হলো- বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৪), ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬৫), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৭৭), আবুল কালাম শামসুদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩),   আবুল মনসুর আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৮৫), রংধনু পুরস্কার (১৯৮৫), অলক্তা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), একুশে পদক (১৯৮৬), শেরে বাংলা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নাট্যসভা ব্যক্তিত্য পুরস্কার (১৯৮৯), কথক একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৯)ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বর্ণ পদক (১৯৯৪)।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ জুলাই ২০১৭/রুহুল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়