ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ই-কমার্স দিবস ও সম্ভাবনা

সালাউদ্দিন আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ৭ এপ্রিল ২০২১  
ই-কমার্স দিবস ও সম্ভাবনা

করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দেশে নতুন করে লকডাউন শুরু হয়েছে৷ সামনে বাঙালির প্রাণের উৎসব ‘পহেলা বৈশাখ’-কে কেন্দ্র করে শপিংমলের দোকানিদের ছিল অনেক পরিকল্পনা। দেশব্যাপী যখন লকডাউন তখন সাধারণ মানুষের চোখে দুশ্চিন্তার ভাজ। কিন্তু অনেক মানুষই এখন ই-কমার্সের মাধ্যমে কেনাকাটা করছে। বর্তমানে অনলাইনে কেনাকাটায় সাধারণ মানুষের মাঝে যেমন এসেছে স্বস্তি, তেমনি তৈরি হয়েছে বিশ্বাসের জায়গা। অনলাইনে গত দুইদিনে কেনাকাটার হার অনেকটা বেড়েছে।

ই-কমার্স মূলত ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা বেচাকেনা। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।  ৭ এপ্রিল ই-কমার্স দিবস। ২০১৪ সালে দেশে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির যাত্রা শুরু হয় ইক্যাবের (ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সাবেক প্রতিষ্ঠাতা রাজীব আহমেদ স্যারের হাত ধরে। ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছরই বাংলাদেশে ই-কমার্স দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি এখন সক্রিয়ভাবে মানুষের কাছে আস্থার জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। বিশেষ করে ২০২০ সালে করোনাকালীন ই-কমার্স একমাত্র নির্ভরযোগ্য নিদর্শন হয়ে দাঁড়ায়। এখন প্রতিদিন এক লাখ ৭০ হাজার ডেলিভারি হচ্ছে ই-কমার্সে। করোনার আগে এই সংখ্যা ছিল এক লাখের মধ্যে। ক্রেতারাও বলছেন, মাঝে কয়েক মাস অনলাইনে কেনাকাটা না করলেও গত দুদিনে নিত্যপণ্যের জন্য তারা ই-কমার্স সাইটের দিকে ঝুঁকেছেন।

ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে তরুণদের সংখ্যা যেমন চোখে পড়ার মতো, তেমনি এ সেক্টরে নারীদের অগ্রগতিও দেখা গিয়েছে। দেশের প্রতিটি অঞ্চল এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক গৃহবধূরাও এখন ই-কমার্সে নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে মেলে ধরছেন। যা দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ই-কমার্স দিবসে এমন তিনজন নারী উদোক্তার কথা জানবো।

ব্যারিস্টার রহিমা হক (প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, আইন সেবা)
বর্তমানে ব্যবসা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ই-কমার্স একটি বিশাল সম্ভাবনাময় খাত। বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতকে টেকসই ও সুপ্রতিষ্ঠিত করতে ই-ক্যাবের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা রাজীব আহমেদ ২০১৫ সালে ই-কমার্স দিবস পালনের উদ্যোগ নেন। সে বছর থেকে ৭ এপ্রিল ই-কমার্স দিবস পালিত হচ্ছে। বর্তমানে ই-কমার্স খাতে প্রবৃদ্ধির হারের বৃদ্ধি বেশ লক্ষণীয়।

দেশের তরুণ প্রজন্মকে নতুন করে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে সংগ্রাম করার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে ই-কমার্স।  পূঁজির অপ্রতুল্যতা ও সীমিত চাকরির সুযোগ যখন তরুন প্রজন্মের মধ্যে হতাশার জন্ম দিচ্ছিলো, তখন নতুন করে বাঁচার ক্ষেত্র তৈরি করেছে ই-কমার্স। ই-কমার্স খাত যেমন ব্যবসার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করেছে, তেমনি বৃদ্ধি করেছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। বৈশ্বিক মহামারিতে যখন জনজীবন স্থবির হয়ে গিয়েছিলো, তখন অর্থনীতির চাকা চালু রাখতে ই-কমার্স প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। ই-কমার্স খাতে উদ্যোক্তা হওয়ার কারণে অনেকে চাকরি হারিয়েও হতাশা থেকে উঠে এসেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে শুরু করে জীবনরক্ষার ওষুধ পর্যন্ত মানুষ এখন ঘরে বসেই কিনতে পারছে। 

ই-কমার্স নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তিতে বিশাল অবদান রাখছে। যেখানে আগে নারীরা সংসারের দায়িত্বের কারণে কর্মজীবন থেকে ঝরে পরতো, সেখানে নিজেকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে পারছেন তারা। নিজের সংসারে সময় দেওয়ার পাশাপাশি নিজেকে স্বাবলম্বী করতে কাজ করতে পারছেন।

২০১৯ সাল থেকে দেশী পণ্য ই-কমার্সে নতুন মাত্রাযুক্ত করেছে। দেশী পণ্যের বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আগে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। দেশের বিখ্যাত পণ্যগুলো নিজস্ব পরিধিতে সীমাবদ্ধ ছিল। ২০১৯ সালে রাজীব আহমেদ দেশী পণ্যকে ই-কমার্সে যুক্ত করার উদ্যোগ নেন। তার নিরলস পরিশ্রমের কারণে এখন দেশের নানান প্রান্ত থেকে দেশী পণ্য নিয়ে উদ্যোক্তারা উঠে আসছেন। আমরা এখন চাইলেই বগুড়ার দই ঢাকায় বসে পাচ্ছি।  শীতলপাটি এখন আর বিলুপ্তপ্রায় পণ্য নয়। এসব কিছু সম্ভব হয়েছে রাজীব আহমেদের পরিশ্রম ও পরিকল্পনার কারণে। এখন উদ্যোক্তারা যেমন নতুন করে স্বপ্ন দেখতে পারছে, তেমনি ভাগ্যের চাকা ঘুরছে কারিগরদেরও।  ফেসবুক গ্রুপ ‘উই’র (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) অবদানও প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে।

তবে টেকসই ই-কমার্স উদ্যোক্তা শ্রেণি গড়তে প্রয়োজন প্রশিক্ষণ, অর্থনৈতিক সহায়তা, পারিবারিক ও সামাজিক সাপোর্ট। ডেলিভারি চ্যানেলকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিতে হবে। উদ্যোগতা বান্ধব সমাজ তৈরি করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে একযোগে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে ই-কমার্সকে আরও শক্তিশালী করতে।

আরিফা খাতুন (স্বত্বাধিকারী, আফাফ ক্রিয়েশনস)
আজ ৭ এপ্রিল ই-কমার্স দিবস। ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর এই দিবসটি পালন করা হয়। বর্তমানে ই-কমার্স খুব আলোচিত একটি বিষয়। ই-কমার্সের মাধ্যমে বর্তমানে কেনাবেচা করা যাচ্ছে ঘরে বসেই। এক্ষেত্রে অনেক উদ্যোক্তা যেমন তৈরি হচ্ছে, তেমনি ক্রেতারাও খুব সহজে ঘরে বসে তার চাহিদা মতো পণ্য কিনতে পারছেন।

বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে আমাদের ই-কমার্সের আওতায় আসতেই হবে। এখনি সময় ই-কমার্সের সম্ভাবনাকে তুলে ধরার। বাংলাদেশে অনেক সম্ভাবনাময় পণ্য আছে যা ই-কমার্সের মাধ্যমে দেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। তাই আমাদের দেশের মানুষকে অনলাইন কেনাকাটায় আগ্রহী ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ৭ এপ্রিলকে ই-কমার্স দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

মেহজাবীন রাখী (স্বত্বাধিকারী, রূপ’স হ্যাভেন)
সবাইকে ই-কমার্স দিবসের শুভেচ্ছা।  ই-কমার্স খুব সম্ভাবনাময় একটি খাত এবং এটির ব্যপ্তি বিশ্বজুড়ে। ই-কমার্স একটি ব্যবসা তাই এখানে লাভের সঙ্গে লোকসানের সম্ভাবনাও রয়েছে সমানভাবে। এখাতে কাজ করতে আসার আগে চিন্তা-ভাবনা করে আসা ভালো। দেশের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি কয়েক বছর আগে এতো জনপ্রিয় ও সফল ছিল না বর্তমানে যতটা এখন আছে। বিশেষত করোনা পরিস্থিতিতে ই-কমার্সের সুবিধা ভালোভাবে উপলব্ধি করা গিয়েছে। ই-কমার্স খাতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও এর সেবা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলে উপকৃত হবে অনেকে। ই-কমার্স দিবস ২০১৫ সালে ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাজিব আহমেদ ভাইয়ার নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে এবং দেশের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে তার অবদান সবচেয়ে বেশি; শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা ভাইয়াকে। ই-কমার্স দিবস শুভ হোক।

লেখক : স্বত্বাধিকারী, বিডিম্যানগ্রোভ ডটকম।

ঢাকা/ সিনথিয়া

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়