ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ইটভাটা বন্ধ করে ফুল চাষ

জুনাইদ আল হাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৪, ১৫ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইটভাটা বন্ধ করে ফুল চাষ

জুনাইদ আল হাবিব : বাংলার প্রকৃতি চিরকাল চিরসবুজ। সবুজ যেন জীবনেরই আরেক রঙ। কিন্তু আধুনিক মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশে প্রকৃতি হারাতে বসেছে তার আপন রঙ। সে আজ মলিন, ধূসর। সবুজ প্রকৃতি যাদের টিকিয়ে রাখে, তারাই আজ সেই সবুজকে ধূসর করে দিচ্ছে তাদেরই ভোগ বিলাসের কারণে। যেমন ধরুন, ইটভাটার কথা। দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ইটভাটার সংখ্যা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাটার সংখ্যা এতোটাই বেড়েছে যে, মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়া কষ্টদায়ক হয়ে উঠেছে। সেই এলাকার পরিবেশের চিত্র বিবর্ণ, রুক্ষ। প্রকৃতি প্রাণ হারিয়ে যেন মরতে বসেছে!  

যে স্থানগুলোতে মানুষ সোচ্চার, পরিবেশবাদীরা সোচ্চার সেখানে ভাটাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। দেশে এ নিয়ে আইনও রয়েছে। কিন্তু সবসময় তা কার্যকর হতে দেখা যায় না। যেখানে কার্যকর হয় সেখানে বন্ধ করে দেয়া হয় ইটভাটা। ফলে সেখানকার প্রকৃতিতে প্রাণ ফিরে আসে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের পিয়ারাপুর গ্রাম, একই ইউনিয়নের সুতার গোপ্টা এবং কমলনগরের তোরাবগঞ্জ এলাকায় বন্ধ হওয়া ইটভাটাই এর উদাহরণ। ইটভাটাগুলো বন্ধ হবার পর সেখানকার পরিবেশে ফিরে এসেছে প্রকৃতির সেই চিরচেনা সবুজ! এখন সেখানে গেলে কেউ হয়তো করতে পারবেন না, কিছুদিন আগেও সেখানে পরিবেশ কতটা বিপজ্জনক, নোংরা ছিল। কিন্তু এখন সেখানে প্রকৃতির মাঝে ফিরে এসেছে সতেজতা।  

লক্ষ্মীপুর-রামগতি আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত পিয়ারাপুর গ্রামের ইটভাটা। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার পরিবেশে অনেকটা বদলে গেছে। যেখানে ইটভাটা ছিল, সেখানে এখন ফুল চাষ হচ্ছে। যা মানুষকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে। ফুল চাষ করে বেশ লাভবানও হচ্ছেন উদ্যোক্তা। ইটভাটাগুলো যখন চালু ছিল, তখন মানুষের বসাবস ছিল বেশ কষ্টের। কারণ, ভাটার কালো ধোঁয়া মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসে প্রভাব ফেলত। এলাকার মানুষের শ্বাস নিতে কষ্ট হতো। শিশু ও বৃদ্ধদের কষ্ট হতো আরো বেশি। তারা বায়ুবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতো। এখনো এই জেলায় অসংখ্য অবৈধ ইটভাটা আছে, যা মানুষের জীবনযাপনকে বেশ কষ্টদায়ক করে তুলেছে।  

জেলা সদরের তেওয়ারীগঞ্জ, ভবানীগঞ্জ, কমলনগরের তোরাবগঞ্জ,  হাজিরহাট এবং রামগতি, রায়পুর ও রামগঞ্জের বেশ কিছু এলাকায় ইটভাটার সংখ্যা এতটাই বেশি যে, সেখানে মানুষজনকে স্বাস্থ্যঝুঁকির  মুখে পড়তে হচ্ছে। অবৈধভাবে নির্মাণ হওয়া এসব ইটভাটা মানুষের জীবনযাত্রার মান ক্ষতিগ্রস্ত করলেও এর কোনো ক্ষতিপূরণ মিলছে না। অবৈধ ইটভাটা জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব রাখছে। যা বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও চিন্তার বড় একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া অন্যতম একটি সমাধান। দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির জন্য অবশ্যই ইটভাটার প্রয়োজন আছে। তবে এক্ষেত্রে সচেতনমহলের প্রত্যাশা, পরিবেশবান্ধব ইটভাটা নির্মাণ।

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মাহবুবে এলাহি সানি বলেন, ‘ইটভাটার ধোঁয়ায় অনেক বিষাক্ত কেমিক্যাল বিদ্যমান। যা আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মকভাবে প্রভাব পড়ে। পরিবেশ তো ধ্বংস হচ্ছেই, সঙ্গে আমরাও। ইটভাটা বন্ধ নয়, বরং ইটভাটা চালুর জন্য যে নিয়মগুলো রয়েছে তা পালনই হতে পারে অন্যতম সমাধান। যেমন, কয়লার বদলে কাঁঠ পোড়ানো বন্ধ করতে হবে। চিমনি অনেক উঁচু রাখতে হবে। এতে ধোঁয়া সরাসরি পরিবেশে আঘাত করতে পারবে না। তাহলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের নিরাপত্তা হতে পারে। না হলে আমরা বাসযোগ্য ঠিকানা হারাবো।’
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জুন ২০১৯/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়