ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ঈদ পর্যটকের অপেক্ষায় সাতছড়ি ও রেমা-কালেঙ্গা

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৬ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঈদ পর্যটকের অপেক্ষায় সাতছড়ি ও রেমা-কালেঙ্গা

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের অভ্যন্তর

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ: পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে লক্ষাধিক পর্যটক বরণে প্রস্তুত প্রকৃতির সৌন্দর্য মন্ডিত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও রেমা-কালেঙ্গার অভয়ারণ্য। ঈদে আগন্তুকদের জন্য কর্তৃপক্ষ ঢেলে সাজিয়েছেন এসব স্থান, নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান এমনিতেই এখন বর্ষাস্নাত হয়ে অপরূপ । বনের ভেতরে ৭টি ছড়া রয়েছে বলেই এর নাম হয়েছিল সাতছড়ি। বনের ভেতরে এঁকেবেঁকে চলেছে বালুময় ছড়াগুলো।

এবার ঈদুল আজহায় সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে দর্শনার্থীদের আগমণ বাড়াতে বন বিভাগ, প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ও সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি, ক্রেল এর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।

দর্শনার্থীদের সহজেই সুপেয় পানি, টয়লেট সুবিধাসহ নিরাপত্তা সুবিধা নিশ্চিতের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও রয়েছে তৎপর। অনায়াসেই ভ্রমণ পিপাসুরা সাতছড়ি ও  রেমা-কালেঙ্গার প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়িয়ে যেতে পারেন।

ঢাকা ও সিলেট থেকে মাত্র ৩ থেকে সাড়ে তিন ঘন্টার পথ। জগদীশপুর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এলাকায় নেমে মাত্র ১০ মিনিটে অথবা শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজে নেমে সেখান থেকে ৫০ মিনিটে যেতে পারেন সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে। তেলিয়াপাড়া রেল গেইট পার হলেই চোখে পড়বে যেন নিপুণ শিল্পীর হাতে গড়া সবুজ চা বাগান। তবে রেমা-কালেঙ্গা যেতে সময় আরো বেশি লাগবে।

সাতছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন জানান, এ বছর জাতীয় উদ্যানে দর্শনার্থীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নানা রকমের দুর্লভ গাছ পালাসহ হনুমান, বানর, মায়া হরিণ, পাখি চোখে পড়বে। ইতোমধ্যে দূরবর্তী পর্যটকদের জন্য উদ্যানে রাত্রী যাপনে আবাসিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি জানান, সাতছড়িতে দিন দিন পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।  যেখানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পর্যটকদের কাছে টিকিট বিক্রি করে প্রায় ৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা এসেছিল। সেখানে  ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে টিকিট বিক্রি হয়েছে প্রায় ১১ লাখ ১৬ হাজার টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে টিকিট বিক্রির টার্গেট নেওয়া হয়েছে ১৫ লাখ টাকার।

বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দে মনে করছেন, এবার সাতছড়িতে পর্যটক সমাগম বেশি হবে। কারণ এখানে যাতায়াত সহজ। আর রেমা-কালেঙ্গায় যেতে সময় একটু বেশি লাগবে। তারপরও সেখানে অনেক পর্যটকের সমাগম হবে বলে ধারণা তার।

তিনি বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে এবার সাতছড়ি, রেমা-কালেঙ্গা নবরুপে সেজেছে। সাতছড়িতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এখানে পর্যটকের ঢল নামবে বলে আশাবাদী আমরা।’

কালেঙ্গা রেঞ্জ কর্মকর্তা নুরুজ্জমান মিয়া জানান, রেমা-কালেঙ্গার অভয়ারণ্য মূলত তরফ পাহাড় সংরক্ষিত বনভূমির একটি অংশ। যা দেশের প্রাকৃতিক পার্বত্য বনভূমির মধ্যে সর্ববৃহৎ। অভয়ারণ্যটি এ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ও রানীগাও ইউনিয়নে অবস্থিত। এ বনাঞ্চলটি ঢাকা থেকে আনুমানিক ১৪০ কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে এবং সিলেট থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থিত। বনাঞ্চলটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বরাবর বিস্তৃত।

তিনি বলেন, ‘অপেক্ষাকৃত দুর্গম স্থানে অবস্থিত বলে এই সমৃদ্ধ মিশ্র চিরহরিৎ বনটি এখনো টিকে আছে। অভয়ারণ্যটির আশেপাশে রয়েছে ৩টি চা-বাগান। এটি বিভিন্ন বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও পশুপাখির আবাসস্থল এবং বিশেষ করে পাখি দর্শনে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থান।’

পূর্ববতী জরিপ মতে, এখানে ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, ৭ প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। আদিবাসী সম্প্রদায় ত্রিপুরা, সাঁওতাল ও উড়ং এই বনভূমির আশেপাশে এবং অভ্যন্তরে বসবাস করছে। বিরল প্রজাতির বাঘের বিচরণও রয়েছে এ জঙ্গলে। জঙ্গলটি পরিদর্শনে যে কেউ মুগ্ধ হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/২৬ আগস্ট ২০১৭/মামুন চৌধুরী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়