ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঈদ ফ্যাশনে নতুনত্ব

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪৪, ২৮ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঈদ ফ্যাশনে নতুনত্ব

রঙ বাংলাদেশ

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর : ঈদ আবারো সমাগত। এবার কোরবানির ঈদ। এই উৎসবের মূল সুর ত্যাগ। তবুও ঈদ তো আর পুরোনো পোশাকে হয় না। তাই নতুন পোশাকের ক্ষেত্রে জেনে নিন, ঈদ ফ্যাশনে কি ধরনের পোশাক এসেছে বাজারে।

শাড়ি

ঈদের শাড়িতে থাকা চাই আভিজাত্য ও নতুনত্বের ছোঁয়া। সেদিক থেকে মসলিন, বেনারসি, ঢাকাই জামদানি এবং কাতান শাড়িই রয়েছে ক্রেতাদের প্রথম পছন্দে। কমেছে পাথর, চুমকি, লেস বসানো জাঁকজমক শাড়ির চলটা। ঈদকে সামনে রেখে ঐতিহ্যবাহী এই শাড়িগুলোর উপকরণ, রঙ এবং নকশাতেও যোগ হয়েছে নানান বৈচিত্র্য। শাড়ির রঙে এবার প্রাধান্য পেয়েছে গাঢ় নীল, সবুজ, মেরুন, গোলাপি ইত্যাদি। কসমস, ফুলকলি, বালুচরি, কাঞ্জিভরমসহ আরো বৈচিত্র্যময় নকশার কাতান এবং বেনারসি শাড়িরও রয়েছে। এসব শাড়ির বুননে থাকছে কলকি, ফুল আর বরফি নকশার জমকালো কাজ। কোনো কোনো শাড়িতে তিন রঙের ব্যবহারে থাকছে মিনার কাজ, চওড়া জরি পাড়ের নকশা।

শাড়ির আঁচল ও কুঁচিতে এবার এসেছে পরিবর্তন। কাতান বা অ্যান্ডি সিল্কের শাড়ির আঁচল বা কুঁচিতে ব্যবহার করা হচ্ছে মসলিন। ১২ হাত শাড়িতেই আঁচলের নকশাটাকে ছোট রেখে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জমকালো কাজ। যারা সব সময় শাড়ি পরতে অভ্যস্ত নন, তারাও ঈদের দিন স্বচ্ছন্দে পরতে পারেন আঁচল ছোট এমন নকশার শাড়ি। বৈচিত্র্য থাকছে কুঁচির নকশাতেও। কুঁচিতে ছাপা নকশা তো থাকছেই, এছাড়া দুই রঙা শাড়ির পাড়ের ওপর থেকে কুঁচির সামনে দিকের অর্ধেক পর্যন্ত বুনটে থাকছে লতাপাড়ের নকশা। আর শাড়ির সঙ্গে মানিয়ে এবারে স্লিভলেস ব্লাউজের চলটাই রয়েছে বেশি।

সালোয়ার-কামিজ

অন্যান্য পোশাকের পরিবর্তে বরাবরের মতো এবারো ঈদে রমণীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বাহারি রঙের সালোয়ার-কামিজ। পাঞ্জাবি গলা এবং হাইনেকের কামিজের প্রতিও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে অনেকের। হাতা কাটা, লম্বা হাতা এবং কনুই পর্যন্ত হাতা সহ উজ্জ্বল নকশায় ঢিলেঢালা আর আরামদায়ক করে তৈরি করা এসব কামিজগুলোকে ফ্যাশনের ধারা বজায় রেখে করা হয়েছে একটু লম্বা। ফ্যাশনের পরিবর্তনের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিটি ফ্যাশন হাউসে পরিবর্তন আনা হয়েছে কুর্তা ও কামিজের কাটিং প্যাটার্নে। কিছু কামিজের নিচে, হাতার শেষে চওড়া বর্ডারে বসানো হয়েছে সাটিন বা কাতানের পাড়। আর এসবের মাঝে দেখা যাবে ফতুয়ার মতো এবং বুকচেরা কামিজগুলোও।

অফ শোল্ডার বা কাঁধ থেকে একটু নামানো সালোয়ার-কামিজসহ হাতায় এবার ঢোলা কাট বা চোস্তের মতো কুঁচি কিংবা বাটন দেওয়া থাকবে। গরমের কারণে আরামের বিষয়টাও থাকছে উপকরণে। তবে এবারের ট্রেন্ডে ঘের বেশি দেওয়া ফ্রক স্টাইলের কামিজের চাহিদা রয়েছে সবচেয়ে বেশি। কামিজের ডিজাইনের সঙ্গে মিলিয়ে রয়েছে বাহারি সব সালোয়ার এবং ওড়নাও।

গাউন

এবারের ঈদে কামিজের পাশাপাশি গাউনের চাহিদাটাও কম না। নীলের বিভিন্ন শেড, সাদা, কালো, গোলাপী, বেগুনি রঙের কাপড়ের ওপর ভরাট এবং হালকা কাজ করা গাউনগুলোই বেশি রয়েছে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায়। বিদেশি ধাচের এই পোশাকগুলোতে বৃষ্টির গুমোট আবহাওয়া কাটাতে এগিয়ে এসেছে উজ্জ্বল রঙগুলো। এছাড়া প্রিন্টের পরিবর্তে হাতের কাজই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে নতুন ডিজাইনের গাউনগুলোতে।

এ লাইন, হেম লাইনে এসে সামনে-পেছনে উঁচু-নিচু ও দুই পাশে ঝুলে গেছে, বডি হাগিং, হাফ বডি স্টাইল, এক ছাঁটের গাউন ইত্যাদি কাট প্রাধান্য পাচ্ছে ক্রেতাদের পছন্দে। তবে শিফন, জর্জেট, নেট, নরম ক্রেপ সিল্ক, লিনেনের তৈরি গাউনগুলোই জমিয়ে রেখেছে এবারের ঈদ বাজার। এছাড়া মিক্সড প্যাটার্নে ও ট্রপিক্যাল মোটিফে তৈরি শিফনের মেঝে ছোঁয়া গাউনও রয়েছে কিছু ফ্যাশন হাউজে। তবে ক্রেতাদের নজর সবথেকে বেশি সমস্ত মেঝে জুড়ে পুরু কাজ করা বাহুবালি গাউনে। বাজারে আরো রয়েছে ক্যাপগাউন, ওয়েস্টার্ন গাউন, ওড়না অ্যাডজাস্ট জরজেট গাউন, ভায়োলেট, সোয়াগাত, গ্লামারিয়র, আশীর্বাদ, নাগীন এবং এলটি। তবে এগুলোর মধ্যে বেশি চলছে লাসা এবং কেপ গাউন।

পালাজ্জো

ফ্যাশনে মেয়েদের পোশাকে বৈচিত্র এবং নতুনত্ব সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই পাশ্চাত্য ফ্যাশনের অনুকরণে আবারো এসেছে ঢোলা প্যান্টের চল, একটু অন্যভাবে পালাজ্জো নামে। শর্ট কামিজ, মিড লং বা লং কামিজ দিয়ে পরার জন্য পালাজ্জো রয়েছে নারীদের প্রথম পছন্দে। এই ঈদে ডিজাইন হিসেবে কোমরে কুঁচিওয়ালা বা কুঁচিবিহীন দুই ধরনের পালাজ্জোই রয়েছে বাজারে। অনেকে পালাজ্জো পরতে চাইলেও লং কামিজ পরতে চায় না। তাদের জন্য এবার পালাজ্জোর ধরন ও কাটেও এসেছে ভিন্নতা।

পালাজ্জোতে এবার প্রিন্টের কাপড়ও ব্যবহার করা হচ্ছে। এক রঙয়ের কিংবা প্রিন্টের পালাজ্জোর ওপর হাতের কাজ, মেশিন এমব্রয়ডারিসহ নানা ধরনের কাজ যোগ করে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে এবারের ঈদের ট্রেন্ডে। পেনসিল প্যান্ট, সিগারেট প্যান্ট, চাপা ও লম্বায় ছোট কাটের পালাজ্জো, স্কিনি জিনস, স্কিনি ক্যাজ্যুয়াল প্যান্ট, স্কার্ট প্যান্টের সমারোহ। চাপা কিংবা গোড়ালি থেকে একটু উঁচু প্যান্টের নকশায় এসেছে পরিবর্তন। আগে কয়েকটি রঙ থাকলেও এখন মেয়েদের প্যান্টে নীল, আসমানি, কালো, লাল, গোলাপি, সবুজ, বেগুনিসহ নানা রকম রঙ দেখা যাবে।

গহনা

ঈদ উপলক্ষে এবার গহনায় প্রাধান্য পেয়েছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর ব্যবহৃত গহনার ডিজাইন। যেগুলো মূলতো বেশ বড় এবং লম্বাটে। এছাড়া নতুন আকর্ষণ হচ্ছে মারমা সম্প্রদায়ের পয়সার মালা। দুটি ভিন্ন ডিজাইনে তৈরি এ মালা গোল্ড ও সিলভার কালারে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া মনিপুরি ও জয়পুরি কানের দুল এবং রাজস্থানি হাতের বালা, দড়ি চেইনসহ প্রায় ২০টি নকশার গহনা পাওয়া যাবে এবারের ঈদে।

লম্বা কামিজের সঙ্গী হচ্ছে লম্বা লম্বা কানের দুল। এছাড়া সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে ব্রাসো, ইমিটেশন, কাঠ, কড়ি, পুঁতি, সুতা, শেল ও সিরামিক। বিভিন্ন উপাদানে তৈরি ফ্যাশন-গহনায় থাকবে রঙের বৈচিত্র্য। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, মূলত আদিবাসী রঙ মাথায় রেখেই সবাই এ ধরনের গহনার নকশা করছেন। তবে রঙ বা নকশা যা-ই হোক না কেন, এই গহনায়ও প্রাধান্য পাবে বড় এবং লম্বাটে আকৃতি।

পাঞ্জাবি

ছেলেদের কাছে ঈদের পোশাক মানেই নতুন ধাচের পাঞ্জাবি। বাহারি রঙ, প্রিন্ট অথবা হাতের কাজ করা এক একটি পাঞ্জাবি প্রকাশ করে আলাদা আলাদা স্টাইল। মেয়েদের তুলনায় এবারে ছেলেদের পোশাকে তেমন বৈচিত্র্য ও নত্বনত্ব চোখে না পড়লেও একেবারে পিছিয়ে নেই ফ্যাশন হাউজগুলো। জুট কটন, কাতান, জয়শ্রী সিল্ক কাপড়ের জমকালো পাঞ্জাবির সংগ্রহ রয়েছে এবারের ট্রেন্ডে। ভালো চলছে সুতির পাঞ্জাবি আর কাবলি সেটও। রয়েছে বাহুবালি, সুলতান এবং পিকের মতো বাহারি সব নামও।

এবার মেরুন, সবুজ, নীল, ফিরোজা, ম্যাজেন্টা, কমলা, গোলাপিসহ নানা উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করা হয়েছে কাপড়ে। রয়েছে সাদা এবং সাদার বিভিন্ন শেড। পুরু হাতের কাজ অথবা এ্যামব্রডারির মাধ্যমে ডিজাইন করা হয়েছে পাঞ্জাবির হাতা এবং গলাতে। কিছু পাঞ্জাবিতে আবার কাঁধ থেকে ঝুলের শেষ অবধি রয়েছে হরেক রকম ডিজাইন। রয়েছে লং এবং শর্ট পাঞ্জাবিও। আর এই সবগুলোর মধ্য থেকেই আপনি বেছে নিতে পারেন আপনার পছন্দেরটি।

শিশুদের পোশাক

আয়োজনের কমতি নেই শিশুদের ঈদবাজারে। দেশি পোশাকের সঙ্গে শিশুদের জন্য আছে ওয়েস্টার্ন ডিজাইনের পোশাক। ডিজাইনে রয়েছে রঙের বৈচিত্র্যময় ব্যবহার। মেয়েদের জন্য সুতির টু-পিস, থ্রি-পিস, স্কার্ট-টপ এবং এক ছাঁটের ফ্রকের বড় সংগ্রহ এনেছে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস। তবে এবারের ঈদে মেয়েদের পোশাকের মধ্যে ক্যাপগাউন আর সারারাটাই বেশি চলছে। রয়েছে বাহুবলি-২ পোশাকও। পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের লেহেঙ্গা, সালোয়ার কামিজ এবং শাড়ি।

ছেলেদের জন্য রয়েছে চেক আর ডোরাকাটা হাফ হাতা শার্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি ও ফতুয়া। এক্ষেত্রে এবার সুতি কাপড়ের প্রাধান্য রয়েছে বেশি। গ্রামীণচেকের হাফহাতা শার্টের ওপর বিভিন্ন প্রিন্ট, লেখা, কার্টুন আর ছবির ডিজাইন। সঙ্গে রয়েছে হাফ, ফুল এবং থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। পাঞ্জাবিতে থাকবে ডিজিটাল প্রিন্ট ছাপা। সাদা পাঞ্জাবির পাশাপাশি রঙিন পাঞ্জাবিও বেশ পছন্দ ছেলে শিশুদের। তবে ঈদ উপলক্ষে এবারে রাজা সাহেব, মনীশ মালহোত্রা, যুবরাজ সহ বিভিন্ন নতুন পাঞ্জাবি এবং শেরওয়ানীতেই শিশুদের নজর বেশি।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ আগস্ট ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়