ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঈদের ছুটিতে একদিনের ট্যুর

ফেরদৌস জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ২৪ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঈদের ছুটিতে একদিনের ট্যুর

ফেরদৌস জামান : আমরা যারা রাজধানী ঢাকায় থাকি সময় ও সামর্থের অভাবে তাদের জন্য প্রকৃতির সান্নিধ্য পাওয়া বা মনোরম কোনো জায়গায় ভ্রমণ সবসময় সম্ভব হয়ে উঠে না। অধিকন্তু আমাদের অনেকেরই অজানা যে একদিনেই ভ্রমণের কত চমৎকার সব জায়গা রয়েছে।

নানাবিধ কারণে প্রিয়জন বা বন্ধু-বান্ধবসহ ভ্রমণের জন্য যখন দূরের কোনো গন্তব্যে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না তখন আপনার জন্য থাকছে নিকটস্থ কিছু ভ্রমণ গন্তব্যের বিস্তারিত।

লালসালুর বেলাই বিল : এক সাথে এত অধিক সংখ্যক লালসালু আর অন্য কোথাও সচরাচর দেখা যায় না। কখনও কখনও বিলের কোনো কোনো অংশ কেবলই লালসালুতে ভরে থাকে। গাজীপুরের চেলাই নামক নদীর সাথেই বেলাই বিলের অবস্থান। বিলের প্রধান আকর্ষণ নৌ-ভ্রমণ। সেজন্য  ইঞ্জিন চালিত বা ডিঙি নৌকা দুটোই পাওয়া যায়। পছন্দ মতো ভাড়া করা যেতে পারে একেবারে সারা দিনের জন্য। দিনের সর্বক্ষণ তো বটেই তা ছাড়া বিশেষ করে বিকেল বেলার বেলাই বিল সত্যিই অসাধারণ! মনে রাখতে হবে বেলাই বিলে নৌ-ভ্রমণের জন্য সারা দিনের খাবার সাথে নিয়ে নেওয়াই উত্তম। সেক্ষেত্রে সময় বাঁচবে আর জলের ওপর ভেসে ভেসে খাবার খাওয়ার অনুভূতিও নেওয়া যাবে। গাজীপুর ঢাকার পার্শবর্তী জেলা। সুতরাং, ঢাকার যেকোন জায়গা থেকে উঠে পরুন গাজীপুরের বাসে। সদরে নেমে টেম্পু করে যেতে হবে কানাইয়া নামক বাজারে। সামনে পরবে একটি সেতু। সেতু পার হয়েই দেখা যাবে নদীতে বাঁধা অনেক নৌকা। সারাদিনের জন্য নৌকা ভাড়া দেড় থেকে দুই হাজারের মধ্যে হয়ে যাবে। জেলার অনেক এলাকা জুড়ে বিস্তৃত বেলাই বিলে কাপাসিয়া হয়েও ভ্রমণ করা যায়।

গোলাপ স্বর্গ বা গোলাপের গ্রাম : শান্ত-স্নিগ্ধ একটি নদী বয়ে গেছে রাজধানী মিরপুর বেরিবাঁধের পাশ দিয়ে। নদী পার হয়ে ছোট্ট একটি গ্রাম। গ্রামবাংলার চিরাচরিত একটি গ্রাম হলেও তা গোলাপের বাগান দিয়ে পরিপূর্ণ। এখানে গেলে আপনার মনে হবে যেন বিশাল এক গোলাপের বাগানের মাঝ দিয়ে হাঁটছেন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গোলাপ ফুলের চাহিদার বড় অংশ এখান থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে। সরু পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখা মিলবে দুপাশে শুধু অজস্র গোলাপের বাগান। গোলাপ গ্রামে যাওয়ার জন্য প্রথমে যেতে হবে মিরপুর দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাটে। এখান থেকে সদুল্লাপুর ঘাটের উদ্দেশে আধাঘণ্টা পরপর ইঞ্জিন চালিত নৌকা ছেড়ে যায়। সময় লাগে মাত্র ৫০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। ভাড়া নেবে ৪০-৫০ টাকা। বিকল্প হিসেবে হাতে বাওয়া নৌকা রিজার্ভ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে বেশি।

 



নুহাশ পল্লী :
কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে না জানে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি প্রায় চল্লিশ বিঘা পরিমাণ জায়গার ওপর গড়ে তোলেন একটি বাগান বাড়ি, যার নাম দেন নুহাশ পল্লী। মৃত্যুর পর হুমায়ূন আহমেদ এই পল্লীতেই চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন। বর্তমানে শুটিং স্পটের পাশাপাশি তা একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। পল্লীর ভেতরে প্রবেশ করে মাঠ দিয়ে সামান্য এগিয়ে হাতের বামে শেফালি গাছের ছায়াতলে নামাজের ঘর। নামাজ ঘরের পাশেই লিচু ও জাম বাগান। এই লিচু বাগানের সুশীতল ছায়াতলেই চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। আম, জাম ও লিচুর পাশাপাশি রয়েছে বহু প্রজাতীর গাছগাছালি। আরো রয়েছে লেখকের স্মৃতি বিজড়ির অনেক কিছু। নুহাশ পল্লীতে যেতে হলে সবচেয়ে সহজ উপায় হল মহাখালী থেকে ছেড়ে যাওয়া ময়মনসিংহ গামী যে কোনো বাসে উঠে নেমে পড়তে হবে হোতাপাড়া নামক জায়গায়। জনপ্রতি ভাড়া একশ টকার বেশি হবার কথা নয়। এখান থেকে রিকশায় মাত্র বিশ মিনিটে উপস্থিত হওয়া যায় কাঙ্খিত গন্তব্যে। এখানে প্রবেশের জন্য বার বছরের অধিক বয়সিদের জন্য দুইশ টকা প্রবেশ মূ্ল্য পরিশোধ করতে হয়।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক : বিলীন প্রায় এক সময়ের বিখ্যাত ভাওয়াল জঙ্গলের একটি এলাকায় এই পার্কের অবস্থান। বিস্তৃত গজারি বৃক্ষের জঙ্গলের একটি অংশে প্রাচীর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। এশিয়ার বৃহত্তম পার্ক বলে কথিত পার্কের অভ্যন্তরে আছে পিচঢালা পথ। ঠিক তার পাশ দিয়ে ঘুরে বেড়ায় উন্মুক্ত সব প্রাণী। কাচ ঘেরা গাড়িতে করে আপনি ঘুরবেন আর সান্নিধ্য লাভ করবেন দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতীর প্রাণীর। এখানে বন্য প্রাণীরা উন্মুক্ত আর দর্শনার্থী হিসেবে আপনি বন্দি। চিড়িয়াখানার ঠিক উল্টো। দেখতে পাবেন বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, আফ্রিকান চিতাবাঘ, চিত্রল হরিণ, জলহস্তি, নীল গাই এবং দেশি-বিদেশি অনেক পশু। রয়েছে হাতির জন্য নির্মিত এক বিশাল আশ্রম। পশুপাখির পানির চাহিদা পূরণের জন্য খনন করা হয়েছে আটটি জলাধার ও দুইটি কৃত্রিম হ্রদ। এ ছাড়া রয়েছে বাটারফ্লাই পার্ক, রায়োডাইভার্সিটি পার্ক, ক্রোকডাইল পার্ক। অতিরিক্ত আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে হাতির পিঠে আরোহন করার সুব্যবস্থা। পার্ক প্রবেশ মূল হিসেবে গুণতে হবে দুইশ টাকা। এর ভেতরে রয়েছে জিরাফ ফিডিং স্পট ও পেলিকেন আইল্যান্ড। পাখিদের রাখা হয়েছে বিশাল এক জায়গায়। বহু প্রজাতীর পাখিদের কিচিরমিচির পর্যটক মনে এনে দেয় প্রশান্তি। রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, যেখানে আরোহণ করলে দেখা যায় সমস্তটা পার্ক। দর্শনার্থীদের খাওয়া দাওয়ার সুবিধার্থে রয়েছে একাধিক  রেস্টুরেন্ট। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক গাজীপুর-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে বাঘের বাজার এলাকায় অবস্থিত। যাওয়ার জন্য ধরতে হবে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী যেকোন বাস। নামতে হবে বাঘের বাজার।

পুবাইল জল জঙ্গলের কাব্য : ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা গাজীপুর পুবাইলের জল জঙ্গলের কাব্য। সৌখিন এক সাবেক বৈমানিক গড়ে তুলেছেন এই রিসোর্টটি। আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে স্বচেতনভাবেই একে বেশ খানিকটা দূরে রাখা হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের বিশেষ কোনো পরিবর্তন না ঘটিয়ে গড়ে উঠেছে জল জঙ্গলের কাব্য। এর অভ্যন্তরে রয়েছে বিশাল একটি বিল, পুকুর আর বনজঙ্গল। চাইলেই এমন পরিবেশে প্রকৃতির নিড়ের কাছে কাটিয়ে দেওয়া যায় একটি দিন। আপাত দৃষ্টিতে জনপ্রতি ১৫০০ টাকা খরচা বেশি মনে হতে পারে। এর মাঝে অন্তর্ভুক্ত সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার এবং বিকেলের নাস্তা। একদিন এক রাতের জন্য জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা। আন্ডার এজড, কাজের লোক এবং ড্রাইভারদের জন্য জনপ্রতি ৬০০ টাকা। খাবারের তালিকায় থাকে মাংস, সবজি  ভাজি, ভাত। আর নাস্তায় থাকে চিতই পিঠা, গুড়, লুচি, মুড়ি এবং চা। দুপুরের খাবারে থাকে বার রকম দেশি পদ। জল জঙ্গলের কাব্য ভ্রমণের জন্য ব্যক্তিগত গাড়িতে যাওয়া উত্তম। এ ছাড়া যারা বাসে যেতে আগ্রহী তাদের জন্য সহজ রাস্তা হল, মহাখালী থেকে নরসিংদী, ভৈরব অথবা কালিগঞ্জগামী যেকোনো বাস। নামতে হবে পুবাইল কলেজ গেট। সেখান থেকে রিকশায়  মাইল তিনেক গেলেই জল জঙ্গলের কাব্য।

 



ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান :
ব্রিটিশ ভারতের বহু সামন্তীয় রাজাদের মধ্যে অন্যতম ছিল ভাওয়াল রাজা। সম্পূর্ণ বঙ্গে এটি ছিল দ্বিতীয় বৃহত্তম জমিদারী। এই জমিদারীর সুবিশাল অংশ জুড়ে অর্থাৎ প্রায় ৭০ হাজার একর এলাকায় ছিল শুধুই জঙ্গল। গজারী বৃক্ষ প্রধান এই জঙ্গলের একটি অংশ নিয়ে গড়ে উঠেছে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। উদ্যানের মাঝে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে, যেখান থেকে এক নজরে দেখে নেওয়া যায় উদ্যানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। শিশুদের জন্য বিনোদন তথা খেলাধুলার ব্যবস্থাও রয়েছে। বৃক্ষশোভিত জঙ্গলের মাঝে একাধিক লেক রয়েছে, চাইলেই মনের আনন্দে বোটিং করার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রবেশ মূল্য দশ টাকা। ইট বিছানো সরু পথ ধরে ঘুরে বেড়ানো যায় উদ্যানের মনোরম পরিবেশে। রয়েছে বেশ কয়েকটি কটেজ। ভিআইপি থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানের এই কটেজগুলিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করা যায়। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের অবস্থান গাজীপুর সদরের রাজেন্দ্রপুর নামক স্থানে। ঢাকা থেকে কাপাসিয়া অথবা ময়মনসিংহ গামী যেকোন বাসে যানজট না থাকলে মাত্র সওয়া ঘণ্টায় পৌঁছা সম্ভব। গুলিস্তান থেকে এর দূরত্ব ৪৮ কিমি। ভাড়া পরবে ৫০-৭০ টাকা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুন ২০১৭/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়