ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

‘ঈশ্বর থাকেন ঐ গ্রামে, ভদ্র পল্লীতে’

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ১৮ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ঈশ্বর থাকেন ঐ গ্রামে, ভদ্র পল্লীতে’

‘ঈশ্বর থাকেন ঐ গ্রামে, ভদ্র পল্লীতে- এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝি কালজয়ী উপন্যাসে রয়েছে প্রকৃতির প্রতিকূলতা, দারিদ্রের নির্মম কশাঘাতে জেলেদের জর্জরিত অবস্থার বর্ণনা।

উপন‌্যাসের মতোই এখনো দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন সুন্দরবন উপকূলের জেলেরা।

অক্টোবর থেকে মার্চ এই ছয় মাস শুঁটকি আহরণ করেন সেখানকার জেলেরা। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ থেকে নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধ করে পাশ-পারমিট নিয়ে তারা সাগরে মাছ ধরেন। কিন্তু এবার মহাজনের সঙ্গে প্রকৃতিও তাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করছে। এ কারণে জেলেদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।

এ বছর সুন্দরবনের পাঁচটি চরে ৫৩ ডিপো মালিক ও প্রায় ২০ হাজার জেলে শুঁটকির জন্য মাছ আহরণ করছেন। তবে গত ১০ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর কারণে অনেক শুঁটকি নষ্ট হয়ে গেছে। মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে শৈত‌্যপ্রবাহ। তীব্র শীত আর সূর্যের অনুপস্থিতিতে মাছ শুকাতে পারছেন না জেলেরা। 

জেলেরা জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও সমুদ্র থেকে লইট্যা, ছুরি, চ্যালা, ভেটকি, কোরাল, চিংড়ি, রূপচাঁদা, কঙ্কন, মেদসহ বিভিন্ন প্রকার মাছ আহরণ করে মাচায় শুকাতে দেয়া হয়েছে। কিন্তু রোদ না থাকায় মাছ শুকানো যাচ্ছে না। এতে লোকসানে পড়ছেন তারা। সরকারও হারাচ্ছে কাঙ্খিত রাজস্ব।

দুবলার চরের বহরদর পঙ্কজ রায় বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের পর থেকে সাগরে তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া, শীতের সঙ্গে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই আমাদের উৎপাদন কম। এবার পুঁজি টেকানো কষ্টকর হবে।’

জেলে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিরূপ আবহাওয়ার কারণে মাছের উৎপাদন কম। যে মাছ পাচ্ছি তা আকারেও ছোট। মাছ ধরার জন‌্য পরিবার ছেড়ে আমরা ছয় মাসের জন্য সাগরে যাই। ছয় মাস কাজ করে যদি শুন্য হাতে ফিরে আসতে হয়- এর থেকে কষ্টের কিছু নেই।’

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রতিবছর শুঁটকি মৌসুমে জেলেদের একটি লক্ষ‌্যমাত্রা থাকে। এ বছর জেলেদের লক্ষ‌্যমাত্রা কোনোভাবেই পূরণ হবে না।’

তবে মৌসুমের বাকি দিনগুলোতে যদি আবহাওয়া ভালো থাকে এবং মাছ বেশি পাওয়া যায় তাহলে কিছু ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘বুলবুল ও শীতের কারণে জেলেরা গত বছরের থেকে এবার মাছ কম পাচ্ছে। গেল মৌসুমে আমাদের রাজস্ব আদায় ছিল দুই কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮১৯ টাকা। এবার আমাদের লক্ষ‌্যমাত্রা কম হলেও তা পূরণ হবে না। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী দুই মাসে জেলেরা হয়তো ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে উঠতে পারবে।’


বাগেরহাট/ইভা/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়