ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ক্লিনিকে লাশ জিম্মি

উচ্চ আদালতের যুগান্তকারী নির্দেশ

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৮, ২৩ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
উচ্চ আদালতের যুগান্তকারী নির্দেশ

চিকিৎসা ব্যয় পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে অসচ্ছল ব্যক্তির লাশ জিম্মি বা আটকে রাখার কোন সুযোগ কোন ক্লিনিক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেই মর্মে সম্প্রতি উচ্চ আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিল পরিশোধে অক্ষম গরিব রোগীদের চিকিৎসার খরচ পরিশোধের জন্য স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে একটি তহবিল গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই তহবিলের অর্থ দিয়ে বিল পরিশোধে অক্ষম গরিব রোগীদের চিকিৎসার খরচ পরিশোধ করতে হবে।

রোগাক্রান্ত বা অসুস্থ মানুষ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হতে ক্লিনিক বা হাসপাতালে যান। আর সুচিকিৎসা নিয়ে একজন রোগী যাতে দ্রুত বাড়ি ফিরে যেতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করা হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের দায়িত্ব। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে রোগী যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। নানা পরীক্ষা ও ওষুধপত্রের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু কাঙ্খিত সেবা মিলছে না সেখান থেকে। পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে রয়েছে দালাল চক্র। এদের দৌরাত্মে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

দেখা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যারা যান, তারা সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষ। অনেকে আসেন দালালদের খপ্পরে পড়ে। বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে ভর্তি হওয়ার পর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে রোগীর পকেট থেকে বেরিয়ে যায় প্রচুর অর্থ। অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। কোন কোন হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় অত্যধিক, সাধারণের নাগালের বাইরে।

আবার চিকিৎসা ব্যয় পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে কোন কোন ক্লিনিক রোগীকে আটকে রাখে। রোগীর অপারেশনের প্রয়োজন না হলেও অধিক অর্থ আদায়ের লোভে তা করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। অসচ্ছল রোগী এই অর্থ বা হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে ধার-দেনা বা জমিজমা বিক্রি করেন। সবচেয়ে জঘন্য যে ব্যাপার ঘটে, তা হলো, চিকিৎসা ব্যয় পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে ক্লিনিক বা হাসপাতালে অসচ্ছল ব্যক্তির লাশ আটকে রাখা।

এ জন্য ওই ক্লিনিক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কোন জবাবদিহি করতে হয় না। ঢাকার সিটি হাসপাতালে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটে ২০১২ সালের ৮ জুন। অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় একটি শিশুর লাশ হস্তান্তর করেনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই শিশুর মৃত্যুর পর ২৬ হাজার টাকা বেশি বিল দাবি করে লাশ হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়। এই নিয়ে একজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন অসচ্ছল ব্যক্তির লাশ আটকে রাখা বা জিম্মি করা যাবে না।

হাসপাতাল থেকে শিশুর লাশ হস্তান্তর না করা কিংবা অভিভাবকদের তার সন্তানের লাশ নিতে না পারার বিষয়টি খুবই অমানবিক। উচ্চ আদালত এক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী নির্দেশ প্রদান করেছেন। অসচ্ছল দরিদ্র রোগীরা যে যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির শিকার হন আদালতের এ নির্দেশে তার অবসান হবে এমনটিই প্রত্যাশা আমাদের। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যথাযথভাবে তা বাস্তবায়ন করলে অসচ্ছল, গরিব রোগীরা অমানবিক আচরণ থেকে মুক্তি পাবেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ নভেম্বর ২০১৭/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়