ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

উচ্চ ভোল্টেজের তারের নিচে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫১, ২৩ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
উচ্চ ভোল্টেজের তারের নিচে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : বিদ্যুৎ আইন বলছে, উচ্চ ভোল্টেজের সঞ্চালন লাইনের নিচে ঘর-বাড়ি বা স্থাপনা থাকতে পারবে না, ডানে ও বামে অন্তত ১০ ফুট ফাঁকা থাকবে। কিন্তু এ সবের কিছুই মানা হচ্ছে না কিশোরগঞ্জ শহরের নগুয়া এলাকায়।

নগুয়া এলাকায় বহু বাড়ির ওপরে বিপজ্জনকভাবে ঝুলে রয়েছে ৩৩ হাজার ভোল্টের সঞ্চালন লাইনের তার। কোনো কোনো বাড়ির ছাদ বা চাল বিদ্যুতের লাইন ছুঁই ছুঁই করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই বিদ্যুৎ লাইনে স্পৃষ্ট হয়ে গত তিন বছরে কমপক্ষে ২০ জন হতাহত হলেও কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকা হতাশ করেছে তাদের।

এলাকাবাসী বাড়ির ছাদ ছুঁই ছুঁই করা উচ্চ ভোল্টেজের সঞ্চালন লাইন সরিয়ে নেওয়ার দাবি করলেও পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কেউ সাড়া দিচ্ছেন না। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে বাস করছেন লোকজন। 

৪০ থেকে ৪৫ বছর আগে নান্দাইল ফিডার নামে পরিচিত ৩৩ হাজার ভোল্টেজের এই লাইন স্থাপন করা হয়। তখন এলাকায় বাড়ি তেমন ছিল না। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ওই উচ্চ ভোল্টেজের তারের নিচে অসংখ্য বাড়ি নির্মাণ করে লোকজন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ধীরে ধীরে লাইনের তার ঝুলে পড়লেও এটি মেরামত বা সংস্কার হয়নি। বর্তমানে লাইনটি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। সাম্প্রতি এই লাইনে দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তারা।



আখড়া বাজার এলাকার বাসিন্দা লাল মিয়া (৬০)। তার ১২ বছর বয়সী ছেলে সুজন কাজ করত শহরের মোটরসাইকেল গ্যারেজে। তিন মাস আগে নগুয়া এলাকার বাসার চাল থেকে ঘুড়ি ছাড়াতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয় সে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সুজন। চিকিৎসায় কয়েক লাখ টাকা খরচ হলেও ছেলেকে বাঁচাতে পারেননি লাল মিয়া। হারুয়া এলাকার আদল মিয়ার একমাত্র ছেলে মাদ্রাসাছাত্র মোহাম্মদ সাগরও একইভাবে একই এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় চার মাসে আগে। এর একমাস আগে গাছের ডাল কাটতে গিয়ে বিদ্যুতের তারে লেগে মারা যায় এক নারী গৃহকর্মী।

সুজনের বাবা লাল মিয়া বলেন, বিদ্যুতের তার এই এলাকার বেশিরভাগ বাড়ির চালে লাগে লাগে অবস্থা। এমন একটি ঘরের চাল থেকে ঘুড়ি আনত গিয়ে তার ছেলে মারা গেছে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু এইতা লাইয়া কারো মাথাব্যতা আছে বইল্যা আমার মনে অয় না।’

এলাকাবাসীর দাবি, গত তিন বছরে নগুয়া এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হতাহত হয়েছে ২০ থেকে ২২ জন। মাস খানেক আগে ঘরের ছাদে বিদ্যুতের তার লেগে সরকারি এক কর্মকর্তার বাসায় আগুন লেগে যায়। তখন বেশ কয়েকটি বাসার বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি পুড়ে যায়। মাঝে-মধ্যে ঘটছে এই ধরনের দুর্ঘটনা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নগুয়া এলাকা দিয়ে ৩৩ হাজার ভোল্টেজের যে সঞ্চালন লাইনটি ময়মনসিংহের নান্দাইলে গেছে, সেটি লোকজনের বাড়ির ছাদ বা টিনের চাল ছুঁই ছুঁই করছে। লাইনের ডান-বামের অবস্থা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা দিয়ে বিদ্যুতের উচ্চ ভোল্টেজের লাইন যাওয়ায় অনেকে বাড়ি নির্মাণ করতে পারছেন না। আবার অনেকে বাড়ি বহুতল করতে পারছেন না।



খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাইনের মালিকানা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা পিডিবির হলেও এটি ব্যবহার করছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। তাই জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লেও কোনো পক্ষই লাইন মেরামতের দায়িত্ব নিচ্ছে না। পিডিবি বলছে, এ লাইনটি বর্তমানে ব্যবহার করছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, তাই এটির রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামতের দায়িত্ব তাদের। অন্যদিকে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে বলা হচ্ছে, লাইনটি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ব্যবহার করলেও তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কিশোরগঞ্জে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. উবাদুল ইসলাম বলেন, বহু আগে থেকে এই লাইন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ব্যবহার করছে। যেহেতু তারা ব্যবহার করছে, তাই এটি ঝুঁকিমুক্ত করে ব্যবহার করা উচিত।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কিশোরগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী অসিত কুমার ভৌমিক বলেন, কিশোরগঞ্জ শহর থেকে নান্দাইল ফিডারে যে ৩৩ হাজার ভোল্টেজের লাইন গেছে, বহুবার চিঠি দেওয়ার পরও পিডিবি সেটি পল্লী বিদ্যুতের কাছে হস্তান্তর করেনি। ফলে লাইনে বড় ধরনের মেরামত বা সংস্কার কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।




রাইজিংবিডি/কিশোরগঞ্জ/২৩ জুন ২০১৭/রুমন চক্রবর্তী/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়