ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

উত্তরে অপরিবর্তিত, দক্ষিণে নতুন মুখ

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৫, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
উত্তরে অপরিবর্তিত, দক্ষিণে নতুন মুখ

ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়ে গেছে। কে পাচ্ছেন নগর পিতার দৌড়ে নৌকার মনোনয়ন? ধানমন্ডি আর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে-তা নিয়ে আলোচনায় চায়ের কাপে ঝড় উঠেছে। তবে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ আর সাফল্য-ব্যর্থতার মানদণ্ডে উত্তরে প্রার্থী অপরিবর্তিত রেখে দক্ষিণে নতুন মুখ দিতে পারে আওয়ামী লীগ। দলের একাধিক সূত্র এমনই ইঙ্গিত দিয়েছে।

আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন রেখে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। তিনি জানান, দুই সিটিতে ৩০ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট হবে। সম্পূর্ণ ভোটই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) গ্রহণ করা হবে। বিদ্যমান ভোটার তালিকায় ভোট নেয়া হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে ইভিএমের পাহারায় দুজন করে সেনা কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘প্রার্থী হতে হলে বর্তমান মেয়রদের পদত্যাগ করতে হবে। তবে কাউন্সিলররা নিজ পদেই থেকে নির্বাচন করতে পারবেন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর। ২ জানুয়ারি এসব মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি।’

নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পরই নড়ে চড়ে বেসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের দায়িত্ব পালন করছেন দলটির সমর্থিত মেয়র প্রার্থী। আগামী নির্বাচনেও মেয়র পদে জয়ের ধারবাহিকতা রাখতে কৌশল প্রণয়নে ব্যস্ত দলটি। কার হাতে তুলে দেয়া হবে নৌকা প্রতীক? সেটি ঠিক করতে আগামী শনিবার বৈঠকে বসছেন দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম।

এরই মধ্যে দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ যথাক্রমে বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়নের আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। আগামী ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকাল ৫টার মধ্যে আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।

চার বছর আগে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ করপোরেশন নির্বাচনে উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন আনিসুল হক আর দক্ষিণে সাঈদ খোকন। ওই নির্বাচনে দুজনেই জয়ী হন। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর মেয়র আনিসুল হক ইন্তেকাল করায় মেয়র পদটি শূন্য হয়। এরপর চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি উত্তর সিটির উপ নির্বাচনে মেয়র হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।

আবারো সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে জেগে উঠেছে নেতাকর্মীরা। মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রার্থীরা এরই মধ্যে অনানুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন দেয়ালে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পোস্টার লাগিয়ে নিজেকে প্রচার করছেন। প্রচারণা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

সিটি নির্বাচনের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে কাকে দেখা যেতে পারে সে বিষয়ে দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দুই সিটিতে বেশ কিছু বিকল্প তাদের কাছে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার হোমওয়ার্ক রয়েছে। তবে মেয়র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সমর্থন অপরিবির্তত থাকবে, না কি নতুন আসবে-সেটি বিভিন্ন মানদণ্ডে বিবেচনার পর সিদ্ধান্ত হবে।

তবে দলীয় সূত্র বলছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আতিকুল ইসলামকে সমর্থন অপরিবর্তিত রাখার সম্ভবনা বেশি। মাত্র দশ মাসে কাজের সাফল্য-ব্যর্থতা বিবেচনা করা কঠিন। তারপরও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তার আগ্রহ ও তড়িৎ পদক্ষেপ নেয়ার ইচ্ছাকে মূল্যায়ন করা হতে পারে। সেজন্য তাকে আরেকবার সুযোগ দেয়ার পক্ষে দলের অনেকে। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরিবর্তন আনার পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতারা। দায়িত্ব পালনে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে না পারার অভিযোগ রয়েছে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রায়শই ট্রল হওয়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার ব্যর্থতাকে ইঙ্গিত করে বলে মনে করা হচ্ছে। গত কয়েকবছরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পানি নিষ্কাশন সমস্যার সমাধান না হওয়াসহ সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে তার ওপর বিরক্ত নগরবাসী। এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে খুব বেশি সমালোচনায় ছিলেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক আলোচনার চেয়ে সমালোচনায় বেশি ছিলেন সাঈদ খোকন। প্রার্থী বাছাইয়ে এবার আওয়ামী লীগ পারিবারিক যোগ্যতার চেয়ে প্রার্থীর নিজ যোগ্যতাকে বেশি প্রাধান্য দেবে। এসব বিবেচনায় নতুন কাউকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে খুঁজছে আওয়ামী লীগ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা গেলেও দলের নব নির্বাচিত আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরুকে আলাদাভাবে জোরালো প্রার্থী হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আইনজীবী হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় এই নেতা দলের দুর্দিনে রাত-দিন খেটে নেতাকর্মীদের আইনী সহায়তা দিয়েছেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা নজিবুল্লাহ হিরুর বিষয়ে মেয়র পদে নৌকার টিকিট পাওয়ার নিয়ে খোদ দলেই জোরালো দাবি আছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছের লোক বলে পরিচিত। এবার আওয়ামী লীগের ২১তম সম্মেলনে আইন বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।

নজিবুল্লাহ হিরু রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। তিনি যেখানে চাইবেন সেখানে আমি মনপ্রাণ উজাড় করে কাজ করে যাব। তবে আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো আমিও তিলোত্তমা ঢাকার স্বপ্ন দেখি। কঠিন হলেও বিষয়টি অসম্ভব নয়। এজন্য কাজ করার ইচ্ছাশক্তি ভীষণরকম প্রয়োজন। আমার সে ইচ্ছা আছে।’

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাদের খান, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হকও রয়েছেন আলোচনায়।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ঢাকা ১০ আসনের সাংসদ শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও সাবেক এমপি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীনের নাম শোনা যাচ্ছে।

আগামী ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন রোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় দলীয় মনোনয়নের বিষয়টি চুড়ান্ত হতে পারে বলে দলীয় সূত্র বলছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী ঠিক করা হবে। এ বিষয়ে দলে আলোচনা হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী মেয়র নির্বাচনেও তিনি সঠিক প্রার্থী দেবেন।’

এদিকে কাউন্সিলর প্রার্থী দেয়ার ক্ষেত্রে এবার ব্যাপক পরিবর্তন আনছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্র বলছে, সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত সব কাউন্সিলরের আমলনামা এখন দলীয় নেত্রীর হাতে রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম রয়েছে এমন কাউন্সিলরা এবার নৌকা প্রতীক পাবেন না। অনেকে কাউন্সিলর হওয়ার পর নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেননি। নিজের আখের গুছিয়েছেন তারা বাদ পড়ছেন এবার। বেশিরভাগ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীতে আসছে নতুন মুখ।

ঢাকা উত্তর সিটিতে ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৮টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড রয়েছে। মোট ভোটার ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। মোট ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ ভোটার।

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি বজলুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সিটি নির্বাচন নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সার্বিক প্রস্তুতি আছে। দল থেকে সেভাবে নির্দেশনা দেয়া আছে। দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হলেই আমরা মাঠে নেমে যাব।’


ঢাকা/পারভেজ/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়