ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এই ৭ কারণেও হতে পারে হার্ট অ্যাটাক

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এই ৭ কারণেও হতে পারে হার্ট অ্যাটাক

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : আপনার মেজাজ, কাজের ধরন, ঘুমের সূচি কিংবা পরিবেশ আপনাকে ফেলে দিতে পারে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে। এ প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো।

১. আপনি সামান্য বিষয় নিয়ে ক্ষুব্ধ হন

আপনি কি মানসিক বিপর্যয়ে হাল্কের রূপ ধারণ করেন? এ রকম উত্তেজনাপ্রবণ মানসিক অবস্থা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিকে প্রচণ্ডভাবে বাড়িয়ে দেয়। ইউনিভার্সিটি অব অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা আশঙ্কাজনক হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়া ৩১৩ জন রোগীকে প্রশ্ন করেন, যাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আগে ক্রোধের মাত্রা ছিল। তারা আবিষ্কার করেন যে, ক্রোধের তীব্র বিস্ফোরণের (এ অবস্থাকে খুব ক্রোধ, ক্রোধের উত্তেজনায় কঠিন শরীর, দৃঢ়ভাবে মুষ্টি ধরা, দাঁতে দাঁত ঘষার সঙ্গে সংজ্ঞায়িত করা যায়) দুই ঘণ্টার মধ্যে রোগীদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা ৮.৫ গুণ বেশি ছিল। আপনি যত বেশি ক্রোধে জ্বলবেন, আপনার তত বেশি হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

২. আপনি অধিকাংশ সময় স্ক্রিনের সামনে কাটান

আপনি হয়তো দিনের অধিকাংশ সময় টেলিভিশন বা কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে কাটান। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের এক গবেষণার বিবরণে জানা যায়, যেসব লোকেরা দিনের চার ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় টিভি দেখে বা কম্পিউটারে কাজ করে, তাদের কার্ডিওভাসকুলার রোগের (যেমন- হার্ট অ্যাটাক) ঝুঁকি ১২৫ শতাংশ বেড়ে যায়। এসবের সামনে দীর্ঘসময় বসে থাকলে শরীরের চর্বি নিয়ন্ত্রণকারী ও ধমনীর বন্ধ হওয়া প্রতিরোধে ভূমিকা পালনকারী লিপোপ্রোটিন লাইপেস নামক এনজাইমের ধ্বংস হয়। টিভি বা কম্পিউটার নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হলে প্রতি ২০ মিনিট পর পর বিরতি নিন। স্ট্যান্ডিং ডেস্কের সাহায্যও নিতে পারেন, কারণ বসার চেয়ে দাঁড়িয়ে কাজ করলে ৩০ শতাংশ বেশি ক্যালরি পোড়াতে পারবেন।

৩. আপনি প্রতিরাতে ছয় ঘন্টার কম ঘুমান

অনেক বয়স্ক লোক পরামর্শ মোতাবেক প্রতিরাতে সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু ধারাবাহিকভাবে এর পরিমাণ কমে গেলে প্রাণনাশক ফলাফল আসতে পারে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান জার্নাল অব ওয়ার্ক, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হেলথে প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, যেসব জাপানি পুরুষেরা প্রতিরাতে ছয় ঘণ্টার কম ঘুমিয়েছে তাদের, যারা প্রতিরাতে সাত বা আট ঘণ্টা ঘুমিয়েছে তাদের তুলনায়, ৫ গুণ বেশি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ছিল। জাপানের টোচিগিতে অবস্থিত জিকি মেডিক্যাল স্কুলের এক গবেষণায় জাপানী নারীদের মধ্যে যারা ছয় ঘণ্টার কম নিদ্রা যান, তাদের ক্ষেত্রেও একই ফলাফল পাওয়া গেছে।

৪. আপনি ধোঁয়াপূর্ণ এলাকায় বাস করেন

ধোঁয়া বা বায়ু দূষণকারী পদার্থ আপনার হার্ট ও ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। গবেষকরা দক্ষিণ বোস্টনে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষুদ্র কণাকার পদার্থ বা বিষাক্ত পদার্থ (জ্বালানি পোড়ানোর ক্ষুদ্র কণা ও যানবাহন থেকে নির্গত হওয়া পদার্থ) কিভাবে প্রভাবিত করে তা নির্ধারণ করতে ঘণ্টায় বায়ু দূষণ পরিমাপন ব্যবহার করেন। তারা দেখতে পান যে, উচ্চ সমাবেশের বায়ু দূষণে রোগীদের প্রথম হার্ট অ্যাটাক উপসর্গ দেখা দেওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা ৪৮ শতাংশ বেড়ে যায়। এ ঝু্ঁকি বেড়ে ৬৯ শতাংশে চলে যায় যখন রোগীরা হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পূর্বে ২৪ ঘণ্টা উচ্চমাত্রার বায়ু দূষণে ছিল।

৫. আপনার ডিভোর্স হয়েছে

আপনাকে ডিভোর্স আক্ষরিক অর্থে মানসিক যন্ত্রণায় রাখবে। ডিউক ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিন জীবনে অন্তত একবার বিয়ে করা ৪৫ থেকে ৮০ বছর বয়স্ক ১৬,০০০ পুরুষ ও নারীর ওপর গবেষণা পরিচালনা করেন। প্রতি দুই বছর, গবেষকরা গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বৈবাহিক অবস্থা এবং সার্বিক স্বাস্থ্য মূল্যায়ন করেন। বিবাহিত অবস্থায় থাকা নারীদের তুলনায় একবার ডিভোর্স হওয়া নারীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ বেশি ছিল এবং যাদের দুই বা তার অধিক বার ডিভোর্স হয়েছে তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৭৭ শতাংশ বেশি ছিল। অন্যদিকে, বিবাহিত অবস্থায় থাকা পুরুষ ও একবার ডিভোর্স হওয়া পুরুষদের হার্ট অ্যাটাকের ঝু্ঁকি একই ছিল, কিন্তু দুই বার ডিভোর্স হওয়া পুরুষদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়।

৬. আপনি ডেলাইট সেভিং টাইম ব্যবহার করছেন

গবেষকরা স্টেন্ট ইনসার্শনের প্রয়োজন হওয়া হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা নিরূপণের জন্য মিশিগান হসপিটালের তিন বছরের রেকর্ড পর্যবেক্ষণ করেন। তারা দেখতে পান যে, ডেলাইট সেভিং টাইম (স্ট্যান্ডার্ড সময় একঘণ্টা এগিয়ে নেওয়া) শুরু এবং শেষ করার ক্ষেত্রে স্টেন্ট ইনসার্শন প্রক্রিয়ার ওঠানামা ছিল। সোমবারে একঘণ্টা এগিয়ে নেওয়ার পর, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির বৃদ্ধি ছিল ২৪ শতাংশ। অন্যদিকে, মঙ্গলবার একঘণ্টা পিছিয়ে নেওয়ার পর, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ২১ শতাংশ কম ছিল। ডেলাইট সেভিং টাইমের সপ্তাহগুলোতে হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ অন্যান্য সপ্তাহের তুলনায় খুব বেশি ছিল না।গবেষকরা সিদ্ধান্তে আসেন যে, সময়ের পরিবর্তন বাধ্যতামূলকভাবে হার্ট অ্যাটাক ঘটাচ্ছে না, কিন্তু হার্ট অ্যাটাককে ত্বরান্বিত করছে এটা বলা যায়। ঘুম-জাগরণ চক্র ব্যহত হওয়া এবং নতুন সপ্তাহে কাজের শুরুতে মানসিক চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে সম্ভবত হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৭. আপনি অত্যধিক তাপমাত্রাপূর্ণ এলাকায় বসবাস করছেন

গবেষণায় দেখা যায়, অত্যধিক ঠান্ডা ও অত্যধিক গরম মানুষকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে রাখে। ওরসেস্টার হার্ট অ্যাটাক স্টাডি পরিচালনার জন্য হৃদরোগীদের উপাত্ত ব্যবহার করা হয়। এ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন যে, হার্ট অ্যাটাকের পূর্বে ১৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট নিম্ন তাপমাত্রায় দুই দিন থাকা রোগীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। অন্য একটি গবেষণার শেষে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা দেখতে পান যে, একবার তাপমাত্রা ৬৮ ডিগ্র্রি ফারেনহাইটে পৌঁছলে পরবর্তী এক থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে প্রতি ১.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার বৃদ্ধির জন্য ২ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং প্রথমদিনের হট স্পেলে এ ঝুঁকি প্রতি ১.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটের জন্য ৬.৫ শতাংশ বাড়ে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :
 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়