‘একটি কলা, হাজার কোটি টাকা দামের’
একটি কলা। তার দামই বা কত। হয়তো দুই বা তিন টাকা, বড় জোড় পাঁচ টাকা। কিন্তু সে কলারই হাজার কোটি টাকা দাম ধরেছেন খোদ এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
নৈর্ব্যক্তিক হাজার কোটি টাকার ভালবাসার এ দৃশ্যকাব্য তৈরি হয় গেল রোববার, গোপালগঞ্জে।
কোরোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দিন রাত গোপালগঞ্জের মাঠ ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শেখ সালাউদ্দিন দীপু।
গত রোববার (১৯ এপ্রিল) সকালে প্রতিদিনের মত অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বাজার তদারকিতে বের হন তিনি। এরপর তিনি শহরের বঙ্গবন্ধুর সড়কের লিংক রোডের পাশে একটি চায়ের দোকান খোলা দেখতে পান। পরের দৃশ্যগুলো ফুটে উঠেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ফেইসবুক স্টেটাসে।
“বাজার খালি করছিলাম। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান বাদে কোন দোকান খোলা, কে অপ্রয়োজনীয় কাজে বাইরে বের হয়েছে, তদারকি করছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে বাজারের কোণায় এই বৃদ্ধ লোক আর তার মেয়েটার দিকে চোখ পড়ল। হাতে দু তিনটা কাগজ নিয়ে ছোটাছুটি করছেন। ত্রাণের জন্য ফর্ম পূরণ করবেন। কাকে দিয়ে করাবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না।
কাছে গেলাম।কি হয়েছে চাচা?
কিছুনা বাবা, এই কাগজটা লিখতি হবে। পাশের ছোট্ট চায়ের দোকানটা আমার। ওর মধ্যেই থাকি আমি। বন্ধ দোকান। কিছু নেই খাওয়ার। খাইনা। পেটে ক্ষুধা।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওইসময়ই তাকে উপহার খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হলো।
ঘটনাটা এখানে শেষ হতে পারত। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
ওনার দোকানের মধ্য থেকে ৭-৮ টা কলা নিয়ে আসলেন। বললেন, বাবা, কিছু মনে করো না। তোমাদের মুখ শুকায় গেছে। অনেকক্ষণ কিছু খাওনি হয়ত। এই কলা কয়টা খাও। জোর করে হাতে হাতে একটা করে কলা গুজে দিলেন।
আমার সাথের এক কনস্টেবল এর চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো দেখলাম। আমার চোখ লাল হয়ে গেলো। জড়ায় ধরতে মন চাইলো লোকটাকে। পারলাম না।
পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষটাকে আজ উপহার দিলাম। আর পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষটার কাছ থেকে আজ জীবনের সবচেয়ে বড় উপহারটা পেলাম আমি।
‘একটা কলা। হাজার কোটি টাকা দামের!’
চা দোকান দার ষার্টাধো বৃদ্ধ সাহেব আলী জানান, ‘করোনার কারণে আজ এক মাস ধরে দোকান বন্ধ। কোন টাকাও নেই যে, তা দিয়ে পরিবার নিয়ে চলব। অনেক কষ্টে দিন করছি। কিন্তু স্যার আমার কষ্টের কথা শুনে চাল, ডাল দিসে। স্যার অনেক বড় হোক, গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াক।’
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শেখ সালাউদ্দিন দীপু বলেন, ‘করোনার কারণে এখন আর ধনী-গরিবের ভেদাভেদ নেই। সবাই এখন ঘরবন্দি। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে খেটে খাওয়া গরিব মানুষ। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের উচিত এসব গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তাহলে আর আমাদের মাঝে ধনী-গরিবের ভেদাভেদ থাকবে না।’
তিনি আরো বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে উনাকে খাদ্য সামগ্রী দিয়েছি। আমার পক্ষ থেকে তাকে আরও খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হবে।
সমাজের এসব গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিত্তবাদের আহবান জানান তিনি।
গোপালগঞ্জ/বাদল সাহা/সাজেদ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন