ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

এখন সবাই ডিজিটালে, তাই কবিতা লিখে কাটছে সময়!

আব্দুল্লাহ আল নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এখন সবাই ডিজিটালে, তাই কবিতা লিখে কাটছে সময়!

এখন সবাই ডিজিটালে, তাই তার হাতে তেমন কোন কাজ নেই। ফলে অলস সময় কাটে তার কবিতা লিখে।

তিনি ব্যানার, সাইনবোর্ড, ফেস্টুন লেখার পেশায় যুক্ত প্রায় ৪৭ বছর। রঙতুলিই তার জীবন-জীবিকার অবলম্বন। এখন বয়স তার ৬৫। নাম শেখ মো. হানিফ উদ্দিন।

রাতে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে খাদ্য ভবনের সামনের ফুটপাতে বসে রঙ-তুলির আঁচড়ে শ্রদ্ধাঞ্জলির কার্ড লিখছিলেন তিনি। জানালেন, আগের মতো রঙ-তুলিতে হাতে লেখা নেই। এখন সবাই ডিজিটালে চলে গেছে। এজন্য অলস সময়ে তিনি কবিতা লিখেন।

তিনি বলেন, ‘একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ১৫ বছর। বয়সে ছোট হওয়ার কারণে এজন্য তিনি যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। তবে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করতেন। এখন অলস সময়ে তিনি কবিতা লিখছেন।’

তিনি লিখেছেন শতাধিক কবিতা। আর এসব কবিতায় তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধের কথা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা। লিখেছেন শিশুদের নিয়েও।

তিনি স্বশিক্ষিত। জানালেন, তিনি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তাই তার লেখা কবিতায় ভাষাগত সমস্যা থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘পড়ালেখা না করায় তিনি দেশ স্বাধীন হওয়ার দুই বছর পর আর্টের দোকানে কাজ শুরু করেন। এরপর থেকেই এ পেশায় রয়েছেন।’

তিনি জানান, তার লেখা ব্যানার-সাইনবোর্ড দিয়ে বড় বড় সমাবেশেও ব্যবহৃত হতো। এখন আর সেই দিন নেই। সপ্তাহে দু’একটি কাজ আসে। আর সবাই ডিজিটালে কাজ করিয়ে নেন। এজন্য তাদের এ শিল্পটি হারিয়ে যেতে বসেছে।

তবে বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন দিবসেই তাদের কদর বাড়ে। এসময় তারা পুষ্পস্তবকের ‘শ্রদ্ধাঞ্জলির কার্ড’ লিখে দেন। এজন্য এক দুই দিন তার দম ফেলার ফুসরত থাকেনা। প্রতিটি কার্ড লিখে ১০০টাকা করে পান বলেও জানান তিনি।

মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তার কবিতার দুটি লাইনও শুনালেন তিনি। ‘যুদ্ধে চোখের জল’ শিরোনামের কবিতাটি এমন- ‘মুক্তিযোদ্ধা, সবাই কর তাদেরকে শ্রদ্ধা; শেখ মুজিবের ডাকে, জেলে কৃষক ছাত্র শিক্ষক হাতে নিল বন্দুক; যুদ্ধ করে খুললো সোনার বাংলার সিন্দুক।’

তিনি জানান, এখন রঙ-তুলিতে ব্যানার-সাইনবোর্ড লেখার চর্চা বিলুপ্তির পথে। এ কারণে তার কাজের চাপও নেই। ফলে তিনি ওই ফুটপাতে বসে বসে কবিতা লিখেন। আর পথচারীদের তা শুনিয়ে থাকেন। তার প্রথম কবিতাটি ছিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসের দিনে বাংলা ভাষা নিয়ে লেখা।

২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি টেলিভিশনে একটি অনুষ্ঠানে বাংলিশ (বাংলা-ইংলিশের মিশ্রণ) সংলাপ শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে সেই কবিতাটি লিখেছিলেন। এর শিরোনাম ছিল ‘হৃদয়ে বাংলা, মুখে ইংলিশ’। এরপর থেকেই তিনি কবিতা লিখে যাচ্ছেন।

বিশেষ দিনে মো. হানিফ ছাড়াও সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এবং চৌহাট্টা পয়েন্টে ১০-১৫জন রঙ-তুলি শিল্পী শ্রদ্ধাঞ্জলির কার্ড লেখার কাজ করেন।

 

সিলেট/ আব্দুল্লাহ আল নোমান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়