ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

এবার শাকিলের ‘ফেরা না-ফেরার গল্প’

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এবার শাকিলের ‘ফেরা না-ফেরার গল্প’

ছবি : শাহীন ভূঁইয়া

আরিফ সাওন ও আবু বকর ইয়ামিন : প্রয়াত মাহবুবুল হক শাকিল কবি হিসেবে পরিচিত, যাকে মানবিক বোধে ধারালো ও অনুভূতিসম্পন্ন এক তাড়না নিত্যচঞ্চল রেখেছিল। তার রচিত হৃদয়স্পর্শী সব পঙ্ক্তিমালা পাঠকদের আলোড়িত করে।

এমনকি জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও এই কবি রচনা করেছেন আরেক প্রোজ্বল পঙ্ক্তি : ‘মৃতদের কান্নার কোনো শব্দ থাকে না/থাকতে নেই/নেই কোনো ভাষা/কবরের কোনো ভাষা নেই।’ তার প্রকাশিত তিনটি কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে- ‘খেরোখাতার পাতা থেকে’, ‘মন খারাপের বাড়ি’ এবং ‘জলে খুঁজি ধাতব মুদ্রা’।

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে শাকিল গল্পও লিখতে শুরু করেন। লিখেছেন ছয়টি গল্প। মনে দাগ কাটা গল্প। তিনটি কাব্যগ্রন্থের পর এবার প্রকাশিত হয়েছে মাহবুবুল হক শাকিলের গল্পগ্রন্থ ‘ফেরা না-ফেরার গল্প’।

শুক্রবার বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে প্রয়াত মাহবুবুল হক শাকিলের এই গল্পগ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব করা হয়।

বোদ্ধারা বিস্মিত তার গল্প লেখার সহজাত প্রতিভায়। লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ভাষ্য, এই ছয়টি গল্পই শাকিলকে প্রতিষ্ঠা দেবে। শাকিলের গল্পে মূর্ত হয়ে উঠেছে চারপাশের বাস্তবতা, বন্ধুত্ব, দেশপ্রেম, জঙ্গিগোষ্ঠীর অপতৎপরতা, শেকড়চ্যুত মানুষের একাকিত্ব ও যন্ত্রণা ইত্যাদি।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে শাকিলের প্রথম গল্পের এই বইটি নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, দৈনিক কালেরকণ্ঠ সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন এবং মঈনুল আহসান সাবের।

এছাড়া আরো বক্তৃতা করেন মাহবুবুল হক শাকিলের বাবা ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক। উপস্থিত ছিলেন তার মা, ছোট ভাই ও স্ত্রী অ্যাডভোকেট নীলুফা আনজুম পপি। স্বাগত বক্তৃতা করেন অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম।

এ সময় কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের বাংলা একাডেমি থেকে শাকিলের বইয়ের সংকলন করার প্রস্তাবনা রাখেন।

তার প্রস্তাবনার ভিত্তিতে একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান জানান, মাহবুবুল হক শাকিলের পরিবার চাইলে তার তিনটি কাব্যগ্রন্থ ও একটি গল্পগ্রন্থ নিয়ে চারটি বইয়ের একটি সংকলন গ্রন্থ প্রকাশ করা হবে।

শামসুজ্জামান খান বলেন, বইগুলোর সংকলন প্রকাশের বিষয়ে সব প্রকাশনীই এগিয়ে আসবে। তবে বাংলা একাডেমি যদি কাজটি করে তাহলে লেখক হিসেবে শাকিল একটা জাতীয় স্বীকৃতি পাবে। ২/৩ দিনের মধ্যে যদি সবগুলো বইয়ের সফট কপি দেওয়া যায় তাহলে এই মেলাতেই এবং একুশে ফেব্রুয়ারির আগেই বাংলা একাডেমি কাজটি সম্পন্ন করবে।

এ অনুষ্ঠানে শাকিলের পরিবারের পক্ষ থেকে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বাংলা একাডেমিকে শাকিলের লেখার সফট কপি দেওয়ার কথা জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, শাকিলের কবিতার বইয়ের ভূমিকা লিখতে গিয়ে বুঝলাম সে অনেক বড়মাপের লেখক। সে ছিল স্নেহের কাঙ্গাল। যেকোনো মানুষকে সহজে আপন করে নেওয়ার মতো অসম্ভব ক্ষমতা ছিল তার মাঝে। বন্ধু ও গুরুজনদের কাছ থেকে নিজের সব দাবি আদায় করে নেওয়ার মতো গুণাবলিও ছিল শাকিলের।

ইমদাদুল হক মিলন বলেন, শাকিল তার সৃষ্ট সাহিত্যকর্মের মাঝে আজীবন এদেশের সাহিত্যাঙ্গনে অমর হয়ে থাকবে। তার মাঝে বিস্ময়কর প্রতিভা ছিল। বেঁচে থাকলে দেশের র্শীষস্থানীয় পর্যায়ের সাহিত্যিক হতে পারত শাকিল। এ সময় তিনি কালেরকণ্ঠে ছাপানো একটি গল্পের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, শাকিলের একটি গল্প কালেরকণ্ঠে ছাপা হওয়ার পর আমি নিজেই বিস্মিত হই।

মঈনুল আহসান সাবের বলেন, গৌরব, মেধা-মননে আর আন্তরিকতায় শাকিল এখনও আমাদের মাঝে বেঁচে আছে। একজন কবি হয়েও গল্প নির্মাণের সব গুণাবলিই তার মাঝে ছিল। তার প্রতিটি গল্পই মানসম্পন্ন। একটি গল্প থেকে আরেকটি গল্প একটা সবল বা দুর্বল হতে পারে কিন্তু মানের দিক থেকে প্রতিটি গল্পই অসাধারণ। মাহবুবুল হক শাকিলের নামে পুরস্কার প্রবর্তন ও তার বইগুলোর সংকলন প্রকাশের প্রস্তাবনা রাখেন মঈনুল আহসান সাবের।

অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত এই বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। মূল্য ১৫০ টাকা।  প্রয়াত কবি মাহবুবুল হক শাকিল প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ছিলেন। তার জন্ম ১৯৬৮ সালের ২০ ডিসেম্বর এবং ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/সাওন/ইয়ামিন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়