ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ঐতিহাসিক ক্ষণের অপেক্ষায় মৎস‌্যজীবী লীগ

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ২৮ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঐতিহাসিক ক্ষণের অপেক্ষায় মৎস‌্যজীবী লীগ

প্রতিষ্ঠার এক পক্ষকাল পর ‘আনুষ্ঠানিক প্রথম সম্মেলন’ কে কেন্দ্র করে সংগঠনের ঐতিহাসিক ক্ষণের অপেক্ষায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণের স্পন্দন ঘটেছে মৎস‌্যজীবী লীগে।  এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের মর্যাদা পাচ্ছে এই সংগঠনটি। তবে সংগঠনের সার্বিক কর্মদক্ষতা বিবেচনায় সহযোগী সংগঠনের মর্যাদাও পেতে পারে।  এ নিয়ে উৎসবের আমেজ নেতা-কর্মীদের মাঝে।

শুক্রবার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মৎস‌্যজীবী লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।  বেলা ১১টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন তিনি।  আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও উপস্থিত থাকবেন সম্মেলনে। সম্মেলন সামনে রেখে ৮টি উপ-কমিটির সদস্যরা সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে।

মৎস‌্যজীবী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২২ মে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।  আওয়ামী লীগের অনেক সমমনা সংগঠনের মতোই এটা পরিচালিত হলেও মূল দলের সঙ্গে কোনো প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা ছিল না।  যে কারণে চারটি সম্মেলন হলেও তা বলতে গেলে আলোচনাতে ছিল না।  এবারই বড় আকারে সম্মেলন করতে যাচ্ছে সংগঠনটি।  এর মূল কারণ এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে সংগঠনটি।

মৎস্য পেশার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিপুল জনগোষ্ঠী সম্পৃক্ত।  প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রাও আসে এই খাত থেকে।  বিপুলসংখ্যক মৎস‌্যজীবী থাকায় এবারই প্রথম এই সংগঠনটির গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।  ভাবা হচ্ছে দলের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের মর্যাদা দেয়ার। এসব বিষয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন।  মৎস‌্যজীবী দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে সহযোগী সংগঠনের মর্যাদাও দেয়া হতে পারে।  তবে সেই সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্ট না থাকায় এই সংগঠনের যারা বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বে এসেছেন, তারা নিজের মতো করে সংগঠন পরিচালনা করেছেন।  অনেক ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতার মতো ঘটনা ঘটেছে।  ইচ্ছে মতো কমিটিতে পদ দেয়া হয়েছে, ইচ্ছে মতো কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।  সংগঠনের অন্তর্কোন্দলে এক সময় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। ত্যাগী নেতার পদত্যাগের মতো ঘটনাও ঘটেছে। বারবার বড় আকারের সম্মেলন করতে গিয়েও এজন্য খেই হারিয়েছে সংগঠনটি। ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বরে মৎস‌্যজীবী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ সব কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন সম্মেলনের বিজ্ঞপ্তি দিলেও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সেটি আর করা হয়নি।  এবার নতুন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আশার আলো সঞ্চার হয়েছে।  তারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন হিসেবে মর্যাদা পাওয়ার এই সম্মেলনের পর থেকে নতুন এক মৎস‌্যজীবী লীগের সূচনা হবে।  এজন্য ‘যোগ্য ও কর্মীবান্ধব’ নেতৃত্ব প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের মর্যাদা দেয়ার খবরে প্রাণচঞ্চল্য বেড়েছে মৎস‌্যজীবী লীগের নেতা-কর্মীদের। আগের চারটি সম্মেলন  থেকে এবার সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে কয়েকগুণ বেশি আগ্রহ দেখা গেছে। কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদে আসতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন বেশ কয়েকজন নেতা। তাদের শোডাউন, মিছিল, ব্যানার ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং ধানমন্ডির দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে।  আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসা-অফিসে সময় দিচ্ছেন তারা।  পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে আছেন সাবেক ছাত্রলীগের নেতারাও।  মৎস‌্যজীবী লীগের গুরুত্ব বিবেচনায় এবার এই সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠনের কথা ভাবছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বেশ কয়েকজন প্রার্থীর নাম আলোচনায় রয়েছে। এদের মধ্যে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র, সংগঠনটির সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট হারুন অর রশিদ, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব শেখ আজগর লস্কর, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল বাশার, সাবেক ছাত্রলীগের নেতা ও মৎস‌্যজীবী লীগের নেতা মুহাম্মদ আলম, সিনিয়র সহ সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গফুর চোকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেদওয়ান খান বোরহান, মৎস‌্যজীবী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি, শিল্প ও বাণিজ‌্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস‌্য মো. আলিম আলোচনায় রয়েছেন।

নেতৃত্বের প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে শেখ আজগর লস্কর রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মৎস‌্যজীবী লীগকে সাংগঠনিকভাবে আরো বেশি শক্তিশালী করতে এমন লোক নেতৃত্ব আসা প্রয়োজন, যারা একটি ভালো সংগঠন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারবে। এজন্য যাচাই-বাছাই করে যোগ্য নেতৃত্বেরে প্রত্যাশা করছি।’

মুহাম্মদ আলিম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি।  ওই সময়ে সংগঠনের প্রয়োজনে সব ধরনের ত্যাগ শিকার করেছি। দায়িত্ব পেলে মৎস‌্যজীবী লীগকে এমন একটি সংগঠনে রুপ দিতে চাই, যেমন জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যাশা করেন।  মৎস‌্যজীবী লীগও আওয়ামী লীগের অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমান তালে এগিয়ে চলবে সেটিই আমার স্বপ্ন।’

সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে ‘সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি’র আহ্বায়ক নারায়ণ চন্দ্র রাইজিংবিডিকে বলেন, এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে।  আমরা আশা করেছিলাম আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু উনি ব্যস্ততার কারণে থাকতে পারছেন না। এরপরও নেতা-কর্মীদের মধ্যে আনন্দের কমতি  নেই।  আশা করছি ভালো একটি সম্মেলন হবে।’

‘সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি’র সদস্য সচিব লায়ন শেখ আজগর লস্কর রাইজিংবিডিকে বলেন, ৭৭টি সাংগঠনিক জেলা থেকে কাউন্সিলর-ডেলিগেট মিলে মোট দশ হাজারের বেশি নেতাকর্মী আসবে। এর মধ্যে ১৯২৫ জন কাউন্সিলর।  বাকিরা ডেলিগেটর।


ঢাকা/পারভেজ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়