ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ, উচ্ছ্বসিত জেলেরা

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৫, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ, উচ্ছ্বসিত জেলেরা

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আর বড় বড় সামুদ্রিক সুরমা, রিটা ও টুনা মাছ। সাগরে জাল ফেলতেই ধরা পড়ছে এসব মাছ। যা বিক্রির জন্য কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেটিঘাটে ফিরছেন জেলেরা। যখন ট্রলার থেকে বিক্রির জন্য ঝুঁড়িতে রাখছেন ইলিশ মাছ; তখন কক্সবাজার উপকূলের জেলে আব্দুল হাই’র দু’ চোখ আনন্দে ঝলমল করছিল।

বুধবার দুপুরে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেটিঘাটে এই দৃশ্যের দেখা মেলে।

এ সময় কথা হয় জেলে আব্দুল হাই এর সঙ্গে। তিনি বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে সাগরে তেমন মাছ ধরা পড়ছিল না। সারা দিন সাগরে জাল ফেলেও মাছের দেখা মিলত না। কিন্তু এখন সাগরে মাছের পরিমাণ বেড়েছে এবং সেই মাছ সাইজেও বড়। সাগরে জাল ফেললেই ধরা পড়ছে ইলিশ, রুপচাঁদা, সুরমা, রিটা, টুনাসহ সামুদ্রিক মাছ; যা বিক্রি করে ভালোই টাকা পাচ্ছি। সাগরে মাছ দেখে আনন্দে চোখে জল চলে আসে।”

এফবি কোহিনুর; সাগরে শিকার শেষে ট্রলার ভর্তি মাছ নিয়ে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে ভিড়ল। সেই ট্রলার থেকে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পন্টুনে বিক্রির জন্য ঝুঁড়িতে রাখা হচ্ছিল ইলিশ। যা দেখে মুখে হাসি ওই ট্রলারের মাঝি আইয়ুব আলীর।

আইয়ুব আলী বলেন, “১০ দিনের জন্য সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছি। কিন্তু পাঁচ দিনের মধ্যে মাছে ট্রলার ভরে যাওয়ায় তা বিক্রির জন্য ফিশারি ঘাটে ফিরে এসেছি। এ বছর ১০ মেট্রিক টনের বেশি ইলিশ মাছ পেয়েছি; যা ১০০টি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছি। এখন খুব ভালো লাগছে; যেন সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে ৬৫ দিন, পরে ২২ দিন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সাগরে মাছ শিকারে যেতে না পারার কষ্ট ভুলে গেছি।’’

সরেজমিন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সাগরে মাছ শিকার শেষে কক্সবাজার উপকূলে ফিরছেন জেলেরা। আর ট্রলার থেকে মৎস্য অবতরণ ঘাটে মাছ নামাতে ব্যস্ত জেলে ও শ্রমিকরা।

মাছ ধরার ট্রলার এফবি রাশেদের মাঝি হুমায়ুন কবির বলেন, “গত এক সপ্তাহ ধরে সাগরে প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে। সব ধরনের সামুদ্রিক মাছ জালে ধরা পড়ছে। মনে হচ্ছে, সামনে সাগরে আরো বেশি মাছ পাওয়া যাবে।”

এফবি মরিয়ম ট্রলারের জেলে রশিদ বলেন, “অন্য বছরের তুলনায় এ বছর সাগরে মাছ পাওয়া যাচ্ছে। সাগরে যেভাবে মাছ পাচ্ছি, তাতে মনে হয় এ বছর সাগরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে।”

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পন্টুন; যেখানে সামুদ্রিক মাছে সয়লাব। পরিমাণ বাড়ায় কমেছে সব ধরনের মাছের দাম।

মৎস্য ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এখন মাছের দাম অনেক কম। কারণ সাগরে প্রচুর মাছ ধরা পড়ায় সব মাছের দাম নিম্নমুখী। এছাড়া কক্সবাজারে বিভিন্ন মাছের প্রজেক্ট রয়েছে; এসব প্রজেক্ট থেকেও চিংড়ি, বাটা ও টেংরা মাছ বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। ফলে মাছের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।”

আরেক মৎস্য ব্যবসায়ী আখতার হোসেন বলেন, গত সপ্তাহে সামুদ্রিক মাছের দাম যা ছিল; এখন তাই রয়েছে। যেমন ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি আকারভেদে ৩০০ থেকে ১ হাজার, সুরমা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, পোয়া ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা, রিটা ও টুনা ৪০০ টাকা, আঁইশ চাঁদা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ও রুঁপচাদা ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা। মাছের দাম এখন স্বাভাবিক রয়েছে।

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের দেয়া তথ্যমতে, সাগরে বেশি মাছ ধরা পড়ায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মার্কেটিং অফিসার দেলোয়ার হোসেন রাইজিংবিডিকে জানান, ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার কারণে গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর মাছ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সামুদ্রিক মাছ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। কিছু কিছু মাছ রপ্তানি করা হচ্ছে।

গত বছর কক্সবাজার থেকে ৭৫ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ রপ্তানি করা হলেও এ বছর এখনো পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ মেট্রিক টনে।

 

কক্সবাজার/রুবেল/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়