ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কটিয়াদীতে কুড়িখাই মেলা

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কটিয়াদীতে কুড়িখাই মেলা

মেলার একটি চিত্র

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে শুরু হয়েছে ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলা। প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষ মঙ্গলবার থেকে কুড়িখাই গ্রামে শুরু হয় এ মেলা।

সপ্তাহব্যাপী মেলার প্রথম দিন থেকেই সেখানে জনতার ঢল নামে। ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ শামসুদ্দিন বুখারির (রহ.) মাজারের ওরসকে ঘিরে বসে এ মেলা। মুসলমানদের উৎসব হলেও এতে অংশ নেন সব ধর্মের লোকজন।

মেলার অন্যতম আকর্ষণ হলো মাছের হাট। মাছ ছাড়াও এ মেলায় বেচাকেনা হয় কাঠের আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন  পণ্যসামগ্রী। তবে মেলার বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে শেষ দুদিনের বউ মেলা।

রোববার সকাল থেকেই এলাকার নারীরা যাচ্ছেন মেলায়। দুদিন এলাকার নারীরা মেলায় গিয়ে কেনাকাটা ও আমোদপ্রমোদ করবেন। সবকিছুতেই থাকবে নারীদের প্রাধান্য ও অগ্রাধিকার। মেলার মাছের হাটে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় মাছ উঠেছে। এসব মাছ চড়া দামে বিক্রিও হচ্ছে।

স্থানীয়দের ধারণা, মেলার বোয়াল মাছ খেলে এ বছরের জন্য বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাই বোয়াল মাছের দিকে সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকে বেশি। তবে শুধু বোয়াল নয়, সব ধরনের বড় মাছই মেলায় পাওয়া যায়। মূলত দাওয়াতি জামাইরাই এসব মাছের মূল ক্রেতা। তারা শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে খুশি করতে বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানায়, কুড়িখাই গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে যেন ঈদের আমেজ। এ দিনটির জন্যই সারা বছর অপেক্ষা করে স্থানীয়রা। শুধু কটিয়াদী নয়, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছে মেলায়। এরই মধ্যে বাড়ি বাড়ি শুরু হয়ে গেছে পিঠা বানানোর উৎসব। মেলা উপলক্ষে রেওয়াজ অনুযায়ী গ্রামের জামাইদেরও ঘটা করে দাওয়াত দিয়ে করা হচ্ছে আদর-আপ্যায়ন। সেই সঙ্গে বাপের বাড়ি আসছে গ্রামের মেয়েরাও। ওরসকে ঘিরে এমন বিচিত্র মেলা ও উৎসব সাধারণত দেখা যায় না বলে জানালেন স্থানীয়রা।

কুড়িখাই গ্রামের এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকায় মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন দোকানপাট বসেছে। বিশেষ করে কাঠের আসবাবপত্র, শিশুদের খেলনা, দৈনন্দিন পণ্যসামগ্রী, মেয়েদের সাজগোছের জিনিস থেকে শুরু করে মুড়ি, মিষ্টি, খৈসহ অনেক কিছু মেলায় উঠেছে। এ সবই দরদাম করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। মেলাতে শিশুদের জন্যও রাখা হয়েছে পুতুলনাচ, সার্কাস, মোটরসাইকেল রেস, নাগরদোলাসহ আরো বেশ কিছু আয়োজন। এসব দেখে শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও আনন্দ পাচ্ছে।

এবার প্রথম দিনেই মেলা লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ মেলা। একই সঙ্গে মাজার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। তাই মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেলা কমিটির সদস্য আলী আকবর শাহ।

তিনি জানান, মেলার দোকান বরাদ্দ থেকে যে আয় হবে তা ব্যয় করা হবে মাজার ও স্থানীয় মসজিদের উন্নয়ন কাজে।

কথিত আছে শাহ শামসুদ্দিন বুখারি (রহ.) তিনজন সঙ্গী নিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের কুড়িখাই এলাকায় ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন। তিনিই এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের প্রথম প্রচারক। তার মৃত্যুর পর ভক্তরা মাজারকে ঘিরেই কুড়িখাই মেলার প্রবর্তন করেন।

মেলা কমিটির লোকজন জানিয়েছেন, প্রায় ৪০০ বছর ধরে কুড়িখাই মেলাটি হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলা এখন সর্বজনীন উৎসব ও ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। গত সোমবার রাতে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে ওরস শুরু হয়। আজ সকাল থেকে শুরু হয়েছে মেলা। আগামীকাল সোমবার আখেরি মোনাজাতের পর শেষ হবে মেলা। কুড়িখাই মেলা আজ ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।

 

 

রাইজিংবিডি/কিশোরগঞ্জ/১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/রুমন চক্রবর্তী/রুহুল/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়