ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কটিয়াদীর ঢাক-ঢোলের হাট জমজমাট

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪০, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 কটিয়াদীর  ঢাক-ঢোলের হাট জমজমাট

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর ঐতিহ্যবাহী ঢাক-ঢোলের হাটকে ঘিরে কটিয়াদীতে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতি বছর পঞ্চমী ও মহাষষ্ঠী এই দুইদিন ঢাক-ঢোলের হাটকে ঘিরে কটিয়াদীতে জমজমাট থাকে উৎসব আমেজ। এই হাটটি প্রায় পাঁচ শতাব্দী পূর্বে রাজা নবরঙ্গ রায় প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।

হাটের দুই দিন কয়েকশ বাদকদলের বাজনায় কটিয়াদীর পুরান বাজারে উৎসবের আবহ হয়। বাদ্য-বাজনার সুর উপভোগ করতে ভিড় করে মানুষ। ঢাকের বাজনা ছাড়া দুর্গাপূজার কোনো আনুষ্ঠানিকতাই যেন পূর্ণতা পায় না এখানে। মহাষষ্ঠী থেকে বিসর্জন-সবখানেই চাই ঢাকের আওয়াজ। সম্ভবত এ প্রয়োজন থেকেই কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে শত শত বছর ধরে দুর্গোৎসবের সময় বসে এ ঢাকের হাট।

পূজোর পূর্বেই এখানে জমে উঠে ঢাকীর বাদ্যে জমজমাট সুরেলা আসর। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ঢাকীরা নৃত্যের তালে তালে তাদের যোগ্যতা প্রমাণের চেষ্টা চালায়, সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।
 


প্রতিবছরই এই ঢাক-ঢোলের হাটে বৃহত্তর ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকার বিক্রমপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুলসংখ্যক বাদ্যযন্ত্রীরা আসেন।

শুধু ঢাক বা ঢোল নয়, বাঁশি, সানাই, করতাল, খঞ্জনি, মন্দিরা, কাঁশি, ঝনঝনিসহ বিভিন্ন ধরণের বাদ্যযন্ত্র নিয়ে হাজির হন বাদক দল। হাজার হাজার বাদ্যযন্ত্রের পসরা বসে এখানে। নাচসহ বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে বাদ্যযন্ত্রীরা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে থাকে। সাধারণত একটি ঢাক ১৫ হাজার, ঢোল ৮ হাজার, বাঁশি প্রকারভেদে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ব্যান্ডপার্টি ছোট ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার এবং বড় ৬০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকায় ভাড়া হয়ে থাকে। বাদ্যযন্ত্রীরা পূজামন্ডপে বাজনা বাজিয়ে দর্শক ও ভক্তদের আকৃষ্ট করেন।

বিক্রমপুর থেকে আসা ঢাকী রতন কুমার সরকার বলেন, আমার বয়স ৬৫ বছর। আমার একটি ৬জনের দল আছে। প্রতিবছরই এ হাট থেকে বাজনা বাজিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চুক্তিতে যাই। এ বছর এখনো চুক্তি হয়নি। তবে আলাপ চলছে ।

হবিগঞ্জ থেকে আসা সানাই বাদক বাদল পোদ্দার জানান, ঢাকী, ঢুলি, ঝনঝনি, সানাই, করতাল ও কাসরসহ তাদের দলের লোকেরা কাজ করে। গতবছর ৬০ বাজার টাকার চুক্তিতে বিজয়া দশমী পর্যন্ত জামালপুরে একটি পূজামন্ডপে গিয়েছিলেন। এবছর বিভিন্ন জায়গার লোকজনের সঙ্গে কথা চলছে।
 


বিজয় কৃষ্ণ তালুকদার টাঙ্গাইল থেকে ঢাকের বায়না করতে এসেছেন। তিনি জানান, প্রতি বছরই  কটিয়াদীর ঐতিহ্যবাহী  ঢাকের হাটে আসা হয় তার। পূজার আগে গত বছরও এখান থেকে একটি দলকে বায়না করেছিলাম। এ বছর আমাদের পূজার আয়োজন বড় হয়েছে, তাই বড় একটি দল ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে নেওয়ার চেষ্টা করছি।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বেনী মাধব ঘোষ জানান, জনশ্রুতি আছে ষোড়শ শতাব্দির প্রথম ভাগে রাজা নবরঙ্গ রায়ের আমলে কটিয়াদীতে  প্রথম ঢাকের হাটের সূচনা হয়। তিনি ওই সময়  রাজপ্রাসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন করতেন। একবার তিনি পূজার প্রয়োজনে সেরা ঢাকির সন্ধানে বিক্রমপুর পরগণায় বার্তা পাঠান। তখন নৌপথে বহু ঢাকি কটিয়াদী আসেন। রাজা নিজে বাজনা শুনে সেরা দলটি বেছে নেন। সেই থেকেই প্রচলন শুরু এ ঢাকের হাটের।

কটিয়াদী পৌরসভার মেয়র শওকত উসমান শুক্কুর আলী জানান, বাংলাদেশের কোথাও এ ধরনের বাদ্যযন্ত্রের হাট নেই। ঐতিহ্যবাহী ঢাক-ঢোলের এই হাট  কটিয়াদীর কয়েক শতাব্দীর ঐতিহ্য।




রাইজিংবিডি/কিশোরগঞ্জ/২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭/রুমন চক্রবর্তী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়