ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

‘কথা না শুনলে সাইজ করে দেব’

এম.শাহীন গোলদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘কথা না শুনলে সাইজ করে দেব’

আশাশুনি সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি আশরাফুজ্জামান তাজ

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : ‘এখানে চাকরি করতে হলে আমাদের কথা মতো চলতে হবে। না হলে সাইজ করে দেব।’ সাতক্ষীরার আশাশুনি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের অফিস ভাংচুরের পর এভাবেই শাসিয়েছেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি আশরাফুজ্জামান তাজ।

সামান‌্য ঘটনায় কলেজ অধ‌্যক্ষকে লাঞ্ছিত ও মারধর করার পর এভাবে শাসানো হয়। অধ‌্যক্ষের ওপর তিন দফা হামলা ও তাঁর অফিস ভাংচুর করে ছাত্রলীগের সভাপতি তাজসহ তার অনুসারিরা।

এ ঘটনায় মামলা করলে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি আশরাফুজ্জামান তাজসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সালাম জানান, অধ্যক্ষ মামলা দেওয়ার পর আশরাফুজ্জামান তাজ ও তার সহযোগী ছাত্রলীগ নেতা আল মামুনকে সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান এ বিষয়ে আশাশুনি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান জানান, গত শনিবার সন্ধ্যায় তিনি তার কয়েকজন সহকর্মীকে সাথে নিয়ে নিজ কক্ষে অফিসিয়াল কাজ করছিলেন। এ সময় এক যুবক গিয়ে তাকে সালাম দিয়ে একটু রুমের বাইরে যেতে অনুরোধ করে।

বাইরে বেরুনোর পরপরই তার সামনে আরেকটি ছেলেকে কয়েকজন ছাত্র মিলে বেদম মারধর করতে থাকে। বিষয়টি জানতে চাইলে তারা জানায়, মারধরের শিকার ছেলেটি সাতক্ষীরা থেকে একটি মেয়েকে এনে কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে অনৈতিক আচরণ করেছে। অধ্যক্ষ ছেলেটিকে মারধর না করে তার কাছে দিতে বলেন। আক্রান্ত ছেলেটির অভিভাবককে ফোন করে ডেকে আনেন অধ‌্যক্ষ। একই সময় সেখানে পুলিশও পৌঁছায়। পরে পুলিশ থানায় নিয়ে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় অজ্ঞাত পরিচয়ের ছেলেটিকে।

অধ্যক্ষ আরো জানান, ছেলেটিকে তাদের হাতে কেনো দেওয়া হলো না এই কৈফিয়ত তলব করে তাঁর ওপর হামলা করে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি আশরাফুজ্জামান তাজ, তার সহযোগী শাওন, আল মামুন, সাইফুল্লাহসহ তাদের ৭/৮ জন সমর্থক। সে সময় তারা অধ‌্যক্ষের কক্ষে ভাংচুর করে। এভাবে পরপর তিনবার ছাত্রদের হামলার শিকার হন অধ‌্যক্ষ। প্রচণ্ড আক্রোশে তারা অধ‌্যক্ষকে চড়-কিল- ঘুষিও মারে। ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়।

অধ‌্যক্ষ বলেন, “সহকর্মী শিক্ষকরা হামলাকারীদের কবল থেকে আমাকে রক্ষার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সহকর্মীরাও কমবেশি লাঞ্ছিত হন। সে সময় তাজ আমাকে হুমকি দিয়ে বলে, ‘এখানে চাকরি করতে হলে আমাদের কথা মতো চলতে হবে। না হলে সাইজ করে দেব।’ অধ্যক্ষ আক্ষেপ করে বলেন, এসব সন্তানতুল্য ছেলেদের হাতে বারবার লাঞ্ছিত হয়ে আমরা যেনো মরে গেছি।”

তিনি জানান, বিষয়টি তিনি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছেন। একইসাথে হামলাকারীদের নাম উল্লেখ করে আশাশুনি থানায় একটি মামলা করেছেন।

আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুস সালাম বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। মামলার পর সোমবার রাতেই আশরাফুজ্জামান তাজ ও আল মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান জানান, তাজ ও অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হলেই সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

রাইজিংবিডি/সাতক্ষীরা/১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯/শাহীন গোলদার/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়