ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কমছে বইয়ের দাম, কারিকুলামে আসছে পরিবর্তন

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৩, ১ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কমছে বইয়ের দাম, কারিকুলামে আসছে পরিবর্তন

গত দশ বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও শিশুদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দেবে সরকার। বছরের প্রথম দিনে বই উৎসব পালনের প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।  

বই উৎসব শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন আনন্দের, তেমনই আনন্দ অভিভাবকদেরও। এ আনন্দের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (বাপুস)। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে ২০ থেকে ৪২ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হচ্ছে সব ধরনের বইয়ের দাম।

পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে পাঠ্যসহায়ক বই, রেফারেন্স বুক, প্র্যাকটিস বুক, অনুশীলন বই, র‌্যাপিড রিডার, মাদ্রাসা ও কলেজের বইসহ অন্যান্য সাধারণ বইয়েরও দাম কমানো হচ্ছে।

বাপুসের সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, জাতীয় স্বার্থে বইয়ের দাম কমানো হচ্ছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ছাত্রছাত্রীরা এর সুফল পাবেন। চলতি বছরে ষষ্ঠ শ্রেণির একটি ইংরেজি ব‌্যাকরণ বইয়ের দাম ছিল ৪৪৫ টাকা। নতুন বছরে সেটি হবে ২৬৫ টাকা। একই শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের বর্তমান মূল্য ৩৯০ টাকা। এর দাম হবে ২২৪ টাকা।

সাহিত‌্যের বই ছাড়া সব ধরনের বইয়ের দাম কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ প্রকাশক।  

পরিবর্তন আসছে শিক্ষাব্যবস্থায়: 

আধুনিকায়নের লক্ষ‌্যে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থার বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে বিভাগ তুলে দেয়া হবে। এখন উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিভাগ নির্বাচন করতে হবে। পাবলিক পরীক্ষায় নম্বর কমানো হবে। বাড়ানো হবে ক্লাস মূল্যায়ন পরীক্ষার নম্বর।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, নবম শ্রেণি থেকে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ পছন্দের সুযোগ আর থাকবে না। ২০২৩ সাল থেকে নবম-দশম শ্রেণির সব শিক্ষার্থী একই কারিকুলামের একই পাঠ্যবই পড়ার সুযোগ পাবে। একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে বিভাগ বিভাজন শুরু হবে। এতে একজন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্তরে সব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে পারবে। ২০২১ সালে প্রথম ও ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নতুন কারিকুলাম ও বই পাবে।

শিক্ষার্থীদের কাছে যথাসময়ে বই পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে এ স্তরের নতুন কারিকুলাম চূড়ান্ত হবে ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে। ২০২২ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির এবং ২০২৩ সালে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইও পরিবর্তন করা হবে। পাশাপাশি ২০২২ সালে সপ্তম, নবম ও একাদশ শ্রেণির পাঠ্যবই পরিবর্তন হবে। ২০২৩ সালে পরিবর্তন আনা হবে অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে।

সূত্র জানায়, কারিকুলাম পরিবর্তনের পাশাপাশি পাঠ্যবইও বদলে যাবে। এবারই প্রথমবারের মতো প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কারিকুলাম একসঙ্গে পরিবর্তন ও সমন্বয় করা হচ্ছে। পরিবর্তিত কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পাঠ্যবইয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জঙ্গিবাদ, নিরাপত্তার বিষয়গুলো যুক্ত করা হবে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি হাতে-কলমে দেখানোর বিষয়েও গুরুত্ব দেয়া হবে। যুক্ত থাকবে খেলাধুলাও।

পাবলিক পরীক্ষার সংখ্যা ও নম্বর কমিয়ে এনে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়নের পরিমাণ বাড়ানো হবে। শ্রেণিকক্ষে সব বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নে ২০ নম্বর রাখা হবে। এতে পাবলিক পরীক্ষায় নম্বর কমে যাবে। বর্তমানে গার্হস্থ্য অর্থনীতি/কৃষিশিক্ষা পরীক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন কারিকুলামে যুক্ত হবে সব বিষয়।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেছেন, ‘কারিকুলাম পরিবর্তনের কাজ ২০১৭ সালে শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন সম্পন্ন করার টার্গেট রয়েছে।

বইয়ের মানে আপস নয়: 

এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, কিছু অসাধু মুদ্রাকর নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার অপচেষ্টা করেছেন। কেউ কেউ পাঠ্যপুস্তকে নিম্নমানের কাগজ, কালি ও অন্যান্য উপকরণও ব্যবহার করেছেন। যারা এমন অনিয়ম করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানোসহ নানা অনিয়মের কারণে সাতটি ছাপাখানার প্রায় ১ লাখ কপি বই ধ্বংস করা হয়েছে। যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বই দিতে পারেনি তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এনসিটিবির সদস্য (টেক্সট) অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, যারা নির্ধারিত সময়ে বই দিতে পারেনি, তাদের ওই লটের বইয়ের মোট টাকার (মূল্য) ওপর ১০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে। কেউ মাফ পাবে না। আর নিম্নমানের একটি বইও গ্রহণযোগ্য হবে না।

শতভাগ বই স্কুলে: 

১ জানুয়ারি বই উৎসব পালনের উদ্দেশ্যে এবার প্রাথমিক স্তরের জন্য ১০ কোটি ৫৪ লাখ ২ হাজার ৩৭৫ ও মাধ্যমিক স্তরের জন্য ২৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার ১৭৯ কপি বই ছাপানো হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুলে বই পৌঁছেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুটি ভেন্যুতে আলাদা বই উৎসবের আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘কিছু সমস্যা থাকলেও আমাদের বইয়ের প্রায় শতভাগই উপজেলায় চলে গেছে। ১ জানুয়ারি বই উৎসবকে মাথায় রেখে এই সময়ের মধ্যেই আমরা বিশাল এই কর্মযজ্ঞ শেষ করে এনেছি।’



ঢাকা/ইয়ামিন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়