ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন সাতক্ষীরার আম চাষি

এম.শাহীন গোলদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৬ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন সাতক্ষীরার আম চাষি

করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরার আম চাষীরা।

দিন দিন আম পাকার সময় ঘনিয়ে আসছে। এদিকে, মহামারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাড়ছে সাধারণ ছুটিও। ফলে দেশে চলছে এক রকম স্থবিরতা।

সারাদেশে গণ-পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় আম জেলাসহ সারা দেশের বাজারে কীভাবে পৌঁছানো যায় তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন এখানকার আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

এছাড়া, অন্যান্য জেলার তুলনায় সাতক্ষীরার আম আগে পাকে। আর স্বাদে, গুণে ও মানে অনন্য হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরেই সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস ও ক্ষিরসরাই আম রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।

ইতোমধ্যে দেশের সীমানা পেরিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাতক্ষীরার আম বেশ সাড়া জাগিয়েছে। কিন্তু করোনায় বিশ্ববাজার ধরা যাবে কি না তা নিয়েও আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের সংশয় কাটছে না।

কৃষি বিভাগ বলছে, অন্যান্য জেলার তুলনায় ১৫-২০ দিন আগে সাতক্ষীরার আম পেকে যায়। তাই রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জকে পেছনে ফেলে রপ্তানি বাজারে বিশেষ গুরুত্ব পায় সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর ও আম্রপালি আম।

এছাড়া, সারাদেশেও রয়েছে এ জেলার আমের বিপুল চাহিদা। তাই রপ্তানি ও দেশের চাহিদা মেটাতে জৈব পদ্ধতিতে কেমিক্যাল ও ক্ষতিকর কীটনাশক মুক্ত আম উৎপাদনে করোনার মধ্যেও বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
 


সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এ লক্ষ্যে জেলার প্রায় ৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে ৩ হাজার ৯৮৯টি বাগানে আম গাছ পরিচর্যা করা হচ্ছে।

এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমির ১ হাজার ৫৫০টি বাগানে ১২ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন, তালায় ৭১৫ হেক্টর জমির ১ হাজার ৪৭৫টি বাগানে ৭ হাজার ৭০ মেট্রিক টন, কলারোয়ার ৬৫০ হেক্টর জমির ১ হাজার ৩৬০টি বাগানে ৬ হাজার ৪০ মেট্রিক টন, কালিগঞ্জে ৮২৫ হেক্টর জমির ১৪২টি বাগানে ৮ হাজার ৮২০ মেট্রিক টন, আশাশুনিতে ১৪০ হেক্টর জমির ১৯০টি বাগানে ১ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন, শ্যামনগরে ১৬০ হেক্টর জমির ১৫০টি বাগানে ১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন আম ও দেবহাটায় ৩৮০ হেক্টর জমির ৪৭৭টি বাগানে ৩ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

এদিকে, সাতক্ষীরা জেলা থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩১.৮৩ মেট্রিক টন এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৭ মেট্রিক টন নিরাপদ ও বালাইমুক্ত আম ইতালি, ডেনমার্ক, সুইডেন ও ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। চলতি মৌসুমেও ১৯-২০ অর্থবছরে ৩২ মেট্রিক টন আম রপ্তানির লক্ষ্যে জেলার ৩০ জন আম চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নলকুড়া গ্রামের আম চাষি ও বিদেশে আম রপ্তানিকারক শেখ আব্দুল আলিম জানান, করোনায় হাট বাজার প্রায় বন্ধ। তাই দুশ্চিন্তায় রয়েছে আম চাষিরা। সারা বছরের আয়-রোজগারের জন্য আমের ওপরই ভরসা করেন বহু ব্যবসায়ী। অনেকে ঋণ নিয়ে বাগান কিনে রাখেন আগেভাগেই। কিন্তু এবার করোনার কারণে ব্যবসায়ীরাও চিন্তায় রয়েছেন। কারণ ইউরোপের বাজার না ধরতে পারলে অনেক লোকসান গুনতে হবে। অনেককে এই পেশা ছাড়তে হবে।

করোনায় এবার দেশের আম ইউরোপে যাবে কী-না তা নিয়ে সন্দিহান আছেন সাতক্ষীরার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. নরুল ইসলাম। তিনি জানান, করোনার কারণে শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থা ঠিক কবে ঠিক হবে তা ঠিক করে বলা যাচ্ছে না। তাই কৃষকদের লোকসান কাটাতে হলে এখনই বিকল্প বাজার ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।

 

সাতক্ষীরা/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়