ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

করোনার গুরুত্বপূর্ণ ১০ শিক্ষা (শেষ পর্ব)

খালেদ সাইফুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩০, ১৪ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনার গুরুত্বপূর্ণ ১০ শিক্ষা (শেষ পর্ব)

করোনাভাইরাসের মহামারির ঝক্কি সামাল দিতে নাকানিচুবানি খাচ্ছে পুরো বিশ্ব।

মহামারির এই সংকট আমাদেরকে নানা বিষয়ে নতুন করে ভাবতে শিখাচ্ছে। এটি রাষ্ট্র ও সমাজের মূলে আঘাত হেনেছে, অনেক দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে তুলেছে। অর্থনীতি এমন কঠিন সময় পার করছে যে অনেকেই মনে করছেন এই ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে। অনেক শিল্পকারখানা আংশিক কিংবা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

মানুষকে পুরোপুরি গৃহবন্দী জীবনযাপন করতে হচ্ছে। ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ যাদের আছে তারা রীতিমতো ভাগ্যবান, কিন্তু অন্যদের হাত গুটিয়ে বসে দিনগোনা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

মহামারির এই সময়ে বিশ্বব্যাপী মানুষ যেসব বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে সেসব নিয়ে দুই পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ পড়ুন শেষ পর্ব।

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল: আপনি একজন কোটিপতি হতে পারেন, কিন্তু আপনি যদি আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন না নেন, তাহলে অসুস্থতার সময়ে আপনার এসব টাকা-পয়সা আপনার কোন কাজে আসবে না। সুখে থাকার জন্য ধন-সম্পদের চাইতে সুস্বাস্থ্যই মূল। এই মহামারির সময়ে আমরা ইতোমধ্যেই তা টের পেয়েছি। শরীরই হলো আমাদের মূলধন। তাই এর যথাযথ যত্ন না নিলে এ ধরনের ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিরোধ করার সক্ষমতা শরীর হারিয়ে ফেলতে পারে। এখন আমরা বুঝতে পারছি, ভালো খাবার শুধু আমাদেরকে সুদর্শনই করে না, বরং করোনাভাইরাসের মতো নানা রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি যোগায়।

আমাদের পাশেই রয়েছে প্রকৃত বীরেরা: সিনেমায় অসাধ্য সাধন করা হিরোরা এই মুহূর্তে কিছুই করতে পারছে না। ঘরে হাত গুটিয়ে বসে থাকা এবং মানুষের জন্য অর্থ খরচ করা ছাড়া এই মুহূর্তে তাদের আর কিছুই করার নেই। কিন্তু এই সংকটকালীন সময়ে প্রকৃতই যারা মানুষের জন্য যুদ্ধ করছে তারা হলো হাসপাতালের চিকিৎসকরা। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে সবসময়। অনেকেই মানুষের জীবন রক্ষা করতে গিয়ে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে দিচ্ছেন। চিকিৎসক ও নার্সরা নিজেদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর অপ্রতুলতা সত্ত্বেও হাজার হাজার রোগীদেরকে সামাল দিয়ে যাচ্ছেন।

আমাদের পাশেই আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদিদ্রব্যের দোকান খোলা রেখে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দোকানিরা। অন্যরা যখন সকল কাজ ছেড়ে ঘরে বসে আছে তখন আমাদের বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সব সামগ্রীর প্রয়োজন মেটাচ্ছে এইসব মানুষেরাই। এই মহামারির আগে আমরা এসব মানুষের গুরুত্ব অনুধাবন করিনি, কিন্তু এরাই আমাদের জন্য নিজেদেরকে ঝুঁকির মধ্যে রাখছে।

সব মানুষ এক হয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছে: করোনার বিস্তার রোধে মানুষ রাজনৈতিক ভেদাভেদ, জাতিভেদ, বর্ণভেদ সবকিছুকে দূরে সরিয়ে এক হয়ে লড়াই করছে এবং সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। মানবজাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা শিখছি, মানুষ অন্তর্নিহিতভাবে সকল ভেদাভেদের উর্ধ্বে এবং সকলেই সমান। আমাদের সকলেরই পরিচয় আমরা মানুষ এবং টিকে থাকার জন্য আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে এমন সব জিনিসকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। একে অপরের বিরুদ্ধে না দাঁড়িয়ে বরং সব মানুষ এক হয়ে কাজ করলেই কেবল এমন ব্যাপক মহামারি রুখে দেওয়া সম্ভব। এই লড়াই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সমগ্র মানবজাতির লড়াই।

সব মানুষের খাপ খাওয়ানোর নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে: করোনার আতঙ্কে অনেকেই অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস রেখে টয়লেট পেপার কিনতে শুরু করেছিল, অনেকেই অনলাইনে যুক্তিতর্কের লড়াই করেছে, অনেকেই ঘরে থাকতে চাননি আবার অনেকেই ঘরবন্দি জীবনের একঘেয়েমি থেকে বাঁচতে নাচের ভিডিও করেছে। কিন্তু এসব কিছুই মানুষ করেছে কী হতে চলেছে এই ভয়, হতাশা ও দুঃখ থেকে। মানুষ নিজের মতো করে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেছে। সকলেরই কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার আলাদা আলাদা পন্থা রয়েছে।

প্রকৃতি আমাদেরকে ধ্বংস করে দিতে পারে: করোনা মহামারি আমাদের দুর্ভেদ্য শক্তি সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিবর্তন করেছে। প্রকৃতির উপর নিয়ন্ত্রণ আনার অলীক কল্পনাকেও ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। মানুষের তৈরি আল্ট্রা অ্যাডভ্যান্স সিস্টেম থেকেও প্রকৃতি অনেক শক্তিশালী। এর শক্তির সাথে কোনো কিছুরই তুলনা হতে পারে না। এমনকি বুদ্ধিমান মাথাও ধারণা করতে পারবে না, প্রকৃতি কত দ্রুত এক নিমেষেই আমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে পারে। আমাদের বোধের বাইরেও প্রকৃতিতে অনেককিছুই আছে যা মোকাবেলার জন্য আমাদের সামান্য প্রস্তুতিও নেই।

করোনাভাইরাসের লড়াই করার জন্য বিশ্বের গবেষণাগারগুলো সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করে চলেছে। তাই বলা যায়, এই মহামারি প্রকৃতি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

পড়ুন:


ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়