ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনার নতুন হট স্পট কক্সবাজার

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ৩ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
করোনার নতুন হট স্পট কক্সবাজার

নানা কারণে দেশে ও বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে পরিচিত পর্যটন নগরী কক্সবাজার। তবে দিন দিন কক্সবাজার এখন করোনার নতুন হট স্পটে পরিণত হচ্ছে। এ জেলায় বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। একই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও।

তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে কক্সবাজারকে রেড জোন ঘোষণা করে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল ও বিশেষজ্ঞরা।

তবে পুরো কক্সবাজারকে জেলাকে রেড জোন ঘোষণা নয়; সংক্রমণের হার দেখে উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও ওয়ার্ড ভিত্তিক রেড, গ্রিন ও ইয়েলো জোনে ভাগ করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।

কক্সবাজার মেডিকেল ল্যাবের দেওয়া তথ্য মতে, গত ৬২ দিনে মোট সাত হাজার ২৮১ জন সন্দেহভাজন রোগীর করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হয় তাদের ল্যাবে। এরমধ্যে ৯৩৫ জনের রিপোর্ট করোনা পজিটিভ এসেছে। কক্সবাজার জেলার রয়েছে ৮৫৬ জন। মহেশখালীর ৩৪ জন, টেকনাফে ৩৮ জন, উখিয়ায় ১১০ জন, রামুতে ৫০ জন, চকরিয়ায় ১৮১ জন, কক্সবাজার সদরে ৩৫৭ জন, কুতুবদিয়ায় তিন জন এবং পেকুয়ায় ৪৭ জন।

এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রয়েছে ২৯ জন রোহিঙ্গা। অন্যরা কক্সবাজার জেলার নিকটবর্তী বান্দরবান জেলার বাসিন্দা এবং চট্টগ্রামের চাঁদগাঁও, সীতাকুঞ্জ, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার বাসিন্দা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য মতে, ইতোমধ্যে করোনায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন কক্সবাজার জেলায় মোট ১৪২ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় সুস্থ হয়েছেন ২২ জন, রামুতে দুজন, চকরিয়ায় ৭০, পেকুয়ায় সুস্থ ২১, মহেশখালীতে দুজন, উখিয়া ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সুস্থ সাত জন ও টেকনাফে সুস্থ আট জন।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শাহীন আব্দুর রহমান বলেন, ‘‘কক্সবাজারে শুরু থেকে লকডাউন থাকলেও সেভাবে মানা হয়নি। যে কারণে এ পর্যায়ে এসে কক্সবাজার করোনার নতুন হট স্পটে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে, কক্সবাজার সদর উপজেলার পৌরসভায় এর সংক্রমণের হারটা বেশি।

‘এখন যেহেতু সীমিত আকারে সব খুলছে তাই সবাইকে কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। যেমন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা (যদি নিজের সন্দেহ লাগে তাহলে বাসায়ও মাস্ক পরা), হ্যান্ড গ্লাভস বেশি ব্যবহার না করা। কারণ হ্যান্ড গ্লাভস বেশি ব্যবহার করলে তার জীবাণু নাকে ও চোখে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ বিষয়গুলো মেনে চলা খুবই জরুরি।”

তিনি আরও বলেন, ‘কক্সবাজারে সংক্রমণ যেহেতু বাড়ছে; তাই এ মুহূর্তে যদি জেলাকে রেড জোন বিবেচনা করে প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এটা কমে আসার আসবে। যদিও বা রেড জোন ঘোষণাটা সম্পূর্ণ প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে।’

রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল বড়ুয়া বলেন, ‘এ মুহূর্তে কক্সবাজার জেলাকে রোড জোন ঘোষণা করা প্রয়োজন। কারণ, দিন দিন কক্সবাজারে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। কেউ কেউ সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মানলেও অধিকাংশ মানুষই মানছেন না। তাই প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে; কক্সবাজারে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে রেড জোন ঘোষণা করে অন্তত দুই সপ্তাহ কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার। তাহলেই সংক্রমণ কমে আশার সম্ভাবনা রয়েছে।’

এদিকে নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ কক্সবাজার জেলাকে দ্রুত রেড জোন ঘোষণা করে কারফিউ জারি না করলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

এব্যাপারে কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবার প্রস্তুতি এ মুহূর্তে কক্সবাজারে নাই। তাই অন্তত আগামী ১৫ দিন কক্সবাজারে গণ-কারফিউ দিয়ে চলমান টেস্ট রিপোর্টের ওপর রোগীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আর তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের টেস্ট রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই কক্সবাজারে করোনার সংক্রমণ কমানো সম্ভব।’

কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই প্রশাসন নিরসলভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে কোনো ধরনের সচেতনতা নেই। কেউ সামাজিক দূরত্ব, হাত ধোয়া কিংবা মাস্ক পরার নিয়ম মানছেন না। আবার দেখছি, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরও কক্সবাজার থেকে মহেশখালী ঘুরতে যাচ্ছে। তাহলে কক্সবাজারে কীভাবে করোনা সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হবে, মানুষ যদি সচেতন না হয়? প্রশাসনের পক্ষ থেকে তো সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যেহেতু দেশকে তিনটি জোনে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে; এ সিদ্ধান্তের আওতায় কক্সবাজারকে রেড জোনে ভাগ করে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে হবে। তার জন্য প্রশাসনকে সর্বাধিক কঠোর হতে হবে। আরেকটি বিষয় প্রশাসনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে, সেটি হলো কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প যেন খুলে দেওয়া না হয়। এব্যাপারে আমরাও প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাব।’

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহাবুবর রহমান জানান, করোনায় এ পর্যন্ত কক্সবাজারে মৃত্যু বরণ করেছেন ১৬ জন। তারমধ্যে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের একজন রোহিঙ্গা রয়েছে। কক্সবাজারে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে এটা সত্য। জেলা সব তথ্য কিন্তু জাতীয় কমিটির কাছে রয়েছে। সুতরাং, কক্সবাজারকে কিভাবে করোনার সংক্রমণ ঠেকাবে তার সিদ্ধান্ত জাতীয় কমিটি নেবে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন জানান, কক্সবাজার পুরো জেলাকে রেড জোন ঘোষণা করা হবে না। তবে এলাকাভিত্তিক জোনে ভাগ করা হবে। যেমন উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও ওয়ার্ড। যে এলাকায় করোনা সংক্রমণের হার যেমন হবে ঠিক সেভাবে ওই এলাকাকে রেড, গ্রিন ও ইয়েলো জোনে ভাগ। সংক্রমণের হার যদি বেশি হয়, তাহলে ওই এলাকা লকডাউন করে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

কক্সবাজার/এসএম/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়