ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনার ভয়ে অবসর চাননি ডা. জাহাঙ্গির, রোগীদের সেবা দেবেন

জে.খান স্বপন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪২, ৫ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনার ভয়ে অবসর চাননি ডা. জাহাঙ্গির, রোগীদের সেবা দেবেন

করোনাভাইরাস শনাক্তের পিসিআর মেশিন চালানোর ভয়ে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরের খবরকে ‘গুঞ্জন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. এটিএম জাহাঙ্গির হুসাইন।

রোববার রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এই মহামারি সময়ে দেশের মানুষের জন্য সব কিছু দিয়ে কাজ করার প্রত্যয় জানিয়েছেন তিনি।

করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) মেশিন পরিচালনার ভয়ে স্বেচ্ছায় চাকুরি থেকে অবসরে যাওয়ার কথা ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে জনবল সংকট রয়েছে। কলেজের ভাইরোলজি বিভাগটিতে জনবল শূন্য থাকায় তিনিসহ দুই শিক্ষক ওই বিভাগটির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। দুই বিভাগ সামলাতে তাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে অনেক আগ থেকে কলেজ অধ্যক্ষের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। তবুও দুইটি বিভাগই তিনি পরিচালনা করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার বিষয়ে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, বিষয়টি পুরোপুরিই গুঞ্জন। এ বিষয়ে তিনি কোন প্রকার আবেদন করেননি বলে দাবী করে তিনি  বলেন, ‘আমি একটি বিভাগের প্রধান ও একজন অধ্যাপক এবং একজন শিক্ষক। দেশের এই অবস্থায় জীবনের ভয়ে চাকরি ছেড়ে অবসরে যাওয়া কি শোভা পায়? তাহলে শিক্ষক হয়ে যাদের শিক্ষা দিলাম, তারা আমার কাছ থেকে কি শিখল?’

তিনি আরো বলেন, ‘মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে আমিসহ দু’জন শিক্ষক-চিকিৎসক রয়েছেন। ছয়জন টেকনিশিয়ানের থাকার কথা থাকলেও দু’জন মাত্র টেকনিশিয়ান রয়েছে। তাদের দিয়েও ভরসা করা যায় না। করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য তিন মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হয়। সেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করে যে কোম্পানি মেশিনটি সরবরাহ করেছে, তাদের মাধ্যমে সাত দিনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের এ প্রশিক্ষণ কতটুকু কাজে আসবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সামান্য ভুলেই বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

‘দূর্যোগের সময় দেশের মানুষের জন্য সবকিছু দিয়েই কাজ করবো, জাতি ও দেশের প্রয়োজনে তাদের পাশে আছি ও থাকবো। আশা করি, আগামী দুই এক দিনের মধ্যেই পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) মেশিনটি চালু করে জনগনের সেবা করতে পারব।’

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. অসীত ভূষণ দাস রাইজিংবিডিকে বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে এ খবরটি আমার কানেও এসেছে, তবে অফিসিয়ালি কারো পদত্যাগপত্র আমি পাইনি। বরং তিনি (ডা. এটিএম জাহাঙ্গির হুসাইন) খুবই দ্রুততার সঙ্গে ভাইরোলজি বিভাগটিতে জনবল নিয়োগের জন্য আমার কাছে আবেদন করেছেন। এমনকি প্রতি মুহূর্তে এ বিষয়ে আমাকে তাগিদ দিচ্ছেন।’

কলেজ অধ্যক্ষ আরো বলেন, ‘শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে বর্তমানে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে দুই জন সহকারি অধ্যাপক ও দুই জন টেকনিশিয়ান রয়েছে। এখন আমাদের কলেজের ও হাসপাতালের যে জনবল রয়েছে, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ শুরু করতে চাই। তারপরও আমরা দুই জন সহকারী কিংবা সহযোগী অধ্যাপক, দুই জন টেকনিশিয়ান ও দুই জন ভাইরোলজিস্ট চেয়েছি কর্তৃপক্ষের কাছে। আশা করি, দ্রুত এ জনবল দেওয়া হবে। সার্বিক দিক ঠিক থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করতে পারব।’

বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন রাইজিংবিডিকে জানান, ‘কোন কিছু নিয়ে শঙ্কার কোন কারণ দেখছি না, সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে এগিয়ে চলছে। ডা. এটিএম জাহাঙ্গির হুসাইনের পরিচালনায়ই পিসিআর মেশিনের কার্যক্রম শুরু হবে এবং আমরা করোনা মোকাবিলায় আরো এগিয়ে যাবো।’


বরিশাল/জে. খান স্বপন/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়