ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

করোনায় করুণ দশা পাখিদের, বাঁচানোর চেষ্টা করছেন হারুন

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ১৮ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনায় করুণ দশা পাখিদের, বাঁচানোর চেষ্টা করছেন হারুন

পাখি ভালোবাসতেন মো. হারুন-অর-রশিদ। শখের বশে পাখি পালতেন তিনি। প্রায় বছর তিনেক আগে পাখি নিয়ে ব‌্যবসা শুরু করেন হারুন। বিভিন্ন প্রজাতির পাঁচ শতাধিক পাখি দিয়ে সাজানো হারুনের দোকান ‘পাখির মেলা’।

কিশোরগঞ্জ শহরের হরিজন পল্লির সামনে একটি দোকানঘর ভাড়া নিয়ে শুরু করেছিলেন পাখি কেনা-বেচার ব‌্যবসা। পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের খাঁচা ও পাখির খাদ‌্যও বিক্রি করতেন তিনি। এ ব্যবসাতেই চলত তার সংসার। তাই পাখিদের প্রতি তার অন‌্যরকম ভালোবাসা কাজ করত। সব সময় তাদের খেয়াল রাখা, খাবার দেওয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কাজটাও খুব যত্নের সঙ্গে করতেন।  

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে থমকে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা। করোনার সংক্রমণ রোধে গত ১০ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ জেলা লকডাউন করা হয়েছে। দোকান-পাট বন্ধ রয়েছে। এতে একদিকে যেমন হারুনের রোজগার বন্ধ হয়েছে, তেমনই দোকান বন্ধ থাকায় এর ভেতর থাকা পাখিগুলোও করুণ দশার মধ্যে পড়েছে। যে দোকানটি আগে সব সময় পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত থাকত, এখন পাখিরা বেঁচে আছে মৃতের মতোই। তবে হারুনও বসে নেই। অল্প সময়ের জন্য হলেও পাখিগুলোর যত্ন নিচ্ছেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা সুমন হরিজন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পশু-পাখির প্রতি হারুন ভাইয়ের ভালবাসা সত‌্যিই প্রশংসার দাবিদার। প্রতিদিন সকালে একবার হলেও তিনি আসেন পাখিদের খাবার দিতে ও যত্ন নিতে। লকডাউনের কারণে দোকান বন্ধ থাকায় খাঁচায় বন্দি পাখিগুলো দিনের আলো-বাতাস পেতে অস্থির হয়ে আছে। মালিকের মতোই স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পাখিরাও এখন প্রহর গুনছে।’

খাঁচাবন্দি পাখিগুলোর যথাসাধ্য যত্ন করছেন হারুন। শুধু ব্যবসার জন্য নয়, পাখির প্রতি প্রেম তাকে প্রতিদিন টেনে নিয়ে আসে দোকানে। প্রায় এক মাস ঘরবন্দি থাকায় আলো-বাতাস ও খাবারের অভাবে অনেক পাখি মারা গেছে। অবশিষ্ট পাখিগুলোর ভবিষ‌্যত নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি।

হারুন-অর-রশিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি শখ থেকেই পাখি পালতে শুরু করি। পরে ব‌্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হই। প্রায় এক মাসের লকডাউনে আমার ও পাখিদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পাখিরা তো এমনিতেই খাঁচায় আজন্ম লকডাউন। জন্ম খাঁচায়, বেড়ে ওঠেও খাঁচায়। খায় প্যাকেটের খাবার। তাদেরও প্রাণ আছে, আলো-বাতাসের প্রয়োজন আছে। ঘরবন্দি থাকতে থাকতে আমার প্রায় ৫০ হাজার টাকার পাখি মারা গেছে। এভাবে চলতে থাকলে পাখিদের সাথে সাথে আমাকেও মরতে হবে।’

স্থানীয়রা বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে এরকম পশু-পাখি ও মাছের অ্যাকুরিয়ামের দোকান আছে ৮-১০টি। দোকান খোলা রাখলে আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর তোপের মুখে পড়তে হয়। ব্যবসা নয়, পশু-পাখি ও মাছগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য হলেও এমন ব‌্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা উচিত।

 

কিশোরগঞ্জ/রুমন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়