ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

করোনায় কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক কার্যক্রম স্থবির

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১৬ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
করোনায় কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক কার্যক্রম স্থবির

করোনার কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে কুষ্টিয়ার সকল সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। লালনের কুষ্টিয়ায় কোথাও বসছেনা বাউল শিল্পীদেরও আসর। শহরে নেই কোন সাংস্কৃতিক আয়োজন। বাতাসেও ভাসছে না কোন গানের সুর।

করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে কুষ্টিয়ার শিল্পকলা একাডেমি। কুষ্টিয়ার সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনেরই দরজায় তালা ঝুলছে। সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন গানের চর্চা থেকে বিরত। তবলা, হারমোনিয়ামসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রে জমেছে ধুলোর আস্তর। শিল্পীদের তৎপরতা না থাকায় দেশের অঘোষিত সাংস্কৃতিক রাজধানী কুষ্টিয়া এখন নিষ্প্রাণ।

করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন সংগীত শিক্ষকরাও। পেশাগত জীবনেই নয়, জীবন-জীবিকায়ও বড় দুর্দিন যাচ্ছে তাদের। কুষ্টিয়ার সংগীত শিক্ষক ও গায়ক আব্বাস খন্দকার বলেন, ‘গান গাওয়া একটি শিল্প। এটা মানুষের মনের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। সংগীত খুবই সাধনার বস্তু। দীর্ঘদিন এভাবে সংগীত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার কারণে সংগীত জগতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।'

তিনি বলেন, ‌‘আমরা অনেকেই আছি যারা বাসায় গিয়ে গান শেখাই, বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখাই। আজ আমাদের অনেকেই ক্লাশ করাতে যেতে পারছে না। আমরা আর্থিক সংকটের পাশাপশি সংগীত চর্চার ক্ষেত্রেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এছাড়া অনেকেরই সংসার চলে এই আয় থেকে।'

তিনি বলেন, ‘এখন করোনার কারণে কোথাও যেতে পারছি না। নিজেও গলা ছেড়ে গাইতে পারছি না। মন তো মানে না। তাই মাঝে মাঝে বাড়িতেই ডুগি, তবলা, হারমোনিয়াম নিয়ে একটু সময় কাটাই।'

কুষ্টিয়ার বিশিষ্ট বাদ্যযন্ত্র বাদক আকাশ চক্রবর্তী বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা কোন অনুষ্ঠান করতে পারছি না। একদিনে যেমন আমরা দীর্ঘ সময় সংগীত থেকে সরে আছি তেমনি অর্থনৈতিক ভাবেও শিল্পিরা ক্ষতির মুখে পড়েছে।'

তিনি বলেন, ‘গান হলো সুর সাধনার বিষয়। এটা অনলাইনে করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। মনের ভাবটা গানের সুরে আমরা বাদ্যযন্ত্রে প্রকাশ করি। অনলাইনে করতে গেলে অনেকসময় তাল হারিয়ে ফেলি।'

সুন্দররম ললিত কলা একাডেমির পরিচালক কনক চৌধুরী বলেন, ‘এই করোনার কারণে আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চায় বিঘ্ন ঘটছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় একাডেমির শিল্পীরাও তালহারা হয়ে যাচ্ছে।'

বাংলাদেশ উদীচি শিল্পী গোষ্ঠীর কুষ্টিয়া জেলা শাখার অবস্থাও একই রকম। তিন মাস খোলা হয়নি দরজার তালাও। নেই কোন কার্যক্রম। তবে শিল্পীদের সহযোগিতা করেছেন তারা, বলে দাবী সংগঠনটির। উদীচি শিল্পী গোষ্ঠীর কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সমর রায় বলেন, ‘দীর্ঘ বন্ধ থাকার কারণে আমরা চর্চা করতে পারছি না।এতে আমাদের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে সুর তো আর পুঁথি বিদ্যা না যে একবারে শেখানো যাবে।'

তিনি বলেন, ‘আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং সরকারি অনুদান থেকে স্বল্প পরিসরে শিল্পীদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। সেই সাথে আমাদের সংগঠনের ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছি।'

করোনায় তাল হারিয়ে গেছে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমিরও। নতুন ভবনের কাজ চলছে, তাই এমনিতেই ঢিলেঢালা এই একাডেমির কার্যক্রম। এর উপরে করোনার প্রাদুর্ভাবে এখন পুরোই বেতাল অবস্থা।

কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে সংগীত অঙ্গনে বড় ধরণের প্রভাব পড়ছে। এই দুঃসময়ের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। যেহেতু করোনার কারণে আমাদের একাডেমির সকল কার্যক্রম বন্ধ। এজন্য আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাশের ব্যবস্থা করেছি। যাতে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাশে অংশ গ্রহণ করতে পারে।’

 

কুষ্টিয়া/কাঞ্চন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়