ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনায় পণ্ড কোটি কোটি টাকার বৈশাখী বাণিজ্য

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ১৩ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনায় পণ্ড কোটি কোটি টাকার বৈশাখী বাণিজ্য

রাত পোহালেই পয়লা বৈশাখ, নতুন বাংলা বছরের প্রথম দিন। প্রতিবছর ধুমধাম করে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হলেও এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ঘরেই অনুষ্ঠান করতে বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। করোনার কারণে এবার পণ্ড হয়েছে বৈশাখী বাণিজ্য। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে লোকসানের আশঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা।

প্রতিবছর পয়লা বৈশাখকে সামনে রেখে কিছু দিন ধরে চলে রমরমা বাণিজ্য। বৈশাখে পোশাক, মিষ্টি, ইলিশ মাছসহ কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য বিকিকিনি হয়। সারা বছর যে পরিমাণ মিষ্টি বিক্রি হয় তার ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বিক্রি হয় পয়লা বৈশাখে। বৈশাখে পোশাক কেনার ধুম পড়ে। কিন্তু এবার পয়লা বৈশাখের আগে মার্কেট, শপিং মল বন্ধ থাকায় বৈশাখী পোশাক বিক্রি প্রায় শূন্যের কোটায়। অন্যান্য বছর বৈশাখে ইলিশের চাহিদা, বিক্রি ও দাম বেড়ে যেত। এবার ইলিশ ব্যবসায়ীদেরও মাথায় হাত। এছাড়া, বৈশাখী মেলায় নানা খাদ্যপণ্য, খেলনা, কারুপণ্যসহ নানা ধরণের দ্রব্য বিক্রি হয়। এবার বৈশাখী মেলা হবে না। ফলে অনেক ব্যবসায়ীর কপাল পুড়ছে।

ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়ানো হয়েছে। ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত  রাজধানীর সব দোকান বন্ধ থাকবে। সরকারের পরবর্তী ঘোষণার পর সিদ্ধান্ত হবে, কবে দোকান খুলবে। পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে যেসব পণ্য তৈরি করা হয়, সেগুলো ঈদ বা অন্য সময়ে বিক্রি হয় না। বৈশাখ উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।  করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা না দিলে বৈশাখে  ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হতো। কোটি কোটি বিনিয়োগ করে টেনশনে ব্যবসায়ীরা। যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। ’

তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের বাঁচিয়ে রাখতে সরকার ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সেখান থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এ ঋণ পেলে আমরা শ্রমিকদের বেতন দিয়ে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।’  

ফ্যাশন হাউজ মালিকদের সংগঠন ফ্যাশন এন্টারপ্রেনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মো. শাহীন আহম্মেদ বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে মার্চের শুরুর দিকে বেচাবিক্রি কমে যায়। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে পোশাক ব্যবসায়ীদের।’ 

দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড গ্রামীণ ইউনিক্লোর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বৈশাখ বড় উৎসব। করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা বন্ধ। এ বছর আমাদের টার্গেট পূরণ হবে না। শোরুম ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ কোটি টাকা গুনতে হচ্ছে।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমাদের উৎসবকেন্দ্রিক অর্থনীতির মধ্যে বৈশাখ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বৈশাখকেন্দ্রিক  ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৈশাখের পর করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে গেলে ঈদে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। সরকার সাড়ে ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। এ ক্ষেত্রে বৈশাখ ও অন্যান্য উৎসবের মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কথাও ভাবতে হবে। বাজেটে এসব উদ্যোক্তাকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।’


ঢাকা/আসাদ/রফিক  

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়