ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘কলকাতা থেকে ঢাকার বইমেলা বেশি প্রাণবন্ত’

অহ নওরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘কলকাতা থেকে ঢাকার বইমেলা বেশি প্রাণবন্ত’

অরুণাভ রাহারায় কলকাতার তরুণ কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। জন্মগ্রহণ করেছেন উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার শহরে। ২০১১ সালে কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে দেশ পত্রিকায় কবিতা প্রকাশ পেলে অল্প সময়ে পরিচিত হয়ে ওঠেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল করেছেন ভারতীয় তুলনামূলক সাহিত্যে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ তিনটি। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন বর্ণালী স্মৃতি পুরস্কার, উড়ালপুর সাহিত্য পুরস্কার ও সৌমেন বসু স্মৃতি পুরস্কার। সম্প্রতি কলকাতার এই তরুণ কবি একুশে বইমেলা উপলক্ষে বাংলাদেশে এসেছিলেন। এক আড্ডায় কথা বলেছেন বইমেলার বিভিন্ন দিক নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অহ নওরোজ

অহ নওরোজ : কেমন আছেন ?
অরুণাভ রাহারায় : বেশ ভালোই আছি।

অহ : প্রথমে জানতে চাই, এই যে ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে এলেন, মূলত কোনো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এসেছেন?
অরুণাভ : আমার মাতৃভাষা বাংলা। আমার জন্ম পশ্চিমবঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ, ভাষার দিক থেকে দুইটি একইরকম, কিন্তু মাঝখানে রয়েছে কাঁটাতারের একটি দীর্ঘ বিচ্ছেদ। কিন্তু কোনোরকম বিভাগে আমি বিশ্বাসী না। যাদের মাতৃভাষা বাংলা তাদের জন্য এই একুশে ফেব্রুয়ারি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দিনে বাংলা ভাষা তার মর্যাদা ফিরে পেয়েছিল। আর এসব  ঘটেছিল বাংলাদেশে, সে কারণেই এই দেশটির প্রতি আমার এতো আবেগ। প্রতি বছরই আমার মনে হয় ২১ ফেব্রুয়ারির দিন প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে দাঁড়াই, কিন্তু হয়ে ওঠে না। তাই এ বছর সংকল্প থেকেই চলে আসলাম। ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি বাজে আর আমি শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি তখন আসলেই অন্যরকম এক অনুভূতি হয় শরীরের ভেতর।

অহ: এবারই কী বাংলাদেশে প্রথম এসেছেন?
অরুণাভ: এর আগেও একবার এসেছি। কিন্তু সেবার গিয়েছিলাম রাজশাহীতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একটি উৎসবে অতিথি হিসেবে। তবে এবারে কোনো  আমন্ত্রণে নয়, নিজের ইচ্ছাতেই এসেছি। আর ঢাকায় এসে আমার কোনোভাবেই মনে হয়নি এটা অন্য দেশ। নিজের দেশই মনে হচ্ছে।

অহ: আপনি একুশে বইমেলা দেখলেন, অনেক বছর ধরে অংশগ্রহণ করছেন কলকাতা বইমেলাতেও। এই দুই মেলার মূল পার্থক্য সম্পর্কে আপনার কাছে জানতে চাই।
অরুণাভ: কলকাতা বইমেলা থেকে ঢাকার বইমেলাকে আমার বেশি প্রাণবন্ত মনে হয়েছে। এবং স্টলগুলোর সজ্জাও খুব ঝলমলে। তারপরে এতো বড় বড় স্টল সেটাও বেশ আনন্দ যোগায়। ঢাকার বইমেলা দেখলে একটি উৎসবের মতো মনে হয়, আপাত দৃষ্টিতে কলকাতা বইমেলা ঠিক ততটা নয়। আর সবথেকে বড় একটি তফাৎ যেটি সদ্য শেষ হওয়া কলকাতা বইমেলার সঙ্গে পেয়েছি সেটি হলো মেলার মাঠে কোন মাটি না থাকা। কলকাতা বইমেলা একদম ঢালাই করা, মনে হয় শপিং মল থেকে বই কিনতে এসেছে, কিন্তু বইমেলা মানে তো শপিংমল থেকে বই কেনা নয়, ফলে বাঙালি মেলা বলতে আমরা যা বুঝি সেইটা কলকাতা বইমেলায় নেই, কিন্তু আছে ঢাকা বইমেলায়। বাঙালি মেলায় আসবে একটু ধুলো গায়ে লাগবে না তাহলে তো হলো না। এটাও তো এক প্রকারের আনন্দ। এটা তো আমাদের মেলার ঐতিহ্য। তো এইদিক থেকেও মেলা হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কলকাতা বইমেলার সাথে একুশে বইমেলার একটি তফাৎ আছে। আর ঢাকা বইমেলাকে আমার অনেক বেশি আন্তরিকও মনে হয়েছে।

অহ : একুশে বইমেলা থেকে কী বই কিনেছেন?
অরুণাভ : বুদ্ধদেব গুহ’র একটি কথা আমার মনে পড়ে- ‘ভ্রমণ গন্তব্যে নেই, ভ্রমণ আছে রাস্তায়’ একুশের বইমেলা থেকে কোন বই কিনবো তেমন প্ল্যান করে এবারে আসিনি। আমি চেয়েছিলাম সবটুকু ঘুরে দেখবো আর উপভোগ করবো। তারপরও বেশকিছু বই কিনেছি। বিশেষ করে তরুণ লেখক ও আমার ঢাকার বন্ধুদের। ঢাকায় আমার অনেক লেখক বন্ধুই আছেন। তাদের সবার বই কিনেছি। আগামীবার এলে কেমন বই কিনবো সেই প্ল্যান করেই আসবো।

অহ : আরেকটি ব্যাপার একুশে বইমেলায় ঘটে, নিজের পকেটের টাকা খরচ করে বই প্রকাশ করা। বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?
অরুণাভ : আমাদের বর্তমানে বাংলা কবিতার আকাশে যারা নক্ষত্র, জয় গোস্বামী কিংবা সুবোধ সরকার, আরো অনেকেই আছেন জীবিতদের মধ্যে, তারাও কিন্তু তাদের প্রথমদিককার বই নিজের পকেটের টাকা খরচ করে করেছেন, এ কথা আমরা তাদের লেখা থেকেই জেনেছি। কলকাতা বইমেলাতেও এই বিষয়টি ঘটে থাকে। নিজের টাকা দিয়ে বই করার পরও তার লেখা যদি পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে তাহলে এতে তো আমি কোনো সমস্যা দেখি না।

অহ : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
অরুণাভ : আপনাকেও



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/অহ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়