ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে কথা হলো, স্পর্শ হয়নি

তানভীর হাসান তানু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৪, ১৫ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে কথা হলো, স্পর্শ হয়নি

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা : জন্মের পরে প্রথম নাতির মুখ দেখলেন জরিনা বেগম। নাতির বয়স এখন দুই বছর। অনেক কথা বলতে শিখেছে। অনেক গল্প হলো কিন্তু নাতিকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারেননি। স্পর্শ করার সৌভাগ্য হলো না। দুইজনের মধ্যে ব্যবধান তৈরি করে দিয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। এভাবে কষ্টের কথা বলছিলেন তিনি।  

মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বামী ও সন্তান কাঁটাতারের ওপাশের দেশে চলে যায়। আর জরিনা ও তার মেয়ে এইপাশে বাংলাদেশে থেকে যায়। গরিব হওয়ার কারণে পাসপোর্ট, ভিসা করতে পারেননি। সীমান্তে কাঁটাতারের কাছে গিয়ে ভারতের মানুষের সঙ্গে বলা যাবে শুনে রংপুর থেকে ছুটে এসেছেন জরিনা বেগম। দেখা ও কথা হয়েছে ছেলের বৌ, নাতি, ছেলের সঙ্গে।

দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে জরিনা বেগম বলেন, কাঁটাতারের বেড়া দুই দেশকে বিভক্ত করলেও ছিন্ন করতে পারেনি রক্তের বাঁধন। তাই শত শত মানুষ তাদের প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলতে বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে এসেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর সীমান্তে।



রোববার সকাল থেকে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে হরিপুর বিওপি থেকে জগদল বিওপি পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দুই বাংলার বহু মানুষ উপস্থিত হন। দূর-দূরান্ত থেকে দুই দেশের স্বজনরা সীমান্তে কাঁটাতারের কাছাকাছি এলাকায় সমবেত হতে থাকে। 

কাঁটাতারের এপারে-ওপারে দাঁড়িয়ে পরস্পরের সঙ্গে কথা বিনিময় হয়েছে স্বজনদের।

স্থানীয় এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ দিন ভোর থেকে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন এসে জড়ো হন। দুই দেশে থাকা স্বজনরা একে অপরের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে বিরল দৃশ্যের অবতারণা হয়। যারা পাসপোর্ট, ভিসা করতে পারেন না, তারা এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করেন।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় অনেকের আত্মীয়-স্বজন ভারতেয় অংশে পড়েন। এর ফলে অনেকের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। তারা উভয় দেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনীর সম্মতিতে প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে সীমান্তবর্তী এলাকায় এসে দেখা ও কথা বলার সুযোগ পান। আজ রোববার ভারতে বাংলা নববর্ষ উৎযাপন হয়।



পীরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা হাজেরা বেগম জানান, এবার দেখা করেছেন তার ছোট ভাই মুসার সঙ্গে। ২০ বছর আগে বাবা-মা ও ভাই-বোনদের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। ২০ বছর পর আজ ভাইকে দেখতে পেয়ে খুব আনন্দিত তিনি।

ভারতের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে আসা রহিমা, শাকির, মাজেদা, লক্ষ্মীরানী, গীতাদেবী সরেন মাড্ডীসহ বহু ব্যক্তি কাঁটাতারের এপারে-ওপারে দাঁড়িয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন এবং কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে মিষ্টি ও পোশাক বিনিময় করেন।

ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি’র পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ হোসেন বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সীমান্তে বিজিবি ও পুলিশের সদস্যরা বিশেষভাবে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।




রাইজিংবিডি/ঠাকুরগাঁও/১৫ এপ্রিল ২০১৮/তানভীর হাসান তানু/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়