ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কাজে মনোযোগ বাড়ানোর উপায় (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ১৪ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কাজে মনোযোগ বাড়ানোর উপায় (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

কাজে একাগ্রতা ধরে রাখা কঠিন, কিন্তু এটি তখন বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে যখন আপনার মন প্রতিনিয়ত কাজ থেকে সরে যায়। আজকের সদা-সংযুক্ত পৃথিবীতে মনোযোগ সরে যাওয়ার প্রবণতা পূর্বের তুলনায় বেশি। এমনকি শান্ত মুহূর্তেও আপনার মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে, যেমন- কাজ করতে করতে হঠাৎ করে ফেসবুকে ঢুকে পড়েছেন অথবা কোনো ভিডিও গেমসে শত্রুকে দমন করছেন।

নতুন কিছু শিখতে, লক্ষ্য অর্জন করতে ও বিভিন্ন পরিবেশে ভালো করার জন্য মেন্টাল ফোকাস বা মনোনিবেশের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করতে মানসিক প্রচেষ্টায় ঘাটতি থাকলে চলবে না। কোনো প্রতিবেদন তৈরি করতে অথবা কোনো ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ভালো করতে অথবা অন্য কোনো কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে অবশ্যই মেন্টাল ফোকাস বা মনোযোগ ধরে রাখতে হবে। সৃজনশীল কাজে মনোনিবেশের গুরুত্ব একটু বেশি- কারণ আর যাই হোক না কেন, বিক্ষিপ্ত মন দিয়ে সৃজনশীলতা হয় না। একজন মানুষের মেন্টাল ফোকাস অথবা মনোনিবেশের ক্ষমতার মাত্রার ওপর সফলতা অথবা ব্যর্থতা বহুলাংশে নির্ভর করে।

ফোকাস হচ্ছে মেন্টাল মাসলের মতো- আপনি এটিকে যত বেশি গঠনের চেষ্টা করবেন, এটি তত বেশি শক্তিশালী হবে। মেন্টাল ফোকাস বাড়ানো যায়, কিন্তু তার মানে এটা নয় যে আপনি খুব দ্রুত বা সহজেই এটা করতে পারবেন। মেন্টাল ফোকাস বা মনোনিবেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আপনার দৈনন্দিন রুটিনে কিছু বড় পরিবর্তন আনতে হবে। কাজে মনোযোগ বাড়ানোর জন্য সাইকোলজি থেকে কিছু পরামর্শ ও কৌশল নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

* বর্তমানেই থাকুন

অতীত রোমন্থনের প্রবণতা থাকলে অথবা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করলে অথবা অন্য কোনো কারণে বর্তমানে অস্থিরতায় ভুগলে কোনো কাজে একাগ্রতা ধরে রাখা কঠিন। আপনি সম্ভবত লোকজনকে ‘বর্তমানের গুরুত্ব’ নিয়ে কথা বলতে শুনেছেন। হ্যাঁ, সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি হলো বর্তমানকে ভালোভাবে ব্যবহার করা। অতীত বা ভবিষ্যৎ ভেবে হতাশ হলে বা দুশ্চিন্তা করলে কাজ থেকে মেন্টাল ফোকাস ছুটে যায়।

মেন্টাল ফোকাস পুনরুদ্ধারের জন্য অতীত বা ভবিষ্যৎ ভাবনায় আসক্ত হওয়া যাবে না। অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে ততটুকু ভাববেন যতটুকুতে আপনার উপকার হয় অথবা স্বাভাবিক কাজকর্মে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না। বর্তমান সময়ে একটি কাজে ফোকাস করলে সঠিক বা নিখুঁতভাবে কাজটি করা সম্ভব হয়। আপনার অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনার প্রবণতা থাকলে বর্তমানে সীমাবদ্ধ হতে সময় লাগবে। আপনাকে মনে রাখতে হবে যে অতীতে যা হয়ে গেছে তা পরিবর্তন করা যাবে না এবং ভবিষ্যৎ এখনো আসেনি, ভবিষ্যতে কি হবে না হবে তা স্রষ্টা ছাড়া কেউ বলতে পারে না। আপনি যা করতে পারেন তা হলো, আপনার ভবিষ্যতকে আরো সফল করতে অতীতের ভুলগুলো রিপিট না করা, অর্থাৎ ভবিষ্যৎ রাঙাতে অতীত থেকে শিক্ষা নিতে পারেন, কিন্তু অতীত রোমন্থনে আসক্ত হওয়া যাবে না।

*  মেডিটেশন চর্চা করুন

আজকের একটি আলোচিত টপিক হলো মাইন্ডফুলনেস এবং তা ভালো কারণে। হাজার হাজার বছর ধরে লোকজনে মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন চর্চা করলেও এর বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানা গেছে সাম্প্রতিককালে।

একটি গবেষণায় গবেষকরা হিউম্যান রিসোর্সেস প্রফেশনালদেরকে কিছু জটিল মাল্টিটাস্কের সিমুলেশনে নিযুক্ত করেন। কাজগুলো হলো ফোনের উত্তর দেয়া, মিটিংয়ের শিডিউল করা ও বিভিন্ন উৎস (যেমন- ফোন কল, ই-মেইল ও টেক্সট মেসেজ) থেকে তথ্য নিয়ে মেমো লেখা। এসব কাজ সম্পাদনের সময় ছিল ২০ মিনিট। কিছু অংশগ্রহণকারীকে ৮ সপ্তাহ ধরে মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশনের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। দেখা গেছে যে, এই মেডিটেশন গ্রুপের সদস্যদের কাজে মনোযোগ ও একাগ্রতা অন্য গ্রুপের লোকদের (যাদেরকে মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশনের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি) চেয়ে বেশি ছিল। মেডিটেশন গ্রুপের সদস্যরা কাজে দীর্ঘসময় যুক্ত থাকতে পেরেছিল, এক কাজ থেকে অন্য কাজে ঘনঘন জড়িত হননি এবং অন্য গ্রুপের তুলনায় অধিক কার্যকরভাবে কাজ সম্পন্ন করেছিল।

কেবলমাত্র মেডিটেশন নয়, চর্চা করার জন্য অন্যান্য মাইন্ডফুলনেসও রয়েছে, যেমন- ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ। আপনার কাছে ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ বা গভীর শ্বাসক্রিয়াকে সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু চর্চা করতে গেলে বুঝবেন যে যত সহজ মনে করেছেন আসলে ততটা নয়, তবে চর্চা অব্যাহত রাখলে সময় পরিক্রমায় আরো সহজ হয়ে যাবে। এ ব্রিদিং এক্সারসাইজ যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময়ে করা যায়। শেষপর্যন্ত আপনি গভীর শ্বাসক্রিয়ার মাধ্যমে মন থেকে অমূলক চিন্তা তাড়াতে পারবেন ও কাজে ফোকাস করতে পারবেন।

* ছোট বিরতি নিন

আপনি কি একই কাজে দীর্ঘসময় ধরে ফোকাস করার চেষ্টা করেন? তাহলে এখন থেকে এমনটা করবেন না, কাজে মনোযোগী হতে আপনাকে ছোট ছোট বিরতি নিতে হবে। কোনো কাজ হাতে নিলে কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ফোকাস ভেঙে পড়তে চায় ও মানসিক সম্পদকে কাজে ব্যবহার করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়ে। শেষপর্যন্ত আপনার পারফরম্যান্স খারাপ হতে থাকবে। সাইকোলজির পূর্বেকার ব্যাখ্যামতে, মনোযোগের শক্তি নিঃশেষিত হয়ে যায় বলে এমনটা ঘটে, কিন্তু কিছু গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে মস্তিষ্কের অন্যতম প্রবণতা হলো প্রতিনিয়ত উদ্দীপনার উৎসকে অবহেলা করা। গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, কাজ থেকে ছোট বিরতি নিয়ে অন্য কোথাও মনোযোগ সরিয়ে নিলে মেন্টাল ফোকাসের অবিশ্বাস্য উন্নতি হয়। তাই এখন থেকে কোনো দীর্ঘমেয়াদী কাজ হাতে নিলে (যেমন- ট্যাক্স প্রস্তুত করা অথবা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়া) নিজকে ছোট মেন্টাল ব্রেক দিন। আপনার কাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় এমন কিছুতে মনোযোগ সরিয়ে নিন, এমনকি কয়েক মিনিটের জন্য হলেও। এ সাময়িক বিরতি মেন্টাল ফোকাসকে শাণিত করে ও পারফরম্যান্স উন্নত করে।

* ফোকাস উন্নয়নের চর্চা অব্যাহত রাখুন

মেন্টাল ফোকাস হলো এমন কিছু যা রাতারাতি গঠন করা যায় না। এমনকি প্রফেশনাল অ্যাথলেটদেরও মনোনিবেশের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রচুর সময় ও চর্চা লাগে। মেন্টাল ফোকাস ডেভেলপের প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রথম পদক্ষেপ হলো, কাজ থেকে মনোযোগ হরণকারী বিষয়গুলোকে শনাক্ত করা। যদি দেখেন যে কিছু অপ্রয়োজনীয় বিষয় আপনার লক্ষ্য অর্জনে বাধা দিচ্ছে, তাহলে এসব ডিসট্র্যাকশন অপসারণ করতে এখনই ভাবতে শুরু করেন। সাইকোলজিক্যাল ডিসট্র্যাকশন তাড়াতে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন। শারীরিক অসুস্থতা থাকলে চিকিৎসা নিন। আলাপী সহকর্মী বা সহপাঠী বা রুমমেটকে বুদ্ধিমত্তার সাথে সামাল দিন। মেন্টাল ফোকাস গঠন করতে পারলে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসবে ও জীবন সুখকর হবে।

পড়ুন : *


ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়