ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কাপ্তাই হ্রদের জমিতে বোরো আবাদ শুরু

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কাপ্তাই হ্রদের জমিতে বোরো আবাদ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : রাঙামাটি জেলার ছয়টি উপজেলায় কাপ্তাই হ্রদের জমিতে শুরু হয়েছে বোরো আবাদ।

কাপ্তাই হ্রদের পানি কমতে দেরি হওয়ায় এ বছর চাষাবাদ শুরু করতে দেরি হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।

পানি কমায় জেগে উঠেছে ‘জলে ভাসা’ চাষের জমি। আর এসব জমিতে বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কাপ্তাই হ্রদের ‘জলেভাসা’ জমিতে প্রতিবছর বোরোর আবাদ শুরু হয় জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে। যদিও বোরো চাষের মৌসুম নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এবার কাপ্তাই হ্রদের পানি ধীরে কমায় ফেব্রুয়ারির শেষ সময়ে কিছু জমিতে শুরু হয়েছে বোরো আবাদ।

স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর মাঘ মাসের শেষের দিকে কাপ্তাই হ্রদের নিচু জমিগুলোর পানি কমতে শুরু করে। এ সময় এসব জমিতে বোরোর আবাদ শুরু করেন চাষিরা। আর এ জমিগুলোকে এখানে ‘জলে ভাসা’ জমি বলা হয়। জেলার লংগদু, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর, বরকল ও বিলাইছড়ি উপজেলায় এই জলে ভাসা জমিতে বোরোর আবাদ করেন চাষিরা।

সরেজমিনে লংগদু ও বাঘাইছড়ি এই দুই উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, কাপ্তাই হ্রদের ‘জলেভাসা’ জমিতে বোরোর বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

বাঘাইছড়ি উপজেলার বটতলী এলাকার চাষি হুমায়ুন জানান, এখানকার চাষিরা বোরো রোপণ শুরু করেছে। তবে অন্যসব উঁচু এলাকার চাষিরা বোরো রোপণ অনেক আগেই শেষ করেছেন। কাপ্তাই হ্রদের পানি সময়মত না কমায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যদিকে লংগদু উপজেলার বেশিরভাগ জমি এখনো পানির নিচে রয়েছে। এসব জমিতে পানি রয়েছে এক থেকে তিন ফুট পর্যন্ত। দ্রুত পানি কমে না গেলে অনেক জমি অনাবাদি থাকবে জানালেন চাষিরা। অন্যান্য বছর পৌষ মাসের শেষেই শুরু হতো জলেভাসা জমিতে বোরো চাষ। গত কয়েক বছর যাবৎ হ্রদের পানি ধীরে ধীরে কমে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কৃষকরা।


বাঘাইছড়ি কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, অত্র উপজেলায় এ বছর ৭ হাজার ৫৭০ একর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫ হাজার ২৭০ একর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। উঁচু জমিগুলোতে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি বীজতলা তৈরি করা হয়। এসব বীজ ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই রোপণ করা হয়। আর নিচু ‘জলেভাসা’ জমিগুলোতে বীজতলা তৈরি করা হয় জানুয়ারির শুরুতে। এরপর একমাস পরেই আবাদ শুরু হয়। তবে ফেব্রুয়ারির পরে আবাদ করলে লক্ষমাত্রার চেয়ে কম ফলন ও পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

লংগদু উপজেলার গাঁথাছড়া মৌজার কাউয়ামারার বিলে বোরো চাষের জন্য জমি তৈরিতে ব্যস্ত কৃষক লোকমান হোসেন, মো. আলম ও জুলেখা বেগম বলেন, আমরা উপরের জমিতে বীজ তৈরি করেছি। এখন পানি কমতে শুরু করায় দ্রুত জমি তৈরি করে রোপণ করতে হবে। আর কিছুদিন পরে আবাদ করলে ফসল ঘরে তোলা যাবে না। এখনো বিলের অনেক জমিতে হাটু পানি। এ পানি না কমলে অনাবাদি থেকে যাবে অনেক জমি। কৃষকরা এখন আর ঝুঁকি নিতে চায় না। আগাম বর্ষা শুরু হলে ধান খড় কিছুই আর ভাগ্যে জোটে না। এ ছাড়া কষ্ট করে চাষ করে সময়মতো ধানের দামও পাওয়া যায় না।

লংগদু উপজেলার গুলশাখালি ইউপি চেয়ারম্যান আবু নাছির বলেন, আমার ইউনিয়নের ৮০ শতাংশ জমি এখনো পানির নিচে। এ বিষয়টি উপজেলার মাসিক সভায় প্রশাসনকে জানিয়েছি। এ ছাড়াও স্থানীয় সরকারদলীয় নেতাদের বলেছি। তবে পানি যে গতিতে কমছে তাতে উপজেলার অনেক জমি অনাবাদি থেকে যাবে।

লংগদু উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.নিজাম উদ্দীন ভূইয়া বলেন, আমাদের উপজেলায় এবার বোরো চাষের লক্ষমাত্রা এক হাজার ৪২০ হেক্টর। বোরো চাষের মৌসুম মূলত নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত। তবে এখন যারা বীজতলা তৈরি করছেন তাদের চারা রোপণ করতে মার্চ মাস শেষ হয়ে যাবে। তখন ফসল পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যায়। প্রকৃতির ওপর কারো হাত নেই। তবে নিয়ম অনুযায়ী জুনের মধ্যে ভারি বৃষ্টির আগেই বোরো ধান কৃষকেরা ঘরে তুলতে পারবেন।




রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/রেজাউল/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়