ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কালভার্টের সলিল সমাধিতে শুঁটকি মহালের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০০, ২০ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
কালভার্টের সলিল সমাধিতে শুঁটকি মহালের বাসিন্দাদের  দুর্ভোগ

কক্সবাজারে ভারী বর্ষণে উদ্বোধনের আগেই ধসে পড়েছে একটি নব-নির্মিত কালভার্ট। যার কারণে নৌকায় করে পারাপার হতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। দুর্ভোগে পড়েছেন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ। ব্যাহত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকি মহালের পরিবহন ব্যবস্থাও।

শনিবার (২০ জুন) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুবদিয়া পাড়ার নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়াও গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) ভারী বর্ষণে একটি কালভার্ট ধসে পড়ে ধসে পড়ে। যে কারণে নাজিরারটেক এলাকায় মানুষ নৌকা নিয়ে যাতায়াত করছে। এই যাতায়াতের জন্য জনপ্রতি দিতে হচ্ছে ১০ টাকা। এছাড়াও কালভার্ট ধসে পড়ার কারণে নাজিরারটেক হতে শহরে যেতে পারছে না বেশ কয়েকটি শুঁটকি পরিবাহী ট্রাক।

স্থানীয়রা জানান, দেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকি মহাল নাজিরারটেকের প্রবেশদ্বারে এক মাস আগে নির্মিত হয় কালভার্টটি। তবে কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে কালভার্টটি ধসে পড়ে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রায় অর্ধলাখ যাতায়াতকারী। ব্যাহত হচ্ছে শুঁটকি মহালে পণ্য আনা-নেয়া কার্যক্রমও।

ধসে পড়া এ কালভার্টটি উদ্বোধনের দিন-তারিখ ঠিক হয়নি এখনও। গেল বৃহস্পতিবার কালভার্টটির সলিল সমাধি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

নাজিরারটেকের শুঁটকি ব্যবসায়ী আজিজ বলেন, ‘আমাদের যাতায়াতের মূল পথ ছিল এই কালভার্টের ওপর দিয়ে। কিন্তু উদ্বোধনের আগেই সেটি ধসে পড়েছে। এখন এই কালভার্টের কারণে ব্যবসায় অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।’

একই এলাকার যুবক আলমগীর বলেন, ‘টানা দুইদিন বৃষ্টি হওয়ার কারণে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নব-নির্মিত কালভার্টটির দুই অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। যার কারণে কালভার্টটি ধসে পড়েছে।’

রফিকুল ইসলাম নামের এক বয়োবৃদ্ধ বলেন, ‘কালভার্টটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে এক মাসে আগে। এখন কালভার্টটি ধসে পড়ায় আমাদের যাতায়াতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। জোয়ারের সময় নৌকা নিয়ে যাতায়াত করতে আসা-যাওয়ায় জনপ্রতি ২০ টাকা করে ভাড়া দিতে হচ্ছে।’

নাজিরারটেকের শুঁটকি ব্যবসায়ী শুক্কুর আলী বলেন, ‘মাছ নিয়ে একটি ট্রাক শুঁটকি মহালে এসেছিল। কিন্তু এখন কালভার্ট ধসে পড়ায় ট্রাকটি পানিতে আটকে আছে। গাড়ির অনেক যন্ত্রাংশ এই দুইদিন লোনা পানিতে নষ্ট হয়েছে। এখন গাড়িটি পানিতে তুলে মেরামত করতে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে।’

এদিকে কালভার্টটি নির্মাণের দায়িত্ব কার উপর ছিল, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। তবে স্থানীয় কাউন্সিলর দোষ চাপালেন ভারী বর্ষণের উপর।

কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কালভার্টটির আশপাশে প্রচুর পানি জমা হয়েছিল। অনেক এলাকা প্লাবিত হওয়ার উপক্রমও দেখা দিয়েছিল। কিন্তু কালভার্টটির দুপাশে যে বাঁধ ছিল ওই বাঁধ পানির প্রবল স্রোতে ভেঙ্গে যায়। যার কারণে দুপাশের মাটি সরে গিয়ে কালভার্টটি ধসে পড়ে। এটা ৪-৫ লাখ টাকার টেন্ডার হতে পারে। এটার নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা অবশ্যই কক্সবাজার পৌরসভার কাজ। ঠিকাদারের মাধ্যমে কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নাম জানা নেই। তবে কালভার্টের কাজটি আমি তদারকি করেছি। কালভার্টটি মজবুত আছে। এখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো দোষ নেই।’

এদিকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্রিজটি সম্পর্কে তারা কিছু জানে না।

কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহি প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, ‘এই কলভার্ট কোনো সরকারি প্রকল্পের অধীনে তৈরি করা হয়নি। হয়তো স্থানীয় কাউন্সিলর স্বপ্রণোদিত হয়ে এলাকাবাসীর জন্য কালভার্টটি তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এটি সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না।’

তিনি বলেন, ‘ভেঙ্গে পড়া ব্রিজটির কাছেই জাপানের দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে আরেকটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে। সেটি এখনো অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। যেটির নির্মাণের দায়িত্ব রয়েছে কক্সবাজার পৌরসভা।’

উল্লেখ্য, উদ্বোধনের আগেই কালভার্ট ধসে যাওয়ার ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর সেটি নিয়ে মানুষজনকে ব্যঙ্গ রসাত্মক মন্তব্য করতে দেখা গেছে।

 

সুজাউদ্দিন রুবেল/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়