ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কালেঙ্গা পাহাড়ে কাপড় বোনার খটখট আওয়াজ

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৩, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কালেঙ্গা পাহাড়ে কাপড় বোনার খটখট আওয়াজ

তাঁতে কাপড় বুনছে এক আদিবাসী তরুণী

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ : জেলার চুনারুঘাট উপজেলার কালেঙ্গা পাহাড়ের কালিয়াবাড়ি আদিবাসী পুঞ্জি। চারদিক পাহাড়। নির্মল সবুজ প্রকৃতির টিলায় টিলায় লাল-সাদা মাটি মিশ্রিত ঘরে বসবাস আদিবাসীদের।

কালিয়াবাড়ির আদিবাসীরা জীবন-জীবিকায় আজও আদিপেশা তাঁত শিল্পকে ধরে রেখেছেন। আধুনিক যুগের যান্ত্রিক মেশিনের সাথে এখনও পাল্লা দিয়ে কালেঙ্গা পাহাড়ের এ পুঞ্জিতে এরা এখনো তাঁতে কাপড় বুনে চলেছে।

প্রায় প্রতি পরিবারেই তাঁতে কাপড় বোনার খটখট আওয়াজ। পাহাড়ের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে সে শব্দ। তাদের স্বপ্ন, আদিপেশা তাঁত শিল্পকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

সূত্র জানায়, এক সময় এ পাহাড়ের আদিবাসীরা তাঁত শিল্পে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে আসছিল। ধীরে ধীরে এ শিল্পটি আধুনিকতার কাছে যেন হার মেনে যায়। তারমধ্যে আবার অর্থাভাব পিছু নিয়েছে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখনো শিল্পটিকে বৃহত শিল্পে রূপান্তরের স্বপ্ন দেখেন আদিবাসী পুঞ্জির বাসিন্দারা।

এ পুঞ্জিতে প্রায় ৬৩টি পরিবারের দেড়শতাধিক লোক বসবাস করছে। সব রকমের উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত তারা। অভাব তাদের পিছু ছাড়ছে না। তাই তারা তাঁত শিল্পের পাশাপাশি লেবু, কলা, পেঁপে, ধানসহ নানান সবজি চাষে যুক্ত হয়েছেন। 

এ ব্যাপারে পরী রাণী দেববর্মা, মধু রাণী দেববর্মা, কমলা দেববর্মা, উমিলা রাণী দেববর্মা, রঙ্গমালা দেববর্মা, চাম্পা দেববর্মা, সমাইতী দেববর্মারা  বলেন, ‘তাঁত আমাদের আদি ঐতিহ্য। আমরা সবাই মিলে এ ঐতিহ্যকে ধরে রেখে এগিয়ে যাব। পিছু হটব না।’

তারা বলেন, ‘আমাদের দুঃসময়ে আজ এ শিল্প রক্ষায় কেউ আসছেন না। আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে ঋণ দেওয়া হলে, এ শিল্প নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হবে। আমরা এ পাহাড়েই বসে শিল্পটিকে বৃহৎ রূপে নিয়ে যেতে চাই। আশাকরি একদিন সফল হব। তাঁত শিল্প এগিয়ে গেলে এ পাহাড়ের নারীরা এগিয়ে যাবে। তাই আমাদের কর্মসংস্থানকে আরো জোরালো করতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করি।’

সোনা রাণী দেববর্মা জানান, তারা গৃহের কাজ সেরে তাঁত দিয়ে কাপড় তৈরি করেন। এরমধ্যে অনেক কাপড় মেশিন দিয়ে সেলাই করতে হয়। তাঁতের তৈরি কাপড়কে আকর্ষণীয় করতে বুটিকের কাজ করার প্রয়োজন পড়ে।

পুঞ্জির হেডম্যান বিনয় দেববর্মা বলেন, ‘সেই মান্দাতার আমলের বাঁশের তৈরি মেশিনে এখনও কাপড় বুনন চলছে। এগুলো পুরনো হয়ে গেছে। তারপরও আমরা বসে নেই। আমাদের নারীরা তাঁত মেশিনে কাপড় তৈরি করে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। পর্যাপ্ত মেশিন না থাকায় এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। ঋণ, প্রশিক্ষণ ও আধুনিক নতুন তাঁত মেশিন পেলে এ পাহাড় থেকে উৎপাদিত কাপড় দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।’

এ ব্যাপারে জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফখরউদ্দিন জানান, ‘এখানকার পাহাড়ে আদিবাসীদের আদি ঐতিহ্য হলো তাঁত শিল্প। এ শিল্পের সুনাম রয়েছে। এ সুনাম ধরে রাখতে আদিবাসী নারীদের আরো গতিশীল করতে হবে। তাহলে এ শিল্পটি আরো এগিয়ে যাবে। আর এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ।’

 

 

রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/মো. মামুন চৌধুরী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়