ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কেমন আছেন চট্টগ্রামের শিল্পী সংস্কৃতি কর্মীরা

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০২, ২৩ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 কেমন আছেন চট্টগ্রামের শিল্পী সংস্কৃতি কর্মীরা

করোনা পরিস্থিতিতে স্থবির হয়ে আছে চট্টগ্রামের পুরো সাংস্কৃতিক অঙ্গন। মঞ্চগুলোতে আলো জ্বলছে না। আয়োজন নেই পাঁচ তারকা হোটেল কিংবা ক্লাব কমিউনিটি হলের বলরুমে জমকালো কোন পারফরমেন্সের।

সঙ্গীত শিল্পী, মডেল, অভিনয় শিল্পী, নৃত্য শিল্পী, মঞ্চ শিল্পীসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সব স্তরের কর্মীরা এখন পুরোপুরি কর্মহীন অবস্থায় ঘরবন্দি হয়ে আছেন। দীর্ঘদিন গৃহবন্দি এবং শো-বিহীন, আয়বিহীন অবস্থায় থাকা শিল্পী সংস্কৃতি কর্মীদের খোঁজ নেয়ারও নেই কেউ।

রাইজিংবিডির পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের জনপ্রিয় সব শিল্পী, সংগঠক ও সংস্কৃতিকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হয়েছিলো তারা কেমন আছেন। শিল্পীরা জানিয়েছেন তাদের বর্তমান অবস্থা।

সাইফুল আলম বাবু, সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি:

চট্টগ্রামের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ব্যাক্তিত্ব সাইফুল আলম বাবু বলেন, ‘চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মীরা বর্তমান পরিস্থিতিতে একদমই ভালো নেই। কারণ, সমস্ত মঞ্চগুলো আজ অন্ধকার হয়ে আছে। আলো জ্বালাবার কেউ নেই। দিন দিন করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে আবার মৃত্যু বাড়ছে। তাই করোনার কারণে আমরা ঘরে বসে আছি। শিল্পী সংস্কৃতি কর্মীর পাশাপাশি যন্ত্রশিল্পী, মঞ্চের সাথে সংশ্লিষ্ট লাইট, সাউন্ড সিস্টেমের কর্মী কারো কোন কাজ নেই। তারা তিন বেলা আহার যোগাতে পারছেন না।'

বাবু বলেন, ‘আমরা লাইনে দাঁড়াতে পারি না, কারো কাছে হাত পেতে কিছু চাইতে পারি না। নাম ঠিকানা দিয়ে কাগজের তালিকায় নাম তুলতে পারি না। বিবেক, লজ্জা, আত্মসম্মান বোধ- এসবের কারণে আজ সংস্কৃতি কর্মীরা খুবই কষ্টে আছে। পরিবার পরিজন ও সন্তানের কাছে অনেকেই মুখ দেখাতে পারছেনা। কেউ ডেকে জানতে চাইছে না সংস্কৃতি কর্মীরা কেমন আছে। কেউ তাদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছে না। মানবিক কারণে সহকর্মী, সহশিল্পী বিধায় আমরা কিছু শিল্পী দুর্দশাগ্রস্থ শিল্পীদের সহযোগিতা নিয়মিতভাবে  দিয়ে যাচ্ছি। জানিনা, কতদিন এভাবে ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে দিন কাটাতে হবে।'

সাইফুল আলম বাবু বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি অচিরেই সুন্দর একটি সকাল আসবে। আমরা শিল্পীরা আবার মঞ্চে উঠবো। মানুষের কথা, দেশের কথা বলবো। সেই আশায় বুক বেঁধে থাকলাম।'

তাসনিম আনিকা, সঙ্গীত তারকা:

চট্টগ্রামের মেয়ে তাসনিম আনিকা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় সঙ্গীত তারকা। তাসনিক আনিকার শো মানেই হাজার হাজার মানুষে উন্মাতাল আনন্দধ্বনি। এই তারকা শিল্পীও এখন ঘরবন্দি। দেশে বিদেশে কোন শো নেই। বর্তমান অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে তাসনিম আনিকা বলেন, ‘আমরা সবাই একটা আতঙ্কের মধ্যে আছি। ঘরে অবস্থান করছি। এই পরিস্থিতি কবে শেষ হবে জানা নেই।'

আনিকা বলেন, ‘আমরা পরিবার নিয়ে ঘরে অবস্থান করছি, সুস্থ আছি, বাইরে শো-নেই তবে ঘরে গানের চর্চা থেমে নেই। একই সাথে শরীর চর্চা এবং নানা রকম রান্না করে সময় কাটছে।'

সবাই সরকারের নির্দেশনা মেনে ঘরে থাকলে সহসা দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, সবাই নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই সঙ্গীত তারকা।

স্মিতা চৌধুরী, উপস্থাপিকা:

চট্টগ্রামের জনপ্রিয় উপস্থাপিকা স্মিতা চৌধুরী। চট্টগ্রামের সব বড় বড় আয়োজনে যার কণ্ঠস্বর একরকম অপরিহার্য বলা যায়। তার কণ্ঠও থেমে গেছে। কাজ নেই। উপস্থাপনা নেই। কেমন আছেন- জানতে চাইলে স্মিতা চৌধুরী বলেন, ‘এমন কঠিন সময় আমরা এর আগে কখনো দেখিনি। কোন কাজ নেই, অনুষ্ঠান নেই, আয় রোজগার সবই বন্ধ। আমাদের খোঁজ নেয়ারও কেউ নেই। ঘরবন্দি অবস্থায় দিনগুলো কাটিয়ে দিতে হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষা করছি।'

জাহাঙ্গীর লুসাই: তরুন নির্মাতা ও সাংস্কৃতিক কর্মী:

চট্টগ্রামের তরুণ নির্মাতা ও সাংস্কৃতিক কর্মী জাহাঙ্গীর লুসাই বলেন, ‘সবার মত আমিও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে আছি। কবে নাগাদ এই ঝড় থামে তারই আশায় বসে আছি। আমার আশেপাশে সামাজিক মাধ্যমে যেসব সাংস্কৃতিক কর্মী অভিনেতা অভিনেত্রী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সাথে আলাপ হয় তাদের সবাইকে আমি একটা মেসেজ পৌঁছে দিচ্ছি, সেটা হলো মনোবল শক্ত রাখার সময়টা এখনই।'

হোম কোয়ারেন্টাইনের মধ্য দিয়ে আশেপাশের বন্ধুবান্ধবসহ সবাইকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখার জন্য অনলাইনভিত্তিক কিছু কন্টেন্টের কাজ করছেন বলে জানান লুসাই।

রিয়াংকা দাশ, নৃত্যশিল্পী:

চট্টগ্রামের জনপ্রিয় এবং সবার পরিচিত মুখ রিয়াংকা দাশ বলেন, ‘আমরা ভালো নেই। এভাবে কর্মহীন গৃহবন্দি কখনো থাকতে হবে ভাবিনি।'

রিয়াংকা বলেন, ‘মার্চ ও এপ্রিল মাসের ৪০টিরও বেশি শো বাতিল হয়েছে। ঈদপূর্ব কোন শো এখন আর হচ্ছে না। আমরা যারা শিল্পী এবং এই পেশার উপরই নির্ভর করি তাদের দুরাবস্থা কেমন তা বলে বুঝানো যাবে না। আমরা কাউকে বলতে পারি না। কিন্তু নিরবে সব পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে হচ্ছে।'

কমর উদ্দিন আরমান, হা-শো তারকা, কৌতুক অভিনেতা:

চট্টগ্রামের কমেডি তারকা ও সঙ্গীত শিল্পী মিরাক্কেল খ্যাত কমর উদ্দিন আরমান বলেন, ‘আমাদের চরম দুর্দিন। আমি কৌতুক অভিনেতা হিসেবে মানুষকে হাসাই, কিন্তু আজ নিজের মুখের হাসিই হারিয়ে গেছে। কাজ নেই, শো নেই। অনেক দিন আলো ঝলমলে মঞ্চে উঠা হয়না। চরম দুঃসময় পার করছি আমরা।'

সবাই ঘরে থাকলে সহসা দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে মত প্রকাশ করেন আরমান।

 

চট্টগ্রাম/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়