কোস্টগার্ডের দক্ষতায় বিদেশি জাহাজে চুরি-দস্যুতা হ্রাস
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ জলসীমায় পণ্যবাহী বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজে চুরি ও দস্যুতার ঘটনা গত এক বছরে হ্রাস পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, বিদেশি জাহাজে চুরি ও দস্যুতা পুরোপুরি শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।
বাণিজ্যিক জাহাজে সংঘটিত সশস্ত্র ডাকাতি, দস্যুতা ও চুরি প্রতিরোধে বিভিন্ন সংঘটিত অপরাধ সংক্রান্ত ঘটনাসমূহ সংগ্রহ, সংকলন ও প্রচার করার আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশানাল মেরিটাইম ব্যুরো, পাইরেসি রিপোর্টিং সেন্টার এবং রিক্যাপের ২০১৯ সালের প্রতিবেদনসমূহে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
রিক্যাপের তথ্যানুযায়ি সর্বশেষ ২০১৮ সালে জানুয়ারি থেকে একই বছরের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের জলসীমায় ১১টি চুরির ঘটনা ঘটেছিল। এর পর থেকে ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট পর্যন্ত আর কোনো চুরি ও দস্যুতার ঘটনা ঘটেনি।
কোস্ট গার্ড পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. শাহ জিয়া রহমান জানান, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার। মূলত সারা দেশের বেশিরভাগ পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যিক জাহাজের মাধ্যমে এ বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এই বন্দরের জলসীমা নিরাপদ রাখতে কোস্টগার্ডবাহিনী কঠোর অবস্থানে থেকে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছে।
কোস্ট গার্ড বাহিনীর টহল টিমের সংখ্যা বৃদ্ধি, গোয়েন্দা নজরদারি, রাত্রিকালীন কর্ণফুলী নদীর অভ্যন্তরে, মোহনায় এবং বহির্নোঙ্গরে সকল প্রকার চলাচলের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা এখন পুরোপুরি নিরাপদ। গত একবছরে বন্দরের জলসীমায় কোনো চুরি বা দস্যুতার ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম চিটাগাং এর সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম এম আবু তৈয়ব বলেন, ‘কোস্ট গার্ডের তৎপরতায় বন্দরের জলসীমায় চুরি ও দস্যুতার ঘটনা একদম নেই। এতে করে বিশ্বের দরবারে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বিদেশে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম যত বৃদ্ধি পাবে, তত এ দেশে বৈদেশিক ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। একইসাথে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে, ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবেন। এটি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (নিরাপত্তা) মেজর মুহাম্মদ রেজাউল হক বলেন, ‘বন্দরের জলসীমায় বাণিজ্যিক জাহাজের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পালন করে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কোস্ট গার্ড বাহিনীর কর্মতৎপরতা বন্দরেরয় জলসীমায় চুরি ও দস্যুতার ঘটনা শূন্যে নেমে এসেছে। এত বহির্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।’
আইএসপিএস এর ধারণা অনুযায়ী বর্হিনোঙ্গরে আগমন ও অবস্থানকারী সকল বাণিজ্যিক জাহাজের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনীর উপর ন্যস্ত। বন্দরের জেটি সুবিধা সীমিত, সেজন্য বাণিজ্যিক জাহাজসমূহকে পরিকল্পিত সময়সূচি অনুযায়ী অপেক্ষমান হিসেবে বর্হিনোঙ্গরে অবস্থান করতে হয়। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় শতাধিক বাণিজ্যিক জাহাজ বর্হিনোঙ্গরে অবস্থান করে।
সম্প্রতি ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বর্হিনোঙ্গরের বন্দরসীমা উত্তরে মীরসরাই ও দক্ষিণে মহেশখালী পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এরপরেও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বাহিনীর সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় চুরি ও দস্যুতার ঘটনা রোধ করা সম্ভব হয়েছে। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় চুরি দস্যুতা ঘটনা রোধে কোস্ট গার্ড বাহিনীর কিছু কর্মকৌশল, গোয়েন্দা তৎপরতা রয়েছে এবং এতে সফলতাও পাওয়া যাচ্ছে।
বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে বিভিন্ন কাজে শিপিং এজেন্ট, শিপ শ্যান্ডল্যারদের আসা-যাওয়া এবং রাতে কর্ণফুলী নদী অথবা উপকূলীয় খালগুলো হতে যারা বহির্নোঙ্গরে যায় তাদের উপর গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা রোধে কোস্ট গার্ড বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক বজার রেখে বাণিজ্যিক জাহাজ হতে অসৎ উদ্দেশ্যে পণ্য বিনিময় বন্ধ করা হয়েছে। জাহাজ নোঙ্গরে থাকাবস্থায় বন্দরের রেজিস্টার্ড ওয়াচম্যান নিয়োগ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২৮ আগস্ট ২০১৯/রেজাউল/সনি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন