ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কোয়েল খামারে হাসি ফুটেছে কামালের সংসারে

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কোয়েল খামারে হাসি ফুটেছে কামালের সংসারে

কামালের কোয়েল পাখির খামার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : কোয়েল পাখির খামার গড়ে সাফল্য পেয়েছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালা উপজেলার কামাল হোসেন। মাত্র চার মাস আগে কোয়েল পালন শুরু করেন তিনি। এখন প্রতিমাসে আয় তার ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। তবে বাচ্চা ফোটানোর যন্ত্র ক্রয় করতে পারলে আয় তার বেড়ে যেতো আরো।

কামালের সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তার নিকট থেকে বাচ্চা নিয়ে কোয়েল চাষ শুরু করেছেন স্থানীয় আরো অনেকেই। কোয়েল পাখি ও তার ডিম দেশি মুরগির চেয়েও বেশি প্রোটিনযুক্ত বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

দীঘিনালা উপজেলার কবাখালী বাজারের পাশেই ‘কামাল কোয়েল হ্যাচারি’। এখন ১৩০০ কোয়েল পাখি রয়েছে তার হ্যাচারিতে। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ ডিম দিচ্ছে। প্রতিটি ডিম পাইকারি ৪ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তাতে ডিম বিক্রি করে প্রতিদিনের আয় ১৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা। এছাড়া কোয়েল পাখিও বিক্রি করছেন। যে কোয়েল ডিম দেয় সেগুলো এক জোড়া বিক্রি হয় ৩০০ টাকায় আর পুরুষ কোয়েল বিক্রি হয় এক জোড়া ১৫০ টাকায়।

কোয়েল খামারি কামাল জানান, একটি পরিপূর্ণ কোয়েলের ওজন হয় ২০০ গ্রাম থেকে ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত। দুইমাস বয়স থেকেই ডিম দেওয়া শুরু করে। পর্যাপ্ত খাদ্য পেলে এক টানা ১৮মাস ডিম দেয় কোয়েল। কোন ত্রুটি হলেও কমপক্ষে এক বছর এক টানা ডিম দেয়।

কামাল হোসেন জানান, মাত্র চার মাস আগে খামার শুরু করেছেন। এর আগে মাস খানেক সময় গেছে প্রশিক্ষণে ও খামার ঘর প্রস্তুত করতে। প্রথম ৬০০ বাচ্চা দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। ময়মনসিংহের জারিয়া এলাকা থেকে প্রতিটি বাচ্চা ক্রয় করে এনেছিলেন ৪০ টাকা দরে। পর্যায়ক্রমেই বাচ্চা আনা হচ্ছে এবং বড় করে বিক্রিও করছেন। ইতিমধ্যে হাজার দুয়েক কোয়েল তিনি বিক্রি করেছেন। আর এখন খামারে রয়েছে ১৩০০ কোয়েল। এগুলোর খাদ্যে মাসে খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু ডিম বিক্রি থেকেই মাসে আসছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। সকল খরচ মিটিয়ে ডিম ও পাখি বিক্রি করে এখন মাসিক তার আয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।

খামারে কোয়েলের পরিচর্যায় কামাল


ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানের যন্ত্র থাকলে আয় আরো বাড়তো বলে জানালেন কামাল। যন্ত্র ক্রয় করতে ১লাখ টাকারও বেশি লাগে। কিন্তু টাকার অভাবে সে যন্ত্র ক্রয় করতে পারছেন না তিনি। তাই সমস্ত ডিম বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। আর ময়মনসিংহ থেকে একটি বাচ্চা ক্রয় করে আনতে হচ্ছে ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকায়। সাথে রয়েছে পরিবহন খরচও। এজন্যই ডিম ফোটানোর যন্ত্র থাকলে আয় কয়েকগুণ বেড়ে যেতো। অন্যদিকে এলাকায় কোয়েল চাষে অনুপ্রাণিতদের কম মূল্যে কোয়েল সরবরাহ করা যেতো।

কামাল কোয়েলের খামার গড়তে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন টিভি দেখে। এরপর তিনি ময়মনসিংহের জারিয়া এলাকায় একটি কোয়েলের খামারে গিয়ে ১০ দিন থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা গ্রহণ করেন। পরে সাভার এলাকায় আরেকটি খামারেও ১০দিন প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ৭০ হাজার টাকা পূঁজি নিয়ে খামারের ঘর নির্মাণ করে ৬০০ বাচ্চা এনে শুরু করেন কোয়েল চাষ।

কোয়েল চাষে সাফল্যের পর এবার কামালের পরিকল্পনা একই সাথে টারকি ও তিতির মুরগি পালনের। খুব সহসাই টারকি ও তিতির মুরগির বাচ্চা নিয়ে আসবেন বলেও জানান তিনি।

সংসারের অভাব দূর হয়েছে জানিয়ে মুখে সুখের হাসি ফুটিয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে। বড় মেয়ে কলেজে পড়ছে আর ছোট মেয়ে এবার প্রাথমিক থেকে সমাপনী দিল। এদের লেখাপড়ার খরচ আর সংসারের ভরণপোষণের খরচ নিয়ে কয়েক মাস আগেও সবসময় চিন্তায় থাকতে হতো। সংসার জীবনের দীর্ঘ সময়েও অভাব ঘুচেনি। সর্বশেষ ভরসা থেকে কোয়েলের খামার করি। কোয়েল চাষের পর থেকে এখন অনেক সুখেই কাটছে সংসার জীবন। আল্লাহ অনেক শান্তিতে রেখেছেন।’

 

রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/১৯ জানুয়ারি ২০১৭/রেজাউল করিম/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়