ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ক্যাসিনো নেটওয়ার্ক লণ্ডভণ্ড

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫১, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্যাসিনো নেটওয়ার্ক লণ্ডভণ্ড

মতিঝিলে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য ক্লাবপাড়া। তবে ক্লাবগুলোতে গোপনে গড়ে উঠেছে অবৈধ জুয়ার রমরমা ক্যাসিনো ব‌্যবসা।

চলতি বছরের শেষের দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে একের পর এক বের হয়ে আসতে থাকে ক্যাসিনো বা অবৈধ জুয়ার সন্ধান। পুরো দেশ টালমাটাল হয়ে পড়ে। গ্রেপ্তার হন ক‌্যাসিনো নেপথ্যের প্রভাবশালী রাজনীতিকরা। অভিযানে পুরো ক্যাসিনো নেটওয়ার্ক লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বলে ঘোষণা দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু করে র‌্যাব। যার নেতৃত্বে ছিলেন সংস্থাটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম।

তিনি বলেন, ‘ক্যাসিনো বিরোধী ২৪টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। প্রথম দিনই দুই শতাধিক জুয়াড়িকে মতিঝিলের একটি ক্লাব থেকে আটক করে সাজা দেওয়া হয়। এরপর আমরা একাধিক অভিযান পরিচালনা করি। এর নেপথ্যের গডফাদাররাও গ্রেপ্তার হয়েছে। এখনো নজরদারি অব্যাহত আছে।’

রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘ক্যাসিনো নেটওয়ার্ক লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছি। অবৈধ জুয়া যেনো আর কেউ পরিচালনা করতে না পারে, সেজন্য আমরা এখনো নজরদারি অব‌্যাহত রেখেছি। কাউকে এ খেলা আর খেলতে দেওয়া হবে না।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য আছে, ১৮ সেপ্টেম্বর ইয়াংমেন্স ফকিরাপুল, ওয়ান্ডারার্স, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং গোল্ডেন ঢাকা ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোর সন্ধান পায় র‌্যাব। মাদকসহ উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। এদিন রাতেই ইয়াং মেনস ক্লাবের নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

২০ সেপ্টেম্বর কলাবাগান ক্রীড়াচক্র থেকেও মাদক ও ক্যাসিনো সামগ্রীসহ গ্রেপ্তার করা হয় ক্লাবটির সভাপতি ও কৃষকলীগ নেতা সফিকুল ইসলাম ফিরোজকে।

২২ সেপ্টেম্বর মতিঝিলের আরো চারটি ক্লাব আরামবাগ, দিলকুশা, ভিক্টোরিয়া ও মোহামেডান ক্লাবে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ক্যাসিনো সামগ্রী ও মাদক জব্দ করে পুলিশ।

জানা যায়, ঢাকার ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা শুরু হয় নেপালি নাগরিক দীনেশ মানালি ও রাজকুমারের হাত ধরে। চাহিদা অনুযায়ী ঢাকায় বিভিন্ন ক্লাবে নেপালি নাগরিক যোগান দিতেন দীনেশ ও রাজকুমার। তবে ব্যবসা নির্বিঘ্নে করতেই তারা এদেশের প্রভাবশালী রাজনীতীকদের ছত্রছায়ায় চলে যায়। এক সময় সেসব প্রভাবশালীরা পুরো ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেয়।

একে একে সদ্য যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট, ঠিকাদার জিকে শামিম, অন লাইন ক্যাসিনো সম্রাট সেলিমসহ বেশ কয়কজনের নাম বেরিয়ে আসে।

এছাড়া কয়েকজন কাউন্সিলর, বিসিবির একজন পরিচালক, ক্যাসিনো ক্যাশিয়ার আরমান হোসেনসহ প্রায় ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। অনেকেই আত্মগাপনে আছে। ক‌্যাসিনো খেলা হতো যেসব ক্লাবে সেগুলো সিলগালা করে দেওয়া হয়। ধারাবাহিক অভিযানে উদ্ধার হয় কোটি কোটি টাকা। এছাড়া ক্ষমতাসীন অনেক হেভিওয়েট নেতারও নাম বেরিয়ে আসে সেসময়।

অভিযানের শুরুতে ক্যাসিনো কী, কীভাবে এটি খেলে তা নিয়ে সব শ্রেণির মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। অনেকেই আবার মতিঝিলের মতো জায়গায় এমন জুয়ার আসরে হতবাক হয়ে পড়েন। ক্যাসিনো খেলে অনেকেই পথের ভিখারিও হয়েছেন।

এক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন ক্যাসিনোতে শতাধিক নেপালি কাজ করতেন। তাদের কেউ কেউ প্রতিদিন মোট লাভের ২০ শতাংশ পেতেন। আবার অনেকে উচ্চ বেতনে চাকরি করতেন। নেপালিরা মূলত ক্যাসিনো ম্যানেজমেন্টের কাজ করতেন। তবে ঘটনার পর তারা পালিয়ে গেছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য আছে।


ঢাকা/মাকসুদ/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়